মনসবদারি ব্যবস্থা কী ? মােগল আমলে এই প্রথা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য ও তার মূল্যায়ন করাে।

প্রশ্ন : মনসবদারি ব্যবস্থা কী ? মােগল আমলে এই প্রথা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য ও তার মূল্যায়ন করাে ।
‘অথবা’ মােগল আমলের মনসবদারি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলােচনা করাে।

Notice : নিচে এই নােটটির প্রত্যেকটি পয়েন্ট আলােচনা করা হয়েছে, পরীক্ষায় যে অংশটুকু আসবে কেবল সেই অংশটুকুর-ই উত্তর লিখবে, বাকি অংশটুকু লেখার কোন প্রয়ােজন নেই

উত্তর:

ভূমিকা :- ‘মনসব’ কথাটির অর্থ হল ‘পদমর্যাদা’ বা ‘Rank’। এই পদমর্যাদার অধিকারীদের ‘মনসবদার’ বলা হয়। মনসবদারি প্রথা একটি পারসিক প্রথা। আকবরের বহুপূর্বে মধ্যে এশিয়াতে তৈমুরলঙ ও চেঙ্গিস খাঁর শাসনব্যবস্থায় মনসবদারি প্রথা প্রচলিত ছিল। সম্রাট আকবর 1578 খ্রিস্টাব্দে সাম্রাজ্যের সামরিক ও অসামরিক ভিত্তি হিসেবে মনসবদারি প্রথা প্রবর্তন করেন ।

মনসবদারী প্রথা প্রবর্তনের কারণ বা উদ্দেশ্য :- সম্রাট আকবর কতকগুলি উদ্দেশ্য নিয়ে মনসবদারি প্রথা প্রবর্তন করেন। যেমন – (ক) সামরিক ও বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের সংঘটিত করার উদ্দেশ্যে মনসবদারি প্রথার প্রবর্তন করা হয় । (খ) জায়গিরদার প্রথার দুর্নীতি দূর করে প্রশাসন ব্যবস্থাকে গতিশীল করে তােলা হয় । (গ) জায়গিরদারি প্রথার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রের ‘খালিসা’ জমি পরিমাণ বৃদ্ধি করে রাজস্ব বৃদ্ধি করা হয় । (ঘ) নির্দিষ্ট পরিমাণ সামরিক শক্তিকে বৃদ্ধি করা হয়।

মনসবদারি প্রথার বিভিন্ন স্তর :- সৈন্যসংখ্যা ও অশ্বসংখ্যার উপর ভিত্তি করে মনসবদারি প্রথা 33 টি স্তরে বিভক্ত ছিল। সর্বনি, স্তর ছিল 10, সর্বোচ্চ স্তর ছিল 12000। এর মাঝখানে 20, 50, 100, 200, 500, 7000 ইত্যাদি পদের মনসবদার ছিল । তবে উচ্চ মনসবদারের পদগুলি সম্রাটের পুত্র ও নিকটাত্মীয়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। মানসিংহ, ভগবানদাস,টোডরমল সাতহাজারি মনসবদারি পদ পেয়েছিলেন।

মনসবদারদের নিয়ােগ, বেতন ও অপসারণ :- মনসবদারদের নিয়ােগ, পদোন্নতি, বদলি ও পদচ্যুতি সম্রাটের ইচ্ছার উপর নির্ভরশী ছিল ।

(i) নিয়ােগ : কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠীর মানুষকে মনসবদারের পদে নিয়ােগ করা হত। কোন বংশমর্যাদা দেখা হতাে না l

(ii) বেতন :কোন কোন মনসবদারদের নগদে কোষাগার থেকে বেতন দেওয়া হত। তাদের বলা হতাে মনসবদার-ই নগদি। আবার, অনেক মনসবদারদের নগদ বেতনের পরিবর্তে জায়গির বা জমি দেওয়া হত। তাদের বলা হত জায়গিরদার। ওই বেতন থেকে মনসবদারকে সেনাদলের বেতন, হাতি ও ঘােড়া এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ভার বহন করতে হত ।

(iii) অপসারণ ও পদচ্যুতি : সম্রাট ইচ্ছা করলে যেকোনাে সময় যেকোনাে মনসবদারকে অপসারণ ও পদচ্যুত করতে পারতেন।

মনসবদারদের কাজ :-
(ক) মনসবদাররা নিজস্ব পদমর্যাদা অনুযায়ী পদাতিক ও অশ্বারােহী সৈন্য রাখতেন। সামরিক প্রয়ােজনে সম্রাটকে মনসবদাররা সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতেন ।
(খ) মনসবদাররা সামরিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কিছু কিছু অসামরিক দায়িত্বও পালন করতেন।

জাট ও সওয়ার :- ‘জাট’ ও ‘সওয়ার’ বলতে কী বােঝায় তা নিয়ে নানা মত আছে। তবে বেশিরভাগ পন্ডিত মনে করেন ‘জাট’ হল পদাতিক সৈন্যের সংখ্যা। আর সওয়ার হল অশ্বারােহী বাহিনীর সংখ্যা।

গুরুত্ব :- মােগল শাসনব্যবস্থায় মনসবদারি প্রথার গুরুত্ব ছিল উল্লেখযােগ্য । —
(ক) মনসবদারি পদ বংশানুক্রমিক না হওয়ার ফলে সবসময়ই যােগ্য ব্যক্তিরা পদ লাভ করত ।
(খ) মনসবদারি প্রথার উপর ভিত্তি করে বিশাল মােগল সৈন্যবাহিনী গড়ে ওঠে l
(গ) জাতিভিত্তিক মনসবদারি প্রথা চালু হওয়ার ফলে বিদেশি অভিজাতদের আধিপত্য খর্ব হয় l
(ঘ) মনসবদাররা সম্রাটের প্রতি পর্ণ আনুগত্য জানায় এবং সর্বশক্তি দিয়ে সম্রাটের হাত শক্ত করেন ।
(ঙ) মনসবদারি প্রথা বংশানুক্রমিক না হওয়ার ফলে সামন্তপ্রথার পুনঃপ্রকাশের সম্ভাবনা দূর হয়। 

মনসবদারী প্রথার মূল্যায়ন :-

ত্রুটি :- মনসবদারি প্রথার বেশ কিছু ত্রুটি ছিল –
(i) মনসবদাররা পদমর্যাদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ সৈন্য রাখত না।
(ii) মনসবদারি প্রথার সৈন্যদের আনুগত্য ছিল মনসবদারদের প্রতি, সম্রাটের প্রতি নয়।
(iii) মনসবদারি প্রথা ছিল একটি জটিল প্রথা। সম্রাটের ব্যক্তিত্বের ওপর এই প্রথার সফলতা নির্ভর করত। তাই আকবরের পরবর্তীকালে অযােগ্য শাসকদের আমলে এই প্রথার ভাঙ্গন শুরু হয়।
(iv) অধিকাংশ মনসবদার ছিল অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত । সম্রাটের প্রতি তাদের কোনাে আনুগত্য ছিল না।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

4 thoughts on “মনসবদারি ব্যবস্থা কী ? মােগল আমলে এই প্রথা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য ও তার মূল্যায়ন করাে।”

Leave a Comment

error: Content is protected !!