একটি বৃষ্টিমুখর দিনের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি বৃষ্টিমুখর দিনের অভিজ্ঞতা

ভূমিকা :

“বর্ষণ মুখর দিনে— 
কত স্মৃতি জাগে মনে, 
কত কথা গান হয়—
আনন্দ শিহরণে।” 

ঋতুরঙ্গময়ী এই বঙ্গভূমি। এই সােনার বাংলায় প্রকৃতির রমণীয় আঙি নায় ষড়ঋতুর লীলাচাঞ্চল্য। গ্রীষ্মের দাবদাহকে শান্ত করতে আসে বর্ষা। বর্ষা বয়ে আনে নবজীবনের আশা।

ঋতুর নাম বর্ষা : বাদল মেঘের মাদল বাজে এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘাের বরিষায়। না-বলা কথা উজাড় করে বলার একমাত্র এই ঋতু, যখন বাদল মেঘে বাদল বাজে। আজ ঘুম থেকে  উঠে দেখি দিগন্তব্যাপী আকাশ কালাে মেঘে ছেয়ে আছে, কোথাও আলাে নেই। অবিরাম অবিচ্ছিন্ন ধারায় তার অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে ধরিত্রী বক্ষে। বর্ষণ কখনও মুশলধারে, কখনও ঝিরঝিরে। ভাবুক মন সেই শব্দে খুঁজে পায় নদীর কুলু কুলু ধ্বনি, কখনও-বা পাতার মর্মরধ্বনি। আজ জলের স্বর আর বাতাসের স্বর মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। এমন পরিবেশে অন্যমনস্ক হওয়াই স্বাভাবিক।

বৃষ্টি আর বৃষ্টি : বর্ষার এই দিনটিতে গাছপালায়, মাঠে-ঘাটে সর্বত্রই প্রাণের হিল্লোল বয়ে চলেছে। তাল আর নারকেল গাছ সব গাছের মাথা ছাড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাওয়ায় দুলছে। খামখেয়ালি বাতাস কিছুক্ষণের জন্য লতাপাতাকে নাচিয়ে দিয়ে বৃষ্টিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির সঙ্গে গাছগাছালির লুকোচুরি খেলা শুধু চোখভরে দেখা নয়, মনভরে উপভােগ করাও যাচ্ছে। এই মুহূর্তে মন চিন্তাশূন্য, আছে শুধু এক অব্যক্ত অনুভূতি। 

বৃষ্টিকে নিয়ে কবিতা ও গান : মনে পড়ে কবি বুদ্ধদেব বসুর কবিতার ক-টি লাইন—“সকাল থেকেই বৃষ্টির পালা শুরু/আকাশ হারালাে আঁধার জড়ানাে দিন। আজকেই যেন শ্রাবণ করেছে পণ,/শােধ করে দেবে বৈশাখী সব ঋণ।” হর্ষ-বিষাদে মেশানাে অনামিক অনুভূতির জমির ওপর দাঁড়িয়ে অনেক ছােটো-বড়াে ঘটনার কথা মনের আকাশে বিদ্যুতের চমক নিয়ে আবির্ভূত হয়েই আবার মিলিয়ে যায়, রেখে যায় স্মৃতির রেশ।

বর্ষণমুখর দিনের ভাব : বর্ষণমুখর দিনে বােঝা যায় মানুষ। তার ভাব ভাষায় কত কম ব্যক্ত করতে পারে, আর কত বেশি অব্যক্ত থেকে যায়। সাধারণ মানুষ ভাষার অভাবে ভাবকে ব্যক্ত করতে পারে না। কিন্তু কবি-সাহিত্যিকরাও সমস্ত গভীর ভাবকে ভাষারূপ দিতে পারেন বলে মনে হয় না। এমন বর্ষণ দিনের গভীরে প্রকৃতি যেন সেই অব্যক্তকে প্রকাশ করে চলে নিরন্তর বারি বর্ষণে। তাইতাে মন এত উদাস হয়ে পড়ে।

বর্ষার কাব্য ও কবিতা : বৈষ্ণব কবি থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্র-পরবর্তী প্রকৃতিপ্রেমিক কবিরা বর্ষার যে-সমস্ত ছবি শব্দের রঙে এঁকেছেন, সেগুলি একে একে আমার মনের পর্দায় বর্ণের বিচিত্রতা নিয়ে ফুটে উঠছে। আমি যেন স্মৃতিলােকে প্রকৃতির সেই রূপ-রস- শব্দ-গন্ধের স্পর্শ পাচ্ছি। বিদ্যাপতি আর গােবিন্দদাসের অভিসারের পদে বর্ষার যে বর্ণনা রয়েছে তাকে বর্ষা প্রকৃতির ফ্রেমে বাঁধানাে ছবি বলে মনে হয়।

উপসংহার : বর্ষার দিনের মধ্যে কেবল মিলন এবং সুখের অন্বেষণ বৃথা। বর্ষার বারিধারা অনেক সময় অঘটনও ঘটায়। তুমুল বৃষ্টিপাত নদীগুলি তাদের দু-কূল ছাপায়, পথঘাট ভাসে। দেখা দেয় বন্যা। এই বন্যাতে অনেকেরই বাড়িঘর হয় প্লাবিত। তখন বানভাসি মানুষদের নিয়ে দুঃখের অবধি থাকে না। এক বর্ষণমুখর দিনে ওইরকম বিষন্ন বন্যার্তদের দুঃসহ ঘটনা আমি দেখেছিলাম। সেই স্মৃতি ভেসে উঠলে মন ভারী হয়ে আসে।

আরো পড়ুন

একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি নির্জন দুপুর – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তােমার প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আমার চোখে আমার দেশ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment