নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা
ভূমিকা :
‘অজ্ঞান, অন্ধকারে ওত পেতে থাকে মহাপাপ,
নিরক্ষরতা তাই জাতির জীবনে এক অভিশাপ।’
অক্ষরজ্ঞান যার নেই, সেই তাে নিরক্ষর। সে তাে চোখ থাকতেও অন্ধ। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—“মানুষের অন্ধত্বের মতাে নিরক্ষরতা এই দুর্ভাগা দেশের হতভাগ্য জনগণের সর্বাপেক্ষা নিষ্ঠুরতম অভিশাপ।” সমস্যাসংকুল ভারতবর্ষে এই সমস্যা অভিশাপের মতাে চেপে বসেছে। তাই, নিরক্ষরতা দূরীকরণে সকলের সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে ছাত্রসমাজকে।
নিরক্ষরতার পিছনে স্বার্থবাদী মানুষ: সমাজের এক শ্রেণির স্বার্থপর মানুষের চক্রান্তে যুগ যুগ ধরে জনগণ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দীর্ঘকাল অশিক্ষার অন্ধকারে থাকতে থাকতে এরা মানুষের পরিচয় হারিয়ে ভারবাহী পশুতে রূপান্তরিত হয়েছে। এরা জানে না, সমাজে তাদেরও বেঁচে থাকার সমান অধিকার বর্তমান। বড়াে দুঃখে কবি বলেছেন—“ওই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা।” নিরক্ষরতার অন্ধকারে ডুবে থাকা শােষিত মানুষের নিদারুণ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে কবি এ কথা বলেছেন।
স্বাধীন ভারতে নিরক্ষরতার স্বরুপ : দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় অর্ধশতাব্দী কাল। জনসংখ্যার দিক থেকে আমরা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। তবু ভারতে আজ প্রায় ১১০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৪০ কোটি মানুষ এখনও অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, কিন্তু সে তুলনায় সাক্ষর মানুষের সংখ্যা বাড়েনি। ফলে গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় হয়নি। পরাধীনতার অবসানে আমাদের দুয়ারে পশ্চিমের গণতন্ত্রের রথ ভিড়লেও, সে নবযুগের রথকে মূঢ়, নিরক্ষর, অন্ধ জনগণ অন্যের নির্দেশে টেনে নিয়ে চলেছে।
সাক্ষরতার প্রয়ােজনীয়তা: গণতন্ত্রের সাফল্যের প্রয়ােজনে দেশব্যাপী নিরক্ষরতা দূরীকরণ আবশ্যক। নবযুগ এসেছে। চিন্তাভাবনায় বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে। অথচ কৃষিপ্রধান আমাদের দেশের কৃষকরা নিরক্ষরতার জ্ঞানহীন আঁধারে বসে মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিকে অবলম্বন করে চলেছে। তাদের নানা পদ্ধতি, তথ্য সম্পর্কে অবহিত করতে হলে ‘সাক্ষরতার জিয়নকাঠি স্পর্শ ছাড়া আর কোনাে জাদুমন্ত্র নেই।
সাক্ষরতার প্রথম ধাপ : নিরক্ষরতার অন্ধকার দূর করতে হলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে শিক্ষার আলাে ছড়িয়ে দিতে হবে। এজন্য চাই গণশিক্ষা, সর্বজনীন শিক্ষা। প্রথম কথা অক্ষরজ্ঞান, রবীন্দ্রনাথের কথায়—“লেখাপড়া শেখাই সেই রাস্তা।” দেশের সকল নিরক্ষরকে সাক্ষর করার জন্য বিভিন্ন স্থানে নৈশ বিদ্যালয়, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, পাঠ্যবই বিতরণ ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
নিরক্ষরতা এবং ছাত্রদের কর্তব্য ও পথনির্দেশ: দেশের-দশের সামাজিক সংকটমােচনে ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে এসেছে। ছাত্ররাই পারে নিরক্ষরতার রাহুগ্রাস হতে সমাজকে মুক্ত করতে। তারা অবসর সময়ে বাড়ির এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা নিরক্ষর এবং সমাজে যারা পিছিয়ে পড়েছে, তাদের মধ্যে সাক্ষরতার আলাে জ্বেলে দিতে পারে। এজন্য তারা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দিতে পারে। টিভি, রেডিয়াে প্রভৃতি প্রচার মাধ্যমেরও সাহায্য নিতে পারে। সরকারের উচিত সাক্ষরতা কর্মসূচিকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা। এতে সব ছাত্র এই কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবে।
উপসংহার: সমাজকে নিরক্ষরমুক্ত করার মহান কর্মযজ্ঞে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে সকল শিক্ষিত মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সকলকেই যােগ দিতে হবে সাক্ষরতা আন্দোলনে। এজন্য ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে দেশের সকলকেই দায়িত্ব নিতে হবে আর বলতে হবে–“নিরক্ষর মানুষের হাতে ধরিয়ে দাও বই, সেই হবে তার জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার।”
আরো পড়ুন
খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
কুসংস্কার প্রতিরােধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের উপযোগিতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।