মনােবিদরা ব্যক্তির প্রেষণা হ্রাসের যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন সেগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

মনােবিদরা ব্যক্তির প্রেষণা হ্রাসের যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন, সেগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।   Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

প্রেষণা হ্রাসের কারণ :

মনােবিদগণ প্রেষণা হ্রাসের অনেকগুলি কারণ চিহ্নিত করেছেন | নীচে প্রেষণা হ্রাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা হল —

[1] উদবেগ : প্রেষণা হ্রাসের অন্যতম কারণ উদবেগ | কোনাে ব্যক্তির মধ্যে যদি কোনাে বিষয়ে উদবেগ সৃষ্টি হয়, তবে তা ব্যক্তির প্রেষণার ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। উদবেগের ফলে বহুক্ষেত্রে প্রেষণা বা প্রেষণক্রিয়া হাস পায়।

[2] বিষয়ের কাঠিন্য : বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখা গেছে, যদি কোনাে বিষয় খুব কঠিন হয় অথবা খুব সহজ হয়, তাহলেও ব্যক্তির বা শিক্ষার্থীর প্রেষণা হ্রাস পায়। 

[3] উৎসাহ বা আগ্রহ: প্রেষণার সাথে আগ্রহের নিবিড় সম্পর্ক বর্তমান। কোনাে বিষয়বস্তুর প্রতি ব্যক্তির বা শিক্ষার্থীর উৎসাহ বা আগ্রহ কম হলে ওই বিষয়বস্তুর প্রতি তার প্রেষণা হ্রাস পায়। 

[4] কৌতূহলের অভাব : কোনাে নির্দিষ্ট বিষয়ে যদি ব্যক্তির বা শিক্ষার্থীর কৌতুহল না থাকে তাহলে সে ওই বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থী অনুৎসাহী হয়ে পড়ে। ফলে তার মধ্যে বিষয়ের প্রতি প্রেষণা হ্রাস পায় l

[5] অতি-অসহায়ত্ব: মনােবিদরা বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, কোনাে শিক্ষার্থী বা ব্যক্তি যদি কোনাে কাজে বারে বারে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই কাজের প্রতি তার উৎসাহ নষ্ট হয়, ব্যর্থতার দরুন। তার মধ্যে এক অসহায়তার সৃষ্টি হয় | ফলে তার প্রেষণা হ্রাস পায়।

[6] প্রক্ষোভ বা আবেগ : লজ্জা, ঘৃণা, ভয় প্রভৃতি প্রক্ষোভগুলি ব্যক্তির প্রেষণার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে এই জাতীয় আবেগ বা প্রক্ষোভের ফলে ব্যক্তির প্রেষণা হ্রাস পায়। 

[7] মানসিক দুর্বলতা: মনােবৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখা গেছে বহু ব্যক্তি পরিবেশ অনুযায়ী নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে না | অনেক সময় তারা নিজেদের দুর্বলতাগুলিকে বড়াে করে দেখে। সামান্য বাধাকেও তারা অতিক্রম করতে পারে না। ফলে এই কাজে তারা প্রেষণা হারায়। 

[8] পরিবেশ : কাজের পরিবেশ যথােপযুক্ত না হলেও ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী কাজের প্রতি প্রেষণা হারায়। পারস্পরিক বিশ্বাস, সহযােগিতা, দলগত উৎসাহ, সহমর্মিতার অভাবে বহু ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট কাজে প্রেষণা হারায়। 

[9] চাহিদাপূরণ না হওয়া: বিভিন্ন প্রকার শারীরবৃত্তীয় চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ না হলে ব্যক্তি কোনাে নির্দিষ্ট কাজে প্রেষণা হারায়। যেমন—খাদ্য, পানীয় প্রভৃতির চাহিদাপূরণ না হলে ব্যক্তির মধ্যে প্রেষণা হ্রাস পায়।

[10] নিরাপত্তার অভাব : প্রতিটি ব্যক্তির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হল নিরাপত্তা | সুরক্ষা, স্থায়িত্ব, ভয় থেকে মুক্তি প্রভৃতি নিরাপত্তামূলক চাহিদাগুলি সঠিকভাবে পূরণ করা না হলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে ব্যক্তির প্রেষণা হ্রাস পায়।

[11] আত্মসম্মানের চাহিদাপূরণ না হওয়া : ব্যক্তির মধ্যে উপযুক্ত মাত্রায় আত্মসম্মানবােধ তৈরি না হলে বিভিন্ন কাজে প্রেষণার ঘাটতি লক্ষ করা যায়। 

[12] আত্মপ্রতিষ্ঠার চাহিদাপূরণ না হওয়া : প্রত্যেক ব্যক্তিই জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে চায়। কোনাে কারণে এই কাজে বিফল হলে ব্যক্তি নিজেকে সংকুচিত করে ফেলে। ফলে তার প্রেষণা বাধাপ্রাপ্ত হয়। সে পরবর্তী কাজে অগ্রসর হওয়ার প্রেষণা হারায়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment