একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

ভূমিকা : মানুষ চিরকাল সুদূর পথের যাত্রী। তার রক্তে বাজে রবীন্দ্রনাথের গান “আমি চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসী।” গৃহের সীমা মানুষকে বদ্ধ করে রাখতে পারে না। দূর আকাশ, দূরদিগন্ত, দূর ভুবন হাতছানি দিয়ে ডাকে পিঞ্জরের পাখিকে। কিন্তু পথ ডাকলেও অনেক সময় পথের বন্ধু জোটে না। তবু মন-পাখি বেরিয়ে পড়ে নিরুদ্দেশে। হরিদ্বার যাত্রা। গত অক্টোবরে বাবার এল টি সি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিড়ল। আমরা সপরিবারে ভ্রমণে বের হলাম। আমরা হরিদ্বার-দেরাদুন-মুসৌরি যাবার প্রােগ্রাম করলাম। পোঁটলাপুঁটলি বেঁধে এবং অনেক স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমরা পৌছােলাম হরিদ্বারে। দেখেছি মকাই এবং গেঁহুর খেত। দেখেছি খােলা মাঠে ময়ুর চরে

হরিদ্বার যাত্রা: গত অক্টোবরে বাবার এল টি সি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিড়ল। আমরা সপরিবারে ভ্রমণে বের হলাম। আমরা হরিদ্বার-দেরাদুন-মুসৌরি যাবার প্রােগ্রাম করলাম। পোঁটলাপুঁটলি বেঁধে এবং অনেক স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছেছিলাম হরিদ্বারে। দেখেছি মকাই এবং গেঁহুর খেত। দেখেছি খােলা মাঠে ময়ুর চরে বেড়াতে। আর মাঝেমাঝেই দেখেছি দুরের ঝাপসা মায়াময় নীল পাহাড়। হরিদ্বারে পৌঁছােনাের পর আসল পাহাড়ের দেখা পেলাম এবং গায়ে স্পর্শ করে গেল একঝলক হিমশীতল হাওয়া।

ধর্মশালা : নতুন নতুন অভিজ্ঞতা আমরা প্রথমে এসে উঠলাম ‘ভােলাগিরি ধর্মশালা’-য়। গঙ্গার পাড়ে ধর্মশালা। গঙ্গা এখানে রীতিমতাে স্রোতস্বিনী, বেগবতী। এতখানি স্রোত দেখা আমাদের অভ্যাস নেই। উপরের একটি ঘরে আমাদের কোনােরকমে ঠাই হল।

হর-কা-পৌরি : পরের দিন সকাল থেকেই আরম্ভ হয়ে গেল আমাদের হরিদ্বারে বেড়ানাে। প্রথমেই গেলাম ‘হর-কা-পৌরি’-তে। এটি ভারি মনােরম জায়গা। হরিদ্বারের সব থেকে পবিত্র স্থান। এখানে রয়েছে। ‘গঙ্গা মাঈ’ মন্দির। ওই মন্দিরের সামনে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে খরস্রোতা গঙ্গা। ভাের থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবিরাম ডুব দিয়ে স্নান করে চলেছেন দেশ-দেশান্তরের পুণ্যার্থীরা। 

আরও অনেক দ্রষ্টব্য স্থান : রিদ্বারে মনসা পাহাড় আর-এক। দ্রষ্টব্য স্থান। এই পাহাড় বেশ খাড়াই। আগে পায়ে হেঁটে এই পাহাড়ে উঠতে হত, এখনও সে ব্যবস্থা আছে। তবে আমরা উঠলাম ‘রােপ-ওয়ে’ দিয়ে। গঙ্গার বিপরীতে রয়েছে ‘চণ্ডী পাহাড়। সেখানেও আমরা গিয়েছিলাম। আমরা গিয়েছিলাম ‘নীলধারা’ দেখতে। ভীমকুণ্ড, ভারতমাতার মন্দির এবং শেষে বেশ কয়েকটি আশ্ৰম আমরা দেখেছি।

পৌরাণিক স্থান : আমরা হরিদ্বার থেকে অনতিদূরে কখলেও গিয়েছিলাম। দেখেছি রাজা দক্ষের প্রাসাদ। দক্ষকন্যা সতী যেখানে দেহত্যাগ করেছিলেন, সেই জায়গাটি আজও আছে। আমরা গিয়েছি হৃষীকেশ, দেখেছি লছমনঝুলা।

দেরাদুন-মুসৌরি : একদিন আমরা স্পেশাল বাসে করে গেলাম দেরাদুন-মুসৌরির পথে। পাকদণ্ডী দিয়ে আমরা পৌঁছােলাম ছােট্ট পাহাড়ি শহর মুসৌরিতে। শহর ছােটো হােক, কিন্তু আভিজাত্য আছে। সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি, তার কোলে সবুজের মেলা বসেছে। রাস্তার দুপাশে দেওদার পাইন এবং নাম-না-জানা কত না গাছগাছালি, মধ্যে মধ্যে পাহাড়ি ঝরনা একমনে গান গেয়ে ঝরে চলেছে। এখানে না-এলে নিজের ভিতরকার। আনন্দময় মানুষটাকে চেনা যায় না।

ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও আনন্দ : হরিদ্বারকে কেন্দ্র করে আমরা বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এই পাহাড়ি অঞ্চল, অজানা পরিবেশ এবং নানান রকমের ফুল ও পাখি আমাদের মুগ্ধ করল। আমাদের দেশ কত বড়াে, কত এর বৈচিত্র্য এবং নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি কত সুন্দর, তা এখানে না-এলে আমরা বুঝতে পারতাম না। ভ্রমণ প্রতিদিনের তুচ্ছতা, শুধু দিনযাপনের, শুধু প্রাণধারণের গ্লানি থেকে আমাদের নিষ্কৃতি দেয়। হরিদ্বার ভ্রমণের স্মৃতি আমার মনের মণিকোঠায় চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে আছে এবং থাকবেও।

আরো পড়ুন

একটি ঝড়ের রাত – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি বৃষ্টিমুখর দিনের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি নির্জন দুপুর – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তােমার প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment