টীকা লেখাে : মহাবিদ্রোহ ও জাতীয়তাবােধ। 4 Marks/Class 10
উত্তর:–
ভূমিকা : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের সময় ভারতে জাতীয়তাবাদের আদর্শ গড়ে না-উঠলেও সমসাময়িক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতবাসীর মনে ব্রিটিশ-বিরােধী মানসিকতা তৈরি হয়েছিল, যাকে কার্ল মার্কস ‘অজ্ঞাত ও অবচেতন হাতিয়ার’ (unconscious tool of history in learning about the revolution) বলেছেন।
জাতীয়তাবােধের স্বরূপ :
১) হিন্দু মুসলিম ঐক্য : মহাবিদ্রোহের একটি বিশেষ দিক ছিল হিন্দু-মুসলিম ঐক্য। বিদ্রোহীদের মধ্যে জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণা ছিল না, কিন্তু জাতীয়তাবােধ ছিল। বিদ্রোহীরা ‘গণতন্ত্র’ বা ‘প্রজাতন্ত্র কথাটি চয়ন করতে না-পারলেও তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ বিতাড়ন।
২) প্রধান নেতা নির্বাচন : বিদ্রোহীরা ভারতের শেষ মােগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে বিদ্রোহের প্রধান নেতার পদে মনােনীত করে ইংরেজ শাসনের উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন।
৩) অখণ্ড ভারত আদর্শ : বিদ্রোহকাল হিন্দু ও মুসলিম সিপাহিরা এক অখণ্ড ভারতের ধারণা তুলে ধরে নিজেদেরকে হিন্দুস্তানের বাসিন্দা বলে ঘােষণা করেছিল। ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ার মনে করেন ভারতের জাতীয়তাবােধ উন্মেষে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের অভ্যুত্থান কিছুটা প্রভাব ফেলেছিল। অধ্যাপক রজতকান্ত রায় এই বিষয়ে সহমত পােষণ করেছেন।
৪) জাতীয় আন্দোলনের অনুপ্রেরণা : ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থতা সত্ত্বেও পরবর্তীকালে ভারতের মুক্তিসংগ্রামে এই মহাবিদ্রোহের স্মৃতি অনুপ্রেরণা জোগায়। নানা সাহেব, লক্ষ্মীবাই জাতীয় বীরের আসনে প্রতিষ্ঠিত হন।
মূল্যায়ন : মহাবিদ্রোহের পরবর্তীকালে ভারতীয়রা ব্রিটিশ শাসনের বৈষম্যমূলক দিকগুলি সম্পর্কে সচেতন হয়ে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শামিল হলে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটতে থাকে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।