দুরাগত শিক্ষা বলতে কী বােঝ | এই শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।

দুরাগত শিক্ষা বলতে কী বােঝ? এই শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে। 2- 6 

উত্তর : 

দূরাগত শিক্ষা : 

যে শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না-গিয়ে, শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযােগসাধন ছাড়াই ডাকযােগে বা অন্য কোনাে উপায়ে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু (স্টাডি মেটিরিয়াল) পঠনপাঠনের দ্বারা শিক্ষালাভ করে, তাকে দূরাগত শিক্ষা বলা হয়।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডেভিড বার্টস-এর মতে, যে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছানুসারে, বিদ্যালয়ে উপস্থিত না-হয়েও, গৃহে বসে পঠনপাঠনের দ্বারা নিজেদের শিক্ষিত করে তােলে এবং যে শিক্ষাতে শিক্ষার্থীদের নিজস্বতা ও নমনীয়তার সুযােগ রয়েছে, তাকে দূরাগত শিক্ষা বলে। 

দূরাগত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য : 

দূরাগত শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি হল :

[1] ব্যক্তিগত শিখন : দূরাগত শিক্ষায় শিখন ব্যক্তিগতভাবে সম্পাদিত হয়। 

[2] আংশিক সময়ের শিক্ষা : এটি প্রকৃতপক্ষে আংশিক সময়ের শিক্ষা। এতে শিখনের সময় নির্দিষ্ট থাকে না। ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিজেদের সময় এবং সুযােগমতাে শিক্ষা গ্রহণ করে। 

[3] অল্প ব্যায়ে শিক্ষা : দুরাগত শিক্ষায় তুলনামূলকভাবে অল্প ব্যয় হয়। 

[4] প্রত্যন্ত এবং দূরাগত শিক্ষার্থীদের সুযােগ : এই শিক্ষার মাধ্যমে প্রত্যন্ত এবং দুরাগত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের সুযােগ দেওয়া হয়। 

[5] স্বল্প সময়ের মৌখিক নির্দেশনা : দুরাগত শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অল্প সময়ের জন্য মৌখিক নির্দেশনা দানের ব্যবস্থা করা হয়। এই শিক্ষায় শিক্ষক অতি অল্পসময়ের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষাদানের সুযােগ লাভ করেন। 

[6] শিক্ষার্থীর চাহিদা ও দাবিপরণে সক্ষম : দূরশিক্ষার পাঠক্রম, পঠনপাঠন এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি খুবই নমনীয় প্রকৃতির হয়। সব ধরনের ছাত্রছাত্রীরা এর মাধ্যমে তাদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাগ্রহণের সুযােগ লাভ করে। 

[7] ফিড ব্যাকের ঘাটতি : এই শিক্ষার ক্ষেত্রে ফিড ব্যাকের ঘাটতি লক্ষ করা যায়। কারণ শিক্ষার্থীরা পঠনপাঠনকালে কতখানি শিখতে পারছে, সে-বিষয়ে আলাদাভাবে জানার সুযোগ থাকে না। একেবারেই মূল্যায়ন করা হয়। 

[8] প্রথাগত শিক্ষার সমতুল্য ডিগ্রি প্রদানের ব্যবস্থা : যেসকল ছাত্রছাত্রী প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তারা এই শিক্ষার মাধ্যমে প্রথাগত শিক্ষার সমতুল্য ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পায়।

[9] কর্মরতদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা : যেসকল ব্যক্তি আর্থিক কারণে অল্প বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে সেই সকল শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা থাকলে এই শিক্ষার মাধ্যমে পঠনপাঠনের দ্বারা ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ লাভ করে।

[10] ব্যক্তি সামর্থ্যের গুরুত্ব : দূরশিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা তাদের পছন্দ ও সক্ষমতা অনুসারে আপন গতিতে শিক্ষালাভ করতে পারে। প্রথাগত শিক্ষার মতো চাপ ও সময়ের বাধ্যবাধকতা এতে নেই।

[11] অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে সুযোগদান : দূরশিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো কোর্সে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে জানা। তাই অগণিত শিক্ষার্থী একসঙ্গে এই শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।

[12] শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক ও জীবনব্যাপী শিক্ষা : এই শিক্ষার পাঠক্রম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবনকেন্দ্রিক এবং শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। তাই এতে শিক্ষার্থীরা আত্মনির্ভরশীল এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। জীবনের যে-কোনো পর্যায়ে এই শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment