ভুমিকা: ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষকে শাসন করার জন্য বিভিন্ন সময়ে একাধিক আইন প্রবর্তন করেছিল। একই ভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন ভারতে একাধিক বিক্ষিপ্ত রাজনৈতিক ঘটনা এবং ১৯০৯ খ্রিঃ মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন ভারতীয়দের কোনো আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। তাই পুনরায় ভারতীয়রা শাসনতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। আর সেই সময় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের জন্য শাসনতান্ত্রিক সুবিধার্থে ১৯১৯ খ্রিঃ মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন প্রবর্তনের পথে পা বাড়ায়।
মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য:
(১) সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের ভিতর ও বাইরে ব্রিটিশ বিরোধী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে বিপ্লবীরা লিপ্ত ছিলেন। এমনকি তারা সমগ্র ভারতে এক অখণ্ড ব্রিটিশ বিরোধী সন্ত্রাসীবাদী কার্যকলাপে উদ্যোগ গ্রহণ করে।
(২) যুদ্ধের জন্য অর্থের প্রয়োজন: ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয়দের অর্থ ও লোকবল উভয়ের প্রয়োজন ছিল এবং এই পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবি প্রত্যাহার করা তাদের কাছে বাঞ্ছনীয় ছিল না।
(৩) লখনৌ অধিবেশন: ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের লখনৌ অধিবেশনের সময় চরমপন্থীরা পুনরায় জাতীয় কংগ্রেসের যোগ দেয়। এর ফলে জাতীয় কংগ্রেস পুণরায় শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ হয় এবং জাতীয় কংগ্রেসের স্বরাজ বা পূর্ণস্বাধীনতার দাবি মুসলিম লীগ মেনে নেয়। ফলে মুসলিম লীগ ও জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে লখনৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
(৪) হোমরুল আন্দোলন: ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে লখনৌ চুক্তির প্রভাবে বালগঙ্গাধর তিলক ও শ্রীমতি অ্যানি বেসান্তের এর নেতৃত্বে হোমরুল আন্দোলন ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই আন্দোলন সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ করতে থাকে।
(৫) সায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠা: হোমরুল আন্দোলনের প্রভাবে ব্রিটিশ সরকার উদদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে ফলে ভারত সচিব মন্টেগু ঘোষনা করে যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে সায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠা হবে।
মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের ত্রুটিসমূহ:
মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন খাদখন্ডে ভর্তি ছিল। এই সংস্কার আইন এর ত্রুটিগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
(১) বড়লাটের একাকীত্ব: এই সংস্কার আইনে বড়লাট ও কার্যনির্বাহী সভার হাতে সব ক্ষমতা বণ্টিত থাকে এবং বড়লাট আইনসভার যে কোনো প্রস্তাব নাকোচ করে দিতে পারতেন। এই আইনে ভারতে কোন প্রতিনিধিত্ব মূলক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়নি।
(২) দায়িত্বশীলতার অভাব: এই আইনের ফলে ভারতের বড়লাট তার কাজের জন্য কারোর কাছে দায়ী ছিলেন না। এর ফলে দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটে।
(৩) ভোটাধিকার: এই আইনে ভারতের খুব কম সংখ্যক মানুষ ভোটাধিকার পায়।
(৪) সাম্প্রদায়িকতা: এই আইনের ফলে ভারতে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ আরো বৃদ্ধি পায়। শিখ,খ্রিস্টান, মুসলিম ও বর্ণহিন্দুদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
উপসংহার: মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন ত্রুটি বিচ্যুতি ও যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে তৈরি হয়েছিল। জাতীয় কংগ্রেস এই আইন কে ‘তুচ্ছ, নৈরাস্য কর ও অসন্তোষ’ জনক বলে অভিহিত করেছেন। অপরদিকে নরমপন্থী গণ বলেছেন ‘সঠিক ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন।
Read Also
মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কারের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে। এই আইনের ত্রুটিগুলি উল্লেখ করাে ?
লখনৌ চুক্তির শর্তাবলি উল্লেখ করাে। এই চুক্তির গুরুত্ব আলােচনা করাে?
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড এর প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব আলোচনা করো
সমাজসংস্কার আন্দোলনে বিদ্যাসাগর এর ভূমিকা আলােচনা কর ?
নতুন সামাজিক ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য আলােচনা কর। অথবা, নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব লেখাে।
টীকা লেখাে: পরিবেশ ইতিহাস চর্চা। অথবা, পরিবেশ ইতিহাস চর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
বঙ্গদর্শন পত্রিকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব লেখাে। অথবা, টীকা লেখাে: বঙ্গদর্শন
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
কপি করার জায়গা নেই আবার মতামত মারাচ্ছো ।আগে কপি করার জায়গা রাখ তারপর মত দিচ্ছি।