প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার প্রকারভেদ গুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার প্রকারভেদ গুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে। 

উত্তর : 

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার প্রকারভেদ : 

প্রথাবহির্ভুত শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকগুলি বিভাগ লক্ষ করা যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল : 

[1] দূরাগত শিক্ষা : এটি একটি স্বয়ং-শিখন পদ্ধতি। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের মুলত, আত্মপ্রচেষ্টা এবং প্রেষণার ওপর নির্ভর করে পড়াশােনা করতে হয়। এই পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু ছাপা অবস্থায় সরবরাহ করা হয়। অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী এই শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু (study material) প্রস্তুত করেন। এগুলি এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, শিক্ষার্থীরা নিজে নিজে পড়েই বিষয়গুলি শিখতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় বেতার বা দূরদর্শন মারফতও আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া এই পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ের জন্য শ্রেণিশিক্ষক (কনট্যাক্ট প্রোগ্রাম)-এ ব্যবস্থাও করা হয়। বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ব্যাবহারিক জ্ঞান অর্জনের জন্য ওয়ার্কশপ-এর ব্যবস্থা থাকে। বিভিন্ন বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় দূরাগত শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে।

[2] মুক্ত শিক্ষা : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার আর-একটি প্রকারভেদ হল মুক্ত শিক্ষা। এটি এমন একটি শিক্ষা যেখানে নিয়মনীতির গঠন তুলনামূলকভাবে অনেকটা আলাদা। যেসকল শিক্ষার্থী সঠিক বয়সে কোনো অসুবিধার কারণে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাদের জন্য এই জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। মুক্ত শিক্ষা বর্তমান শিক্ষাক্ষেত্রে একটি নবতম সংযোজন। উন্মুক্ততাই এই শিক্ষার মূলকথা। তা যে-কোনো শিক্ষাক্রমে ভরতির ক্ষেত্রে হোক, পাঠক্রম নির্বাচনের ক্ষেত্রে হোক, শিক্ষণপদ্ধতির ক্ষেত্রে হোক বা শিক্ষা কালের ক্ষেত্রেই হোক-না-কেন। এই শিক্ষা মুক্ত বিদ্যালয় এবং মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে স্কুলছুট এবং নিরক্ষর ছেলেমেয়েদের পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করা হয়। অন্যদিকে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে কর্মরত, বয়স্ক এবং অন্যান্য আগ্রহীশিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এই ব্যবস্থায় স্বল্প ব্যয়ে সাধারণ মেধার ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষালাভের সুযোগ পায়।

[3] নৈশ বিদ্যালয় : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার আর-একটি প্রকারভেদ হল নৈশ বিদ্যালয়। নিরক্ষর বা অল্প শিক্ষিত কৃষক, শ্রমিক বা অন্যান্য পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা দিনের বেলা বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারে না। তাদের জন্য সন্ধেবেলা শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়। এর জন্য বিভিন্ন স্থানে নৈশ বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। আমাদের রাজ্যে বর্তমানে প্রায় দু-হাজারের বেশি নৈশ বিদ্যালয় রয়েছে।

[4] বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র : নৈশ বিদ্যালয় ছাড়া আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলি বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন—সাক্ষরতা সংস্থা, যুব সমিতি, মহিলা সমিতি, জাতীয় সমাজসেবামূলক প্রকল্প ইত্যাদি।

[5] রাষ্ট্রীয় সংস্থা : বিভিন্ন প্রকার রাষ্ট্রীয় সংস্থাও প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। ওই সংস্থাগুলি নিজেদের দফতরের কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য নানা প্রকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। এই জাতীয় সংস্থাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—সরকারি শিক্ষা বিভাগ, সমবায় সমিতি, সমষ্টি উন্নয়ন দফতর, স্বাস্থ্য দফতর ইত্যাদি।

[6] ধারাবাহিক শিক্ষাকেন্দ্র : এই জাতীয় প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার কেন্দ্রগুলি বিভিন্ন ধরনের অবকাশকালীন শিক্ষা, সান্ধ্যকালীন কোর্স প্রভৃতির আয়ােজন করে।

[7] ইকো ক্লাব : জনসাধারণের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বুদ্ধির লক্ষ্যে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন অঞ্চলে ইকো ক্লাব গড়ে তােলা হয়েছে। 

[8] ধর্মীয় সংস্থা : বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment