Bengali Bangla Prabandha Rachana নতুন মাস্টারমশাই – পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা

নতুন মাস্টারমশাই – পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা

নতুন মাস্টারমশাই – পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা

প্রশ্ন : প্রদত্ত অনুচ্ছেদটিকে প্রস্তাবনা বা ভূমিকা স্বরূপ গ্রহণ করে বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে, পরিণতিদানের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা করো।

নতুন মাস্টারমশাই

ক্লাসে যেসব বই নিয়ম করেই পড়তে হয়, মাস্টারমশাইরা যত্ন করেই তা পড়িয়ে দেবেন, এটুকু তো প্রত্যাশিতই। মনকে নিশ্চয় একটু একটু করে শিক্ষিত স্তরে পৌঁছে দেয় সেসব পড়াশোনা। কিন্তু ছোটোদের মনকে অনেকখানি বাড়তি সজীবতা দেয় মাস্টারমশাইদের এই প্রথা ভাঙাবার সাহস। পাঠ্যরেখার স্থিরতার মধ্য থেকে মাঝে মাঝে হঠাৎ যদি কোনো কিশোরমনকে তাঁরা চালিয়ে দেন কোনো অভাবনীয়ের দিকে, কোনো স্বপ্নের দিকে, কোনো চ্যালেঞ্জের দিকে, তাহলে সে মন হয়তো অনেকদিনের পুষ্টি পেয়ে যায়, পেয়ে যায় কোনো নতুন জগতের আনন্দ । [ নমুনা প্রশ্ন ]

উত্তর:

নতুন মাস্টারমশাই

অনন্ত কৌতূহল নিয়ে কিশোর অপুর বালক-মন চলাচল করে। পৃথিবীজোড়া তার অনন্ত বিস্ময়ের উপকরণ। চারপাশকে বুঝে নেওয়ার অনন্ত আকুলতা। তাকে পথ দেখাবে কে? মা-বাবা চান ছেলে যেন বড়ো হয়ে ‘দুধে ভাতে’ থাকে। অতএব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ভালো ফল করার লক্ষ্যে দিনরাত বই মুখে বসে থাকাকেই তারা কৈশোরের পবিত্র কর্তব্য মনে করেন। কিন্তু জানলার বাইরের কৃষ্ণচূড়া যে আমন্ত্রণ পাঠায়, ফড়িঙের ডানায় যে স্বপ্ন লাফিয়ে বেড়ায়, কবিতাকে ছাপিয়ে যে কাজলাদিদির জন্য বালিশে চোখের জল মোছে কিশোর মন—তাকে পথ দেখাবে কে? একমাত্র তা পারেন একজন মাস্টারমশাই। সে মাস্টারমশাইয়ের হাতে বেতের ছড়ি থাকবে না, বদলে থাকবে এক অদৃশ্য জাদুদণ্ড যার ছোঁয়ায় জীবন জেগে উঠবে—কুঁড়ি থেকে ফুলের ফুটে ওঠার মতো। এই শিক্ষকের লক্ষ্য থাকবে তোতাপাখির সংখ্যাবৃদ্ধি নয়, প্রকৃত মানুষ গড়ে তোলা। যে বিস্ময়, যে জানার আকাঙ্ক্ষা ঘিরে থাকে তরুণ প্রাণকে, তিনি তাকে সঞ্জীবিত করবেন—মালি যেভাবে গাছে জল দেয়। প্রশ্ন-উত্তরের পাঠক্রমিক ধরাবাঁধা ছকে নয়—আবিষ্কারের উন্মাদনায় তিনি সাজিয়ে দেবেন জীবনকে। প্রতিটি প্রশ্নই তখন হবে জ্ঞানসাম্রাজ্যের পথে এক-একটা পদক্ষেপ। প্রতিটি উত্তরই চলতে চলতে কুড়িয়ে নেওয়া এক-একটা মণিমুক্তো।

এ কথা হয়তো ঠিক প্রতিযোগিতার এই তীব্র পরিবেশে শিক্ষা হয়ে উঠেছে পরীক্ষায় সাফল্যের দ্বারা নির্ধারিত এক বিষয়। আর ছাত্রছাত্রীদের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখেই শিক্ষকরাও হয়ে উঠেছেন যান্ত্রিক। সুভাষচন্দ্রের শিক্ষক বেণীমাধবের মতো আদর্শের জন্য দৃঢ়সংকল্প বা বিভূতিভূষণের মতো বিভোর শিক্ষককে আজ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শিক্ষক দিবসে দেশের রাষ্ট্রপতিকেও আক্ষেপ করতে হয় ভালো শিক্ষকের অভাবের জন্য। কিন্তু সংকটটা আসলে সময়ের। এক অস্থির, স্বার্থপর সময়ের কাছে শিক্ষক-ছাত্র সকলেই আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। কিন্তু তারপরেও শিক্ষকরাই পারেন তাঁদের কাজকে নিছক রুটিরুজির বাইরে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীর অন্তরসত্তার উন্মোচন ঘটাতে। যে নিজেকে মেলে ধরার অবকাশ খুঁজছে, যে প্রাণ জানার আগ্রহে আবিষ্কারের পথ খুঁজছে—একজন যথাযথ মাস্টারমশাই-ই হতে পারেন সেই আত্মবিকাশের সার্থক পুরোহিত। একটু ছক ভাঙার দুঃসাহস, তার থেকেও বেশি করে ভিতরের তাগিদ একজন শিক্ষকেরও নবপ্রতিষ্ঠা ঘটাতে পারে। আমরা চেনাজানা অভিজ্ঞতার বাইরে গিয়ে পেতে পারি এক নতুন মাস্টারমশাই।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment