কুসংস্কার প্রতিরােধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

কুসংস্কার প্রতিরােধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

ভূমিকা : বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান যুক্তি-বুদ্ধির দ্বারা প্রকৃতি জগতের নানা রহস্যের সমাধান করেছে। তবু মানুষের মনে নানা অবৈজ্ঞানিক বিশ্বাস দানা বেঁধে আছে। অপ্রাকৃত, অলৌকিক, যুক্তিহীন এই বিশ্বাসকে কুসংস্কার বলে। এগুলি মানুষের মুক্ত চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। কুসংস্কার মানবজীবনকে গণ্ডিবদ্ধ করে রাখে, এগিয়ে চলতে বাধা সৃষ্টি করে, চিন্তা-চেতনা ঘুম পাড়িয়ে রাখে। এযুগে আধুনিক বিজ্ঞানের ব্যাপক বিকাশ সত্ত্বেও মানুষের মন থেকে এইসব কুসংস্কার দূর হয়নি। তুকতাক, মন্ত্রতন্ত্র, ঝাড়ফুক ইত্যাদি আজও আমাদের আকর্ষণ করে। করার জন্য খােল-করতাল নিয়ে হরিধ্বনি করে। কুসংস্কার আমাদের চিন্তাচেতনাকে আচ্ছন্ন করে বলেই আমরা প্রকৃত সত্য থেকে দূরে সরে যাই। 

কুসংস্কার প্রতিরােধ ও ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা : নদী তার গতি হারালে শৈবালে পূর্ণ হয়, জাতি গতি হারালে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়। কুসংস্কার প্রগতির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। দেশের প্রকৃত প্রগতির জন্য কুসংস্কার দূরীকরণ আবশ্যিক। একাজ করতে পারে সুশিক্ষিত কুসংস্কারমুক্ত মনের অধিকারী নাগরিক সমাজ, আর পারে ছাত্রসমাজ। তারা মুক্ত জ্ঞানের অধিকারী। প্রকৃত বিদ্যা সংস্কারমুক্ত মন গঠন করে, সুতরাং ছাত্রছাত্রীরাই দেশকে কুসংস্কার থেকে মুক্ত করতে পারে। তারা আগামী দিনের দেশের ধারক ও বাহক। দেশের নিরক্ষর মানুষদের কাছে বিজ্ঞানের আলাে পৌঁছে দিয়ে তাদের যুক্তিবাদী করে তুলতে পারে। মানুষকে শেখাতে হবে কুসংস্কার মানবিকতা-বিরােধী। দৈব ও অলৌকিক বলে কিছু হয় না। এই পৃথিবীতে সকল ঘটনা ও বিষয়ের পিছনে একটা যুক্তি-শৃঙ্খলা রয়েছে। সুতরাং অলীক বিশ্বাসের পিছনে না-যাওয়াই উচিত। ছাত্ররা যুক্তিবাদী, তারা যুক্তি দিয়ে মানুষকে সব ঘটনার পিছনের সত্যকে সকলের সামনে তুলে ধরবে, এটাই প্রত্যাশিত। হাঁচি, টিকটিকি, বারবেলা, অমৃতযােগ ইত্যাদি আধিদৈবিক-আধিভৌতিক ব্যাপারগুলি যে মানুষের অন্ধসংস্কার ছাড়া কিছু নয় তা ছাত্রছাত্রীরাই ভালাে করে সকলকে বােঝাতে পারবে। মানুষ কখনও ডাইনি হয় না, দেবতা কখনও সন্তানের রক্তে খুশি হন না, সতীদাহ হলে কারও কোনাে লাভ হয় না, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণে শুধু হাঁড়িকুড়ি নষ্ট হয়—এইসব বিষয়ে ছাত্রছাত্রীরা মানুষকে বােঝাতে পারে।

উপসংহার : ছাত্রছাত্রীরা তাদের দায়িত্বের কথা কখনও ভুলবে না, এটাই প্রত্যাশিত। তারা জাতির মানসমুক্তি ঘটিয়ে ভারতবর্ষকে সকল বন্ধনমুক্ত মানবতার মুক্তিতীর্থে প্রতিষ্ঠিত করবে, তাদের কাছে জাতির এই প্রত্যাশা। দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ একমাত্র ছাত্ররাই। ছাত্ররা শিক্ষার আলােকে সকল অজ্ঞতা মুছে দিয়ে আলাের পথযাত্রী হিসেবে সমাজের-দেশের সহায়ক হয়ে উঠবে। তাতেই দেশের মঙ্গলসাধন সম্ভব।

আরো পড়ুন

সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের উপযোগিতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

সামাজিক জীবনে মেলার প্রয়োজনীয়তা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

রক্তদান জীবনদান – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!