দূরাগত শিক্ষার উপযোগিতা বা সুবিধাগুলি উল্লেখ করো | এই শিক্ষার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি কী?

দূরাগত শিক্ষার উপযোগিতা বা সুবিধাগুলি উল্লেখ করো। এই শিক্ষার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি কী? 5 + 3 

উত্তর : 

দূরাগত শিক্ষার উপযোগিতা বা সুবিধা :

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বেশ কতকগুলি ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতার কারণে পরিপূরক শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে দূরশিক্ষার কার্যক্রম পরিচালিত হতে শুরু করে। এই শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসকল সুবিধা বা উপযোগিতা লক্ষ করা যায়, তা নীচে উল্লেখ করা হল :

[1] সকলের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা : যে-কোনো বয়সের আগ্রহী শিক্ষার্থী এই শিক্ষা গ্রহণের জন্য আসতে পারে। এই জন্য পূর্বের কোনো যোগ্যতার দরকার হয় না। 

[2] স্বল্প ব্যয় : এই শিক্ষায় যেহেতু শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন শ্রেণিতে উপস্থিত থাকতে হয় না, এবং বিদ্যালয়ের আনুষঙ্গিক উপকরণের প্রয়োজন হয় না, তাই এই শিক্ষায় খুব অল্প পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়।

[3] নমনীয় পদ্ধতি অনুসৃত হয় : দূরাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে তেমন কোনো নিয়মনীতির বাড়াবাড়ি থাকে না। প্রথাগত শিক্ষার তুলনায় এই শিক্ষার পাঠক্রমও সহজ-সরল হয়। এই শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠক্রমের বিষয়গুলিকে ছোটো ছোটো মডিউলে ভাগ করে ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরার ব্যবস্থা করা হয়। তাই ছাত্রছাত্রীরা খুব সহজেই এগুলি বুঝতে পারে।

[4] অবসরের সদ্ব্যবহারের সুযােগ : এই শিক্ষায় প্রথাগত শিক্ষার মতাে দৈনিক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে হয় না। বিভিন্ন কাজের ফাঁকে অবসরকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা এই পাঠ গ্রহণ করতে পারে। 

[5] মেধার বিকাশে সহায়তা : নানা কারণে বা পরিস্থিতির চাপে যেসকল ছাত্রছাত্রী মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সুযােগ থেকে বঞ্চিত হয়, দূরাগত শিক্ষাব্যবস্থা তাদের মেধার বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

[6] পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে আত্ননির্ভরতা লাভের সুযোগ : দুরাগত শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের ইচ্ছায় বা তাগিদে শিক্ষাগ্রহণে অগ্রসর হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রাত্যহিক সাহচর্য ছাড়াই স্বশিখনের মাধ্যমে বিষয়বস্তু অধ্যয়নের দ্বারা বােঝার চেষ্টা করে। ফলে এই শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার সুযােগ লাভ করে। 

[7] ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য লাভের সুযােগ : দুরাগত শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা ব্যক্তিগত সুখস্বাচ্ছন্দ্য বা বিশ্রাম উপভােগ করে পঠনপাঠন চালিয়ে যাওয়ার সুযােগ লাভ করে। কারণ এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় মেনে শিক্ষালয়ে উপস্থিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে না। 

[8] শিক্ষাক্রমে প্রবেশের ক্ষেত্রে নমনীয়তা : দূরাগত শিক্ষায় কোনাে কোর্সে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে না। ফলে যে-কোনাে মানের শিক্ষার্থী ওই শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। একই শিক্ষাবর্ষে যত খুশি শিক্ষার্থী ভরতি হতেও পারে। ফলে অগণিত শিক্ষার্থীর শিক্ষার সুযােগ সৃষ্টি হয়।

দূরাগত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি : 

দূরাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে বহু উপযােগিতা বা সুবিধা থাকলেও এই শিক্ষা একেবারেই সীমাবদ্ধতাহীন বা ত্রুটিমুক্ত নয়। এই শিক্ষার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিগুলি নীচে উল্লেখ করা হল : 

[1] একমুখী শিক্ষা : দূরাগত শিক্ষার বিষয়বস্তু বা স্টাডি মেটিরিয়াল শিক্ষার্থীর কাছে ডাকযােগে পাঠানাে হয়। ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকার মৌখিক আলােচনা, ব্যাখ্যা বা শিক্ষার্থীদের ত্রুটি সংশােধনের ক্ষেত্রটি এখানে পুরােপুরি অবহেলিত হয়। তাই এই শিক্ষা একমুখী। 

[2] সামাজিকতার বিকাশে অক্ষম : দূরাগত শিক্ষায় যেহেতু শ্রেণিশিখনের ব্যবস্থা থাকে না বা আংশিক সময়ে শ্রেণিশিখনের ব্যবস্থা থাকলেও তা বাধ্যতামূলক নয়, তাই শিক্ষার্থীরা সবাই সেখানে উপস্থিত হয় না। তাদের মধ্যে ভাববিনিময়ও ঘটে না। কেবল পরীক্ষার দিন উপস্থিত হয়ে, ডিগ্রি অর্জন করাই উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিকতার বিকাশ ঘটে না। 

[3] দূরাগত শিক্ষার মান বিষয়ে জিজ্ঞাসা : আইনগতভাবে দূরাগত শিক্ষার গ্রহণযােগ্যতা থাকলেও জনমানসে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ন্যায় দূরাগত শিক্ষার গ্রহণযােগ্যতা এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এটিও দূরাগত শিক্ষার একটি সীমাবদ্ধতা। 

[4] অন্যান্য সীমাবদ্ধতা : দূরাগত শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগার এবং গবেষণাগারের সুবিধা পায় না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা দূরাগত শিক্ষায় অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিষয়ভিত্তিক কোনাে তথ্য ছাত্রছাত্রীকে জানাতে পারেন না। ব্যক্তিগত সংযােগসাধনমূলক কার্যাবলিও সঠিকভাবে সংগঠিত করা যায় না। 

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment