শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব আলোচনা করো

উত্তরঃ-

(১) দৈহিক ও মানসিক প্রক্রিয়া: শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশের দ্বারা তার পরিণমনের প্রকাশ ঘটে। এর ফলে শিশুর ভাষার বিকাশ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশ ঘটে। শিশু পাঠগ্রহণে সক্ষম হয়।

(২) শিখনের গতি ও সীমা নির্ধারণ: শিখনের গতি ও সীমা নির্ধারণে পরিণমনের ভূমিকা লক্ষ করা যায়। নির্দিষ্ট পরিণমনের পর শিশুর শিখন শুরু হয় এবং তা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলতে থাকে। পরিণমনই ঠিক করে দেয় কোন সময়ে কোন ধরনের শিখন সার্থক ও সফল হবে। 

(৩) ভাষার বিকাশ: শিক্ষার্থীর ভাষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পরিণমন। উপযুক্ত পরিণমন ছাড়া কখনওই শিক্ষার্থীর ভাষার বিকাশ সম্ভব নয়।

(৪) জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়ের সমন্বয়: শিক্ষার্থীর সার্থক বিকাশের উপর নির্ভর করে জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়ের সমন্বয় সাধন, যা শিক্ষার্থীকে যে-কোন বিষয় শিখতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

(৫) জটিল ও উন্নত আচরণ সম্পাদন: উন্নত ও জটিল আচরণগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে শিক্ষার্থী যে-কোন জটিল সমস্যার সমাধান সহজে করতে পারে।

(৬) জীবন বিকাশ: শিক্ষার্থীদের জীবন বিকাশে শিখনের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। আর শিখনকে ফলপ্রসূ করতে পরিণমনের বিকাশ আবশ্যক।

(৭) পাঠ পরিকল্পনা: শিক্ষার্থীর জীবন বিকাশে যেহেতু পরিণমন গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু পরিণমনের উপর নির্ভর করে শিশুর পাঠক্রম নির্বাচন করা হয়।

(৮) শিক্ষা পরিকল্পনা: পরিণমন যদি সঠিক ভাবে না হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণে সমস্যা দেখা যেতে পারে। তাই পরিণমন শিক্ষা পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(৯) পরিণমন ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা: শৈশব, বয়ঃসন্ধি এসব পর্যায়ে সঠিক পাঠক্রম রচনার জন্য পরিণমন ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন।

(১০) শিখন ত্বরান্বিতকরণ: পরিণমন শিখনকে ত্বরান্বিত করে। শিক্ষার্থীর উপযুক্ত পরিণমন হলে সে যে-কোন বিষয় অতি দ্রুত আয়ত্ত করতে পারে।

(১১) আত্মপ্রত্যয় বৃদ্ধি: উপযুক্ত পরিণমন যথাযথ পাঠগ্রহণের সহায়ক। পরিণমনের পর্যায়ের প্রতি লক্ষ রেখে শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করলে সেই শিক্ষা অধিক ফলপ্রসূ হয় এবং আত্মবিশ্বাস (Self Confidence) বৃদ্ধি পায়।

(১২) শিখন প্রচেষ্টার কার্যকারিতা বৃদ্ধি: ব্যক্তির শিখন প্রচেষ্টাকে অধিক কার্যকরী করতে পরিণমন প্রক্রিয়ার বিশেষ প্রয়োজন। পরিণমন জনিত ফল পরবর্তী শিখনে শিক্ষার্থীকে আগ্রহী করে।

(১৩) অল্প শ্রমে অধিক সুফল: পরিণমন শিক্ষা প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। শিক্ষার্থীর যথোপযুক্ত পরিণমন তাকে যে-কোন কর্মপদ্ধতি আয়ত্ত করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট বয়সে নির্ধারিত বিষয়ে শিক্ষারম্ভ করলে কম শ্রমে অধিক সুফল পাওয়া যায়।

আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, পরিণমন শিশুর শিক্ষার সূচনা থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পরিণমনের বিভিন্ন স্তরে বিচারবিবেচনা করে শিক্ষার আয়োজন করলে সেই শিক্ষা শিশু অতি সহজে গ্রহণ করতে পারবে এবং শিক্ষা সার্থক হবে।

Read Also

বাস্তববাদ বা বস্তুবাদ | Realism in Bengali

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment