খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ

ভূমিকা: “দুর্বল মস্তিষ্ক কিছুই করতে পারে না। আমাদিগকে উহা বদলাইয়া সবল মস্তিষ্ক হইতে হইবে। তােমরা সবল হও। গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তােমরা স্বর্গের সমীপবর্তী হইবে।”– স্বামী বিবেকানন্দের এই বহু চর্চিত উক্তিটির মধ্যে সুস্থ-সবল দেহমনের পরিপূর্ণ বিকাশের জয়ধ্বনি ঘােষিত হয়েছে। চাষি যেমন জমিতে বীজ রােপণের আগে সমস্ত আগাছা তুলে দূর করে, ঠিক তেমনই মানুষের মনের জমি থেকে আলস্য, ক্লান্তি ও জড়তার আগাছা নির্মূল করতে খেলাধুলার কোনাে বিকল্প নেই। তাই সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু এবং সাহস বিস্তৃত বক্ষপটের অধিকারী মানুষের দৈনন্দিনতার সঙ্গী হল খেলাধুলা। আমরা জানি শিশু-কিশােরদের বেড়ে ওঠার পথে জ্ঞানচর্চা ও খেলা পরস্পরের পরিপূরক ভূমিকা পালন করলে মানবমন সুন্দরভাবে বিকশিত হবে। কারণ পরিপূর্ণ দৈহিক এবং মানসিক বিকাশের ফলেই কোনাে মানুষের পূর্ণাঙ্গ চরিত্রগঠন সম্ভব হয়। আর সত্যি কথা বলতে জীবনে চলার পথে খেলাধুলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় অফুরন্ত আনন্দের চাবিকাঠি।

বর্তমানে খেলাধুলার চর্চা : খেলাধুলার প্রতি শিশর আকর্ষণ সহজাত। জন্মের পর হাত-পা ছোঁড়ার মধ্য দিয়ে যে খেলা শুরু, তা ক্রমশ ঘরে এবং ঘর থেকে বাইরে মাঠে তাকে টেনে নিয়ে যায়। এই মুক্তি তার চরিত্রকে উন্মুক্ত ও প্রসারিত করে। তাই আধুনিক শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ হল খেলাধুলা ও শরীরচর্চা। স্কুলের পাঠক্রমে বাধ্যতামূলকভাবে এসেছে দৌড়, হা-ডু-ডু, খাে-খাে, ব্যায়াম, যােগাসন, জিমন্যাস্টিকস, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, ক্রিকেট প্রভৃতি নানান ধরনের ব্যক্তিগত ও দলগত খেলা। অনেকে মিলে খেলতে অভ্যস্ত দলগত খেলাগুলিতে হার-জিতের পাশাপাশি এক বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবনারও জন্ম হয়। শিশুমনে সহযােগিতা ও সহানুভূতির বিকাশ ঘটে। এখানে উল্লেখ্য পরাধীন ভারতে শরীরচর্চার জন্য ব্রতচারী শিক্ষা শুরু করেছিলেন গুরুসদয় দত্ত। ব্রতচারী এমনই একটি চর্চা যা নাচগানের মধ্য দিয়ে শরীর ও মনকে বিকশিত হতে সহায়তা করে। তিনি জ্ঞান, শ্রম, সত্য, একতা এবং আনন্দ—এই পাঁচটি ব্রত নিয়ে কিশােরদের উদ্দীপিত করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। বর্তমানে চরিত্রগঠনের উপায় হিসেবে ব্রতচারীকে বিদ্যালয় পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ছাত্রসমাজের চরিত্রগঠনে খেলাধুলা : ছাত্রজীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। পাঠ্যপুস্তক ও শরীরচর্চা—এই দুয়ের সমবায়েই শিক্ষার্থীর দেহ-মন-আত্মার বিকাশসাধন হয়। মানসিক ক্লান্তি ও নিত্যকর্মের একঘেয়েমি থেকে খেলাধুলা যেমন আনন্দের ধারা বহন করে আনে, তেমনি খেলাধুলার মধ্য দিয়েই ছাত্রসমাজের মধ্যে গড়ে ওঠে শৃঙ্খলা ও ঐক্যবােধের শিক্ষা। খেলাধুলার মাধ্যমে ছাত্ররা দলনেতার আদেশ পালন করতে শেখে। সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বমূলক আচরণ শেখার পাশাপাশি নিয়মানুবর্তিতার বােধ খেলার মাধ্যমেই গড়ে ওঠে। এ ছাড়াও এই খেলার মধ্য দিয়েই বিকশিত হয় প্রতিযােগিতার মনােভাব, জয়ী হওয়ার একাগ্র চেষ্টা; যা পরবর্তী জীবনযুদ্ধে তথা দেশের সুস্থ নাগরিক গড়ে তােলার ক্ষেত্রে উপযােগী হয়ে ওঠে। উন্নত দেশগুলি এই সঙ্গত কারণেই ছাত্রজীবনে খেলাধুলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেছে। তারা লক্ষ করেছে, সুপরিকল্পিত খেলাধুলা দেশকে শৃঙ্খলাপরায়ণ করে; বলিষ্ঠ, কষ্টসহিষ্ণু ও নির্ভীক জাতিগঠনের সহায়ক হয়; তরুণ-তরুণীদের চরিত্রগঠনে বিরাট ভূমিকা নেয়। ভীরুতা ও কাপুরুষতার খােলসমুক্ত করে সাহস ও শৌর্যের উজ্জ্বল দীপ্তিতে বিপদভয়হীন, নিঃশঙ্ক, উদারচেতা মানবচরিত্র গঠনে খেলার কোনাে বিকল্প হতে পারে না।  

উপসংহার : খেলাধুলায় সংযম ও শৃঙ্খলার চর্চা থাকায় চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং মানসিক বলিষ্ঠতার জন্ম হয়। খেলার সাফল্য এবং ব্যর্থতা আমাদের জীবন সম্পর্কেও গভীর প্রত্যয়ী করে তােলে। মনের প্রকৃত ভারসাম্য বা sportsman’s spirit-এর খোঁজ মানুষতাে খেলার মাঠেই লাভ করে। ধৈর্য, সাহস, দক্ষতা, একাগ্রতা, সহ্যশক্তি, উদারতা ও সর্বোপরি মানুষকে ভালােবাসার গভীর উপলব্ধি জন্মায় খেলার মধ্য দিয়ে। এসমস্ত কারণেই একজন সফল খেলােয়াড় কোনাে দেশ বা জাতি তথা এ পৃথিবীর আদর্শ বা আইকন হয়ে উঠতে পারেন, যাকে অন্যরা অনুসরণ করতে ভালােবাসে। তাই এ দরিদ্র দেশে সম্ভাবনাময় অজস্র শিশু-কিশাের যেন খেলার সুযােগসুবিধা থেকে বঞিত না-হয় সেই দিকে সরকারকে সতর্ক হতে হবে। খেলাধুলা যাতে অনেকের জীবিকার পথ হয়ে উঠতে পারে, যেন সে বিষয়েও সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সর্বোপরি সকলেই খােলা মাঠে খেলার সুযােগ পেলে হয়ে উঠবে সবল, উদার, অকুতােভয়, সচল ও গতিশীল। আমরা সমাজকে এই ব্যাপ্তিই তাে দিতে চাই।

আরো পড়ুন

তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

কুসংস্কার প্রতিরােধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা”

Leave a Comment