কৈশোরকাল বা বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদা গুলি উল্লেখ করো | কৈশোরকালের এই চাহিদাজনিত সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করো

কৈশোরকাল বা বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদা গুলি উল্লেখ করো | কৈশোরকালের এই চাহিদাজনিত সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করো

উত্তর:

কৈশোরকাল বা বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদা

কৈশাের বা বয়ঃসন্ধিকাল জীবনের এমন এক সন্ধিক্ষণ। যা বলা যেতে পারে অননুমেয়। একজন ব্যক্তির জীবনে এক অদ্ভুত আকস্মিক অথচ স্বাভাবিক পরিবর্তন। এই পরিবর্তন থেকেই কিশাের-কিশােরীদের মধ্যে কতকগুলি চাহিদা সৃষ্টি হয়। সেগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল — (i) স্বাধীনতার চাহিদা, (ii) আত্মপ্রকাশের চাহিদা, (iii) দুঃসাহিকতার চাহিদা, (iv) নিরাপত্তার চাহিদা, (v) আত্মনির্ভরতার চাহিদা, (vi) নৈতিক চাহিদা, (vii) গণতান্ত্রিক চাহিদা, (viii) যৌন চাহিদা, (ix) রােমাঞ্চের চাহিদা, (x) জীবনদর্শনের চাহিদা, (xi) নতুন জ্ঞান অর্জনের চাহিদা ও (xii) সামাজিকতার চাহিদা।

কৈশােরকালের চাহিদাজনিত সমস্যাসমূহ :

কৈশােরকাল হল বাল্যকালের পরিণমনের স্তর। কৈশােরকালে বিভিন্ন রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে প্রধান পাঁচটি সমস্যা নিম্নে বর্ণিত হল — 

[1] পরিবারজনিত সমস্যা : কৈশােরকালের ছেলেমেয়েরা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্বন্ধে পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিদের সচেতন করতে যায়। কিন্তু অনেক সময় বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের চাহিদা

অনুধাবন করতে না-পেরে তাদের ওপর নতুন কোনাে প্রত্যাশা চাপিয়ে দেন। কিশাের-কিশােরীদের কাছে পিতা-মাতা অতিরিক্ত উচ্চাশা করেন কিন্তু তা অনেক সময় তারা পূরণ করতে পারে না। তখন ক্রমাগতই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিশাের-কিশােরীদের দ্বন্দ্ব চলতে থাকে, এমনকি তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায়। 

[2] বিদ্যালয়ে সংগতিবিধানজনিত সমস্যা : বেশিরভাগ কিশাের-কিশােরীরা নিয়ন্ত্রিত সময়সূচি ও পাঠক্রমের সঙ্গে সংগতিবিধান করতে পারে না। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দৃঢ় সহানুভূতিহীন আচরণ, পরীক্ষাব্যবস্থা, পাশ-ফেল প্রথা, পিতামাতার অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি কিশাের-কিশােরীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। এবং এগুলির সঙ্গে সংগতিবিধান করতে সে যখন ব্যর্থ হয় তখন সে নিউরােটিক রােগগ্রস্ত হয়ে যায় নতুবা তার মধ্যে অপরাধপরায়ণতা দেখা যায়।

[3] সমাজের সঙ্গে সংগতিবিধানজনিত সমস্যা : এই বয়সে কিশাের-কিশােরীরা নিজেকে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি বলে। প্রতিপন্ন করতে চায়। সমাজের আচরণ, প্রথা এগুলি শিখতে চায়। কিন্তু যখন সে ব্যর্থ হয় তখন সমাজের বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছে পরিহাসের পাত্র হয়ে যায়। এরকম ক্ষেত্রে তার মধ্যে। সাংঘাতিক মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।। 

[4] বৃত্তিগত সমস্যা: বয়ঃসন্ধিকালেই ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যৎ বৃত্তি সম্বন্ধে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন সংস্থার কর্মসুচিতে যােগদান করে অর্থ উপার্জনের জন্য। এই সময় পিতামাতার কাছে অর্থের জন্য ছলনার আশ্রয়। নেয়। যখন তা সম্ভব হয় না তখন বিভিন্ন দিকে অর্থ উপার্জনের জন্য ধাবিত হয়। কিন্তু এত কিছু কর্মকাণ্ডের পরেও যখন সে ব্যর্থ হয় তখন সমস্যার সৃষ্টি হয়।

[5] যৌনতা সম্পকীয় সমস্যা : যৌনতা সম্পর্কে অস্পষ্টতা বয়ঃসন্ধিকালের এক অন্যতম লক্ষণ। পরিবার ও সমাজ এ ব্যাপারে অনেক সময় সচেতন থাকে না অথবা গুরুত্ব দেয় না, ফলে এই বয়সের ছেলেমেয়েরা নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিকৃত পথে চালিত করে। ওই পথে সে তার যৌনতা সম্পর্কীয় প্রশ্নগুলির উত্তর অনুসন্ধান করার চেষ্টা করে, তখনই কিশাের-কিশােরীদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা অথবা বিভিন্ন প্রকার মানসিক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!