এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ প্রথম অধ্যায় – কারক ও অকারক সম্পর্ক থেকে অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব যেখানে প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ প্রথম অধ্যায় – কারক ও অকারক সম্পর্ক থেকে অন্যান্য সমস্ত প্রশ্নোত্তরের জন্য নীচে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করো।
মাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ প্রথম অধ্যায় – কারক ও অকারক সম্পর্ক | অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর | প্রশ্নমান ১
কারক কাকে বলে?
উত্তর : বাক্যের বিশেষ্য বা বিশেষ্যস্থানীয় নামপদের সঙ্গে বাক্যস্থিত সমাপিকা ক্রিয়াপদের যে-সম্বন্ধ, তাকেই কারক বলে।
কারক-চিহ্ন বা বিভক্তি-চিহ্ন বলতে কী বােঝ?
উত্তর : যে-সমস্ত চিহ্ন (ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ বা সার্থক শব্দ) বাক্যের ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যান্তৰ্গত নামপদের এবং নামপদগুলির পরস্পরের মধ্যে সম্বন্ধকে সুনিশ্চিত করে, তাদেরকেই কারক-চিহ্ন বা বিভক্তি-চিহ্ন বলা হয়।
বাংলা ভাষায় কারক-চিহ্ন হিসেবে কাদের ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : বাংলা ভাষায় মৌলিক বিভক্তি-চিহ্ন, অনুসর্গ এবং নিদের্শককে কারক-চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
মৌলিক বিভক্তি-চিহ্ন বলতে কী বােঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : যে-সমস্ত অর্থহীন ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ শব্দের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে তারা পদে রূপান্তরিত হয়, তাদেরকে মৌলিক বিভক্তি-চিহ্ন বলে। যেমন : ‘এ’, ‘তে’, ‘কে’, ‘রে’, ‘এর’, ‘র’, ‘য়’ প্রভৃতি।
অনুসর্গ বলতে কী বােঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : যে-সমস্ত অব্যয় বা সার্থক শব্দ বিশেষ্য কিংবা বিশেষ্যস্থানীয় শব্দের সঙ্গে কারক-চিহ্ন হিসেবে যুক্ত হয়ে সেই শব্দগুলিকে পদে রূপান্তরিত করে, তাদের বলা হয় অনুসর্গ। যেমন : জন্য, থেকে, দিয়ে প্রভৃতি। আলমারি থেকে আনো।
নির্দেশক বলতে কী বােঝ?
উত্তর : বাক্যের পদাশ্রিত যেসব চিহ্ন একবচন বা বহুবচনকে স্পষ্ট করে তােলে তারাই হল নির্দেশক। একবচনকে বােঝাবার প্রয়ােজনে সংখ্যাবাচক টি, টা, খানা, খানি এবং বহুবচন বােঝাতে গণ, বৃন্দ, সব, সমূহ প্রভৃতি নির্দেশকও পদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
নির্দেশক প্রয়ােগে একটি বাক্য লেখাে।
উত্তর : নির্দেশক-এর প্রয়ােগে একটি বাক্য হল—ভূতের (ভূত + ‘এর’ বিভক্তি) মতন (মতন’ অনুসর্গ) চেহারাটি (চেহারা + ‘টি’ নির্দেশক) নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?
শব্দবিভক্তি বলতে কী বােঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যােগ করে শব্দকে নামপদে রূপান্তরিত করা হয়, তাকে শব্দবিভক্তি বলে। যেমন : ‘কে’, ‘রে’ প্রভৃতি।
বিভক্তি কতপ্রকার ও কী কী?
উত্তর : প্রথাগতভাবে বিভক্তিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় — শব্দ বিভক্তি এবং ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি।
শব্দ বিভক্তির একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : শব্দ বিভক্তির একটি উদাহরণ হল- বনে থাকে বাঘ। বন + ‘এ’ (বিভক্তি) = বনে (পদ), বাঘ + অ (বিভক্তি) = বাঘ (পদ)।
ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি বলতে কী বােঝ?
উত্তর : যে-বিভক্তি ধাতু বা ক্রিয়ামূলের (ক্রিয়াপদের মূল অবিভাজ্য অংশ) পরে যুক্ত হয়ে ধাতুকে ক্রিয়াপদে পরিণত করে, তাকে ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি বলে। যেমন : ইয়াছি’, ‘এন’ প্রভৃতি। আমি বই পড়ি [পড়্ (ধাতু) + ই (বিভক্তি)]।
তির্যক বিভক্তি কাকে বলে?
অথবা, তির্যক বিভক্তি বলতে কী বােঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : যে-বিভক্তি একাধিক কারকে প্রযুক্ত হয় তাকে তির্যক বিভক্তি বলে। যেমন—‘এ’ বিভক্তিটি বিশেষত অধিকরণ কারকের বিভক্তি-চিহ্ন হলেও, যে-কোনাে কারকেই প্রযুক্ত হয়ে যে-কোনাে পদকেই তির্যকভাবে অন্বিত করায়, একে তির্যক বিভক্তি বলা হয়। কত ধানে কত চাল (অপাদান)। এ কলমে লেখা যায় না (কর্ম)। রাজা গেলেন শিকারে (নিমিত্ত) ইত্যাদি। তবে ‘কে’, ‘তে’ প্রভৃতি অধিকাংশ বাংলা বিভক্তিই এই শ্রেণির।
বিভক্তি ও অনুসর্গের একটি পার্থক্য লেখাে।
উত্তর : মৌলিক বিভক্তি-চিহ্নগুলি শব্দের সঙ্গে জুড়ে একাত্ম হয়ে যায়, ফলে এদের পৃথক কোনাে অস্তিত্ব থাকে না। কিন্তু অনুসর্গ পদের আগে বা পরে বসে বিভক্তির মতাে কাজ করলেও সম্পূর্ণ পৃথকভাবে অবস্থান করে।
বিভক্তি বা মৌলিক বিভক্তি-চিহ্নের সঙ্গে নির্দেশকের একটি পার্থক্য লেখাে।
উত্তর : মৌলিক বিভক্তি-চিহ্ন পদের শেষ অংশে থাকে। যেমন : বনে (বন + ‘এ’) যাবে l নিদেশক, পদের আগে বা পরে পদাশ্রিত অবস্থায় থাকে। যেমন : খান পাঁচেক বাড়ি। গ্রামখানি সুন্দর।
অনুসর্গ এবং নির্দেশকের একটি পার্থক্য লেখাে।
উত্তর : অনুসর্গ একবচন বহুবচনের বােধকে সম্পূর্ণ করে না। নির্দেশক বিশেষভাবে বচনের বােধকে সম্পূর্ণ করে।
নীচের বাক্যটির মধ্যে থেকে বিভিন্ন কারক-চিহ্নগুলিকে চিহ্নিত করে দেখাও।
উত্তর : চাঁদের আলােয় গ্রামখানি ভাসছে। চাঁদের (চাঁদ+ ‘এর’ বিভক্তি) আলােয় (আলাে + ‘য়’ বিভক্তি) গ্রামখানি (গ্রাম + ‘খানি’ নির্দেশক) ভাসছে।
নীচের বাক্যটির মধ্যে থেকে বিভিন্ন কারক-চিহ্নগুলিকে চিহ্নিত করে দেখাও।
উত্তর : বন্ধুগণ এখান থেকেই জঙ্গলের আরম্ভ। বন্ধুগণ (বন্ধু + ‘গণ’ নির্দেশক) এখান থেকেই (‘থেকে’ অনুসর্গ – ‘ই’ বিভক্তি) জঙ্গলের (জঙ্গল + ‘এর’ বিভক্তি) আরম্ভ।
কারক কতপ্রকার ও কী কী ?
উত্তর : বিশেষ্য বা বিশেষ্যস্থানীয় নামপদের সঙ্গে বাক্যস্থিত সমাপিকা কিয়াপদের সম্পর্কের বিচারে কর্তৃ (কর্তা), কর্ম, করণ, নিমিত্ত, অপাদান এবং অধিকরণ—কারক এই ছ-প্রকার।
কর্তৃ (কর্তা) কারক কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : যে-পদটিকে আশ্রয় করে বাক্যথিত ক্রিয়া প্রকাশিত হয়, তাকে কর্তৃ (কর্তা) কারক বলে। যেমন : ওরা কাজ করে।
প্রযােজক কর্তার একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : মা ছেলেকে পড়াচ্ছেন। এই বাক্যে কর্তা অর্থাৎ মা নিজে কাজটি না-করে। ছেলেকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নিচ্ছে। তাই এখানে ‘মা’ প্রযােজক কর্তা।
প্রযােজ্য কর্তা কাকে বলে?
উত্তর : অপরের প্রভাবে কেউ কোনাে কাজ করলে, তাকে বলা হয় প্রযােজ্য কর্তা। যেমন : আমরা রাঁধুনিকে দিয়ে রান্না করালাম।
সমধাতুজ কর্তা কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : অকর্মক ক্রিয়াটি যে-ধাতু থেকে নিষ্পন্ন, সেই ধাতু থেকে নিস্পন্ন পদ ক্রিয়ার কর্তা হলে, তাকে সমধাতুজ বা ধাত্বৰ্থক কর্তাও বলা হয়। যেমন : বাজনা বাজল।
উক্ত কর্তা কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : কর্তৃবাচ্যের কর্তায় শূন্য বিভক্তি হলে, তাকে উক্ত কর্তা বলে। যেমন : মেবারের আকাশ ক্রোধে গর্জন করছে।
ব্যতিহার কর্তা কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : কোনাে ক্রিয়ার দুই কর্তার পারস্পরিক প্রতিযােগিতা বা বিবাদ বােঝালে সেই ক্রিয়ার দুই কর্তাকে ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন : রাজায় রাজায় যুদ্ধ বেধেছে l
নিরপেক্ষ কর্তা কাকে বলে?
অথবা, নিরপেক্ষ কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর : কোনাে বাক্যে সমাপিকা এবং অসমাপিকা দু-ধরনের ক্রিয়ার বিভিন্ন কর্তা থাকলে, অসমাপিকা ক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক কর্তাটিকে নিরপেক্ষ কর্তা বলে। যেমন : দাঁত থাকতে মানুষ দাঁতের মর্যাদা বােঝে না।
উপবাক্যীয় কর্তার সংজ্ঞাসহ উদাহরণ দাও।
উত্তর : বাক্যস্থিত খণ্ডবাক্যকে উপবাক্য (clause) বলে। এক্ষেত্রে এই উপবাক্য যদি কর্তা হিসেবে ক্রিয়া নিষ্পন্ন করে, তখন তাকে উপবাক্যীয় কর্তা বলে। যেমন : তিনি এভাবে চলে যাবেন ভাবা যায়নি l
বহু ক্রিয়ার এক কর্তা’-র একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : মেয়েটি শুধু গাইছে আর নাচছে আর হাসছে আর খেলছে।
নিরপেক্ষ কর্তার উদাহরণ দাও।
উত্তর : গােপী ফিরে আসতে চিৎকার করে উঠল। এখানে ‘আসতে’ অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা গােপী — নিরপেক্ষ কর্তা।
কর্মকারক বলতে কী বােঝ? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : কর্তা যাকে আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পন্ন করে, সেই কর্মের সঙ্গে ক্রিয়ার অন্বয়কেই কর্মকারক বলে। যেমন : তােমার পতাকা যারে দাও।
দ্বিকর্মক বাক্যের গৌণ কর্মটি কেমন হয় ?
উত্তর : দ্বিকর্মক বাক্যের গৌণ কর্মটি প্রাণীবাচক এবং বিভক্তিযুক্ত হয়। যেমন : আমি তােমাকে বইটি দিলাম। এখানে ‘তােমাকে’ হল গৌণ কর্ম।
সমধাতুজ কর্ম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর : কর্ম ও ক্রিয়া একই ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হলে কর্মটিকে ধাত্বৰ্থক কর্ম বা সমধাতুজ কর্ম বলে। যেমন : প্রলয় নাচন নাচলে যখন, হে নটরাজ!
বাক্যাংশ কর্ম বলতে কী বােঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : কোনাে বাক্যাংশ যদি বাক্যের কর্ম হিসেবে কাজ করে, তবে তাকে বাক্যাংশ কর্ম বলে। যেমন : আমি ওকে রাস্তা দিয়ে যেতে দেখলাম।
অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী কর্মের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।
কর্মের বীপ্সা বলতে কী বােঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : কোনাে বাক্যে একই কর্ম পুনরাবৃত্ত হলে, তাকে কর্মের বীপ্সা বলা হয়। ‘বীঙ্গা’ বলতে পুনরাবৃত্তিকে বােঝায়। যেমন : যা যা বলেছি করেছ তাে।
করণ কারক বলতে কী বােঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : কর্তা যে-পদের সাহায্যে বা যা দিয়ে ক্রিয়া সম্পাদন করে, ক্রিয়াপদের সঙ্গে তার সম্পর্ককে করণ কারক বলে। যেমন : আমরা কোদালে মাটি কাটি।
লক্ষণাত্মক করণ বলতে কী বােঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : কোনাে লক্ষণ বা চিহ্ন বােঝাতে লক্ষণাত্মক বা উপলক্ষণে করণের ব্যবহার হয়। যেমন : জটায় চেনা যায় সন্ন্যাসী।
সমধাতুজ করণ বলতে কী বােঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : কোনাে বাক্যে ক্রিয়া বা ক্রিয়াজাত বিশেষণ পদটি যে-ধাতু থেকে নিষ্পন্ন, করণ কারকটিও যদি সেই একই ধাতু থেকে উৎপন্ন হয়, তখন তাকে সমধাতুজ করণ বলে। যেমন : কি বাঁধনে বেঁধেছ মােরে।
নিমিত্ত কারক বলতে কী বােঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : কোনাে বাক্যের ক্রিয়া যখন কোনাে বস্তু বা ব্যক্তির জন্য ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে, তখন তাকে নিমিত্ত কারক বলা হয়। যেমন : অন্ধজনে দেহ আলাে।
নিমিত্ত কারকে অনুসর্গ ব্যবহারের দৃষ্টান্ত দিয়ে একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : এখানে ছােটোদের জন্য ভালাে স্কুল নেই।
অপাদান কারক বলতে কী বােঝ ? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : বাক্যের মধ্যে যা থেকে কোনাে কিছুর পতন, স্বলন, নিঃসরণ, উৎপাদন, অপসারণ, গ্রহণ, ভীতি, বিচ্ছিন্ন বা বিশ্লিষ্ট হওয়াকে বােঝায়, ক্রিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের নাম অপাদান কারক। যেমন : দুধে দই হয়। তিলেতে তেল হয়।
স্থানবাচক অপাদানের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : ট্রেনটা হাওড়া ছাড়ল। —এই বাক্যে ট্রেনের হাওড়া থেকে পৃথক হওয়া বা ছেড়ে যাওয়া বােঝানাে হয়েছে। তাই এটি স্থানবাচক অপাদানের দৃষ্টান্ত।
কালবাচক অপাদান বলতে কী বোেঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : কোনাে বাক্যে সময় বা কাল বােঝাতে কালবাচক অপাদানের ব্যবহার হয়। যেমন : তিনি কখন থেকে অপেক্ষা করছেন।
‘আমার চেয়ে তােমার বয়স কম।’ এই বাক্যটি কী ধরনের অপাদান কারকের উদাহরণ?
উত্তর : ‘আমার চেয়ে তােমার বয়স কম। দুই ব্যক্তির বয়সের তারতম্য বােঝানাে হয়েছে বলে, এটি তারতম্যবাচক অপাদান কারকের দৃষ্টান্ত।
অধিকরণ কারক বলতে কী বােঝ? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : স্থান বা কাল কিংবা বিষয়কে আশ্রয় করে ক্রিয়াটি নিষ্পন্ন হলে, তা হল অধিকরণ পদ আর ক্রিয়ার সঙ্গে এই পদের সম্পর্ককে অধিকরণ কারক বলে। যেমন : জঙ্গলে বাঘ ডাকে।
অধিকরণ কারক কতপ্রকার ও কী কী?
উত্তর : অধিকরণ কারক তিনপ্রকার (১) স্থানাধিকরণ, (২) কালাধিকরণ এবং (৩) বিষয়াধিকরণ বা ভাবাধিকরণ।
একটি ব্যাপ্তিবাচক কালাধিকরণের উদাহরণ দাও।
উত্তর : শরৎকালে কাশফুল ফোটে। (ব্যাপ্তিবাচক কালাধিকরণের দৃষ্টান্ত)
একটি ক্ষণমূলক কালাধিকরণের উদাহরণ দাও।
উত্তর : দুপুর দুটোয় ট্রেন ছাড়বে। (ক্ষণমূলক কালাধিকরণের দৃষ্টান্ত)
বিষয়াধিকরণ বা ভাবাধিকরণের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : গােলমালে হারিয়ে ফেললাম।
ছাদ থেকে বাজি পােড়ানাে হবে।— চিহ্নিত অংশটি কোন কারকের উদাহরণ?
উত্তর : ছাদে দাঁড়িয়ে বাজি পােড়ানাে অর্থে প্রযুক্ত হওয়ায়, এটি অধিকরণ কারকে ‘থেকে’ অনুসর্গের উদাহরণ।
কর্তৃকারকে ‘কে’ বিভক্তির একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : আপনাকে যেতেই হবে।
কর্মকারকে শূন্য বিভক্তির উদাহরণ দাও।
উত্তর : ওরা চিরকাল টানে দাঁড়।
নিমিত্ত কারকে ‘তে’ বিভক্তির একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : ক্ষুধিতে জোগাও অন্ন।
করণ কারকে ‘য়’ বিভক্তির একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : মেবারের পাহাড় লজ্জায় মুখ ঢাকছে।
অপাদান কারকে ‘এ’ বিভক্তির একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : তােমার ভূতে ভয় কীসের?
অধিকরণ কারকে ‘তে’ বিভক্তির একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : পুরীতে সমুদ্র আছে।
অকারক কাকে বলে?
অথবা, অকারক পদ বলতে কী বােঝ?
উত্তর : বাক্যে এমন কিছু পদ থাকে যাদের ক্রিয়াপদের সঙ্গে কোনাে সম্পর্ক নেই, অথচ বাক্যস্থিত অন্য কোনাে বিশেষ্য বা বিশেষ্যস্থানীয় পদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। এই পদগুলিকে বলা হয় অকারক পদ আর বাক্যান্তৰ্গত এমন সম্পর্ককে বলা হয় অকারক সম্পর্ক l
অকারক পদ কতপ্রকার ও কী কী?
উত্তর : অকারক পদ দু-প্রকার—(১) সম্বন্ধপদ এবং (২) সম্বোধন পদ l
সম্বন্ধপদ কাকে বলে?
উত্তর : যার অধিকারে কোনাে কিছু থাকে কিংবা যার সঙ্গে অন্য কোন কিছুর সম্বন্ধ থাকে, তাকেই বলে সম্বন্ধপদ। যেমন : বইটা আমার পড়া নেই। বাতের ব্যথা প্রভৃতি।
লােকটাই পালের গােদা হয়ে বসেছে।— রেখাঙ্কিত অংশটির কারক নির্ণয় করাে।
উত্তর : সম্বন্ধপদে ‘এর’ বিভক্তি।
সম্বােধন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর : বাক্যে যে-পদের সাহায্যে কাউকে ডাকা হয়, তাই হল সম্বােধন পদ l ‘ওরে, আজ তােরা যাসনে ঘরের বাইরে।’ এই বাক্যটিতে সম্বােধন পদটি হল ‘ওরে’। মহাশয়, আমরা বহুকালের অসভ্য জাতি। ‘মহাশয়’ সম্বােধন সম্বােধন পদ।
সম্বােধন পদের পরে সাধারণত কোন্ কোন্ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।
উত্তর : সম্বােধন পদের পরে সাধারণত পাদচ্ছেদ (,) বা বিস্ময়বােধক চিকন (!) ব্যবহৃত হয়।
আমারে ফিরায়েলহাে অয়ি বসুন্ধরে।’-রেখাঙ্কিত পদটি কোন পদ?
উত্তর : রেখাঙ্কিত ‘বসুন্ধরে’ পদটি সম্বােধন পদ।
সম্বন্ধপদ ও সম্বােধন পদের একটি পার্থক্য লেখাে।
উত্তর : সম্বন্ধপদগুলি সাধারণত র’ বা ‘এর’ বিভক্তিযুক্ত হয়। যেমন—হাতের পাঁচ, মিছরির ছুরি প্রভৃতি। কিন্তু সম্বােধন পদ সচরাচর শূন্য বিভক্তিযুক্ত হয়। যেমন : ও মা, তােমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি। মহাশয়, আমরা বহুকালের অসভ্য জাতি।
খাঁটি বাংলা প্রবাদ-প্রবচনে কোন্ পদের প্রয়ােগ খুব বেশি ? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : খাটি বাংলা প্রবাদ-প্রবচনে সম্বন্যপদের প্রয়ােগ খুব বেশি। যেমন : হাতের পাঁচ, মিছরির ছুরি, ডান হাতের কাজ প্রভৃতি।
ক্রম সম্বন্ধ বােঝায় এমন একটি সম্বন্ধপদের উদাহরণ দাও।
উত্তর : অঙ্ক বইয়ের তেরাের পাতা দেখাে।
‘মা ছেলেকে ভাত খাওয়াচ্ছেন।’ — এই বাক্যের প্রযােজক কর্তা ও প্রযােজ্য কর্তা চিহ্নিত করাে।
উত্তর : প্রশ্নে উদ্ধৃত বাক্যে ‘মা’ হল প্রযােজ্য কর্তা এবং ছেলে’ প্রযােজক কর্তা।
‘তিনি আমাকে দিয়ে কাজটি করালেন।’— এই বাক্যটির প্রযােজক কর্তা ও প্রযােজ্য কর্তা চিহ্নিত করাে।
উত্তর : প্রশ্নে উদ্ধৃত বাক্যে ‘তিনি’ হল প্রযােজ্য কর্তা এবং আমাকে’ প্রযােজক কর্তা।
‘লেখাপড়ায় মন দাও।’- এটি অধিকরণের কোন্ শ্রেণিতে পড়ে?
উত্তর : প্রশ্নে উদ্ধৃত বাক্যটিতে ক্রিয়া ভাব বা বিষয়কে অবলম্বন করে নিম্পন্ন হয়, তাই এটি ভাবাধিকরণের দৃষ্টান্ত।
বিভক্তি ও অনুসর্গ এই দুইয়েরই বহুল ব্যবহার ঘটে এমন দুটি কারকের নাম লেখাে।
উত্তর : করণ এবং অধিকরণ কারকে বিভক্তি ও অনুসর্গ এই দুয়েরই বহুল ব্যবহার ঘটে।
সম্বন্ধপদের কাপদের ক্ষেত্রে বিভক্তি না অনুসর্গ কোটির প্রয়ােগ বাহুল্য দেখা যায়?
উত্তর : সম্বন্যপদে শুধুই বিভক্তির ব্যবহার ঘটে; অনুসর্গের ব্যবহার নেই।
প্রধানত অনুসর্গযােগে গঠিত কারক কোনটি?
উত্তর : অপাদান কারক হল প্রধানত অনুসর্গযােগে গঠিত।
‘তিলে তেল হয় এবং ‘তিলে তেল আছে’-রেখাঙ্কিত পদ দুটি কোন্ কোন্ কারকের দৃষ্টান্ত ?
উত্তর : এমটি অপাদান এবং দ্বিতীয়টি অধিকরণ কারকের দৃষ্টান্ত।
‘আমার ইস্কুল এইটি।’ এবং সে ইস্কুল পালাল।’– রেখাঙ্কিত পদ দুটি কোন্ কোন্ কারকের দৃষ্টান্ত?
উত্তর : প্রথমটি কর্ম এবং দ্বিতীয়টি অপাদান কারকের দৃষ্টান্ত।
চোখে টান পড়ে।’ এবং চোখে ধুলাে পড়েছে।’- রেখাঙ্কিত পদ দুটি কোন্ কোন্ কারকের দৃষ্টান্ত?
উত্তর : প্রথমটি কর্তৃকারক এবং দ্বিতীয়টি অধিকরণ কারকের দৃষ্টান্ত।
ডাক্তার ডাকো।’ এবং ডাক্তার এলেন, দেখলেন।’-রেখাঙ্কিত পদ দুটি কীসের দৃষ্টান্ত?
উত্তর : প্রথমটি সম্বােধন পদ এবং দ্বিতীয়টি কর্তৃকারক।
করণ এবং অপাদান কারকে তে’বিভক্তির একটি করে উদাহরণ দাও।
উত্তর : মহামারিতে গাঁ উজাড় হয়ে গেল। (করণ কারক, ‘তে’ বিভক্তি) এত মেঘেতে বৃষ্টি নেই। (অপাদান কারক, ‘তে’ বিভক্তি)
কারক নির্ণয় করার একটি উপায় লেখাে।
উত্তর : বাক্যস্থিত পদটির অর্থ বুঝে কারক নির্ণয় করতে হয়।
বাক্যে ব্যবহার করে করণ কারকে অনুসর্গের প্রয়ােগ দেখাও।
উত্তর : স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ।’
নিমিত্ত কারকে অনুসর্গের ব্যবহার দেখিয়ে একটি বাক্য লেখাে।
উত্তর : সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু।
সংস্কৃত ভাষায় কোন্ বাংলা কারকটি নেই?
উত্তর : বাংলা ভাষার নিজস্ব প্রয়ােজনে নিমিত্ত কারকের সৃষ্টি, এটি সংস্কৃত ভাষায় নেই।
‘সে ব্যাকরণে পারদর্শী।’ এবং সে ভাইকে ব্যাকরণ পড়াচ্ছে।’ — রেখাঙ্কিত পদ দুটি কোন কোন কারকের দৃষ্টান্ত?
উত্তর : প্রথমটি অধিকরণ (‘এ’ বিভক্তি) এবং দ্বিতীয়টি কর্মকারকের শূন্য বিভক্তির দৃষ্টান্ত।
শূন্য বিভক্তি কাকে বলে?
উত্তর : বিভক্তিহীন শব্দ বাক্যে স্থান পায় না। কারণ শব্দ বিভক্তিযুক্ত হয়ে পদে তারত হলে তবেই বাক্যে ব্যবহৃত হয়। অথচ অধিকাংশ বাংলা বাক্যের বই পদেই কোনাে বিভক্তি-চিহ্ন থাকে না। তখন শূন্য বিভক্তির প্রয়ােগ ঘটে
যেমন : রাম বনে ফুল পাড়ে। রাম (শব্দ) + অ (শূন্য বিভক্তি) রাম (পদ), ফুল (শব্দ) + অ (শূন্য বিভক্তি) = ফুল (পদ)।
অস্ত্র রাখাে’—নিম্নরেখ পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করাে।
উত্তর : কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।
নিম্নরেখ পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করাে— ‘পৃথিবী হয়তাে বেঁচে আছে।
উত্তর : কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
কারক ও অকারকের প্রধান পার্থক্যটি কী?
উত্তর : কারক পদগুলির সঙ্গে বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াপদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে, কিন্তু অকারকের সঙ্গে ক্রিয়াপদের কোনাে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে না । এটিই কারক ও অকারকের প্রধান পার্থক্য।
পড়ুয়ারা পড়ছে। রেখাঙ্কিত পদটি কোন জাতীয় কর্তা?
উত্তর : রেখাঙ্কিত পদটি সমধাতুজ কর্তা।
অনুসর্গ ও নিদের্শকের সাদৃশ্য কোথায়?
উত্তর : অনুসর্গ ও নির্দেশক এরা উভয়েই বিভক্তি-চিহ্নের মতাে কাজ করে এবং এদের নিজস্ব অর্থ আছে।
‘মানুষ কি তাকে রেহাই দিবে?’ –রেখাঙ্কিত পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করাে।
উত্তর : কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
কর্তৃকারকে ‘এ’ বিভক্তির উদাহরণ দাও।
উত্তর : ছাগলে কিনা খায়।
‘সেই নগরের নাম আমরা আলিনগর রাখি। -রেখাঙ্কিত পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করাে।
উত্তর : সম্বন্ধপদে ‘এর’ বিভক্তি।
নীচের চিহ্নিত পদের কারক/অকারক সম্পর্ক নির্দেশ করে তার চিহ্ন নির্ণয় করাে— পােকাটা উড়ে গেল।
উত্তর : কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর’-রেখাঙ্কিত পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করাে।
উত্তর : সম্বােধন পদে শূন্য বিভক্তি।
অপাদান কারকে ‘য়’ বিভক্তির একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : তােমার জ্বালায় পালিয়েছে।
নিম্নরেখ শব্দটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করাে : কহ দাসে লঙ্কার কুশল।
উত্তর : কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।
বিভক্তি-প্রধান কারক কী কী?
উত্তর : কর্মকারক, অধিকরণ কারক, কর্তৃকারক এবং সম্বন্ধপদকে বিভক্তি-প্রধান কারকের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
ফাঁকি দিয়ে উপরে ওঠা যায়’—নিম্নরেখ পদটি কোন কারকের উদাহরণ?
উত্তর : অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তির উদাহরণ।
এই দ্বিতীয়বার সে ওকে দেখলে’– রেখাঙ্কিত পদটির কারক নির্ণয় করাে।
উত্তর : কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
সম্বন্ধপদ কারক নয় কেন?
উত্তর : সম্বন্ধপদের সঙ্গে বাক্যস্থিত সমাপিকা ক্রিয়ার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে না বলে, সম্বন্ধপদকে কারক পর্যায়ভুক্ত করা হয় না।
নদী তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ’-নদী’ কী পদ?
উত্তর : ‘নদী’ সম্বােধন পদ।
উদাহরণসহ মুখ্য কর্ম ও গৌণ কর্ম চিহ্নিত করাে।
উত্তর : আমি তােমাকে বইটি দিলাম।— এই বাক্যে বইটি’ হল মুখ্য কর্ম এবং ‘তােমাকে’ হল গৌণ কর্ম।
তপন প্রথমটা ভাবে ঠাট্টা।’-রেখাঙ্কিত পদটির কারক নির্ণয় করাে।
উত্তর : কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
‘দিয়ে’ অনুসর্গযােগে অধিকারণ কারকের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : মাঠের মধ্য দিয়ে তালগাছের সারি।
‘বিভক্তি’ শব্দের সাধারণ অর্থ কী?
উত্তর : ‘বিভক্তি’ শব্দের সাধারণ অর্থ হল বিভাজন।
মুখ্য কর্ম এবং গৌণ কর্ম কাকে বলে?
উত্তর : কোনাে বাক্যে দুটি কর্ম থাকলে তাকে দ্বিকর্মক বাক্য বলে। সাধারণত এই কর্ম দুটির একটি প্রাণীবাচক এবং অপরটি অপ্রাণীবাচক হয়। বিভক্তিযুক্ত প্রাণীবাচক কর্মগুলিকে গৌণ কর্ম আর বিভক্তিহীন অপ্রাণীবাচক কর্মকে মুখ্য কর্ম বলে।
যেমন: আমি তোমাকে (গৌণ কর্ম) কলমটা (মুখ্য কর্ম) দিলাম।
‘অন্ধজনে দেহ আলাে।’– ‘অন্ধজনে’ কী কারক ও কোন বিভক্তি?
উত্তর : নিমিত্ত কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
‘প্রলয় নাচন নাচলে যখন আপন ভুলে। —রেখাঙ্কিত পদ দুটি কোন কর্মকারককে নির্দেশ করছে?
উত্তর : সমধাতুজ কর্মকারককে নির্দেশ করছে।
উদাহরণ দাও : আধার-আধেয় সম্বন্ধ।
উত্তর : সম্বন্ধ আর সম্বন্ধিত একে অন্যের আধার হলে আধার-আধেয় সম্বন্ধ হয়। যেমন : কলশির জল, জলের বালতি।
মন্দিরে বাজছিল পুজার ঘণ্টা।—নিম্নরেখ পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করাে।
উত্তর : অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
আমার এই নোট টা লাগবে
Very good