সংস্কৃতি – পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা

সংস্কৃতি – পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা

প্রশ্ন : প্রদত্ত অনুচ্ছেদটিকে প্রস্তাবনা বা ভূমিকা স্বরূপ গ্রহণ করে বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে, পরিণতিদানের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা করো।

সংস্কৃতি

সংস্কৃতি জীবনের সঙ্গে জড়িত—সেইজন্য এর চরম রূপ কোনো-এক সময়ে চিরকালের জন্য বলে দেওয়া যেতে পারে না। জীবনের সঙ্গে সঙ্গে সভ্যতা আর সংস্কৃতিও গতিশীল ব্যাপার। ভারতের সভ্যতা এবং সংস্কৃতি যুগে যুগে নতুন নতুন ভাব-পরম্পরা আত্মসাৎ করবার চেষ্টা করেছে, সমর্থও হয়েছে। প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা আর সংস্কৃতি তার বিশিষ্ট রূপ পাবার পরে, এদেশে ইসলামি সংস্কৃতির আবির্ভাব হল। এই সংস্কৃতির মধ্যে যা সনাতন আর বিশ্বমানের গ্রহণযোগ্য, সেটা হচ্ছে এর অন্তর্গত সুফি দৃষ্টিকোণ, সুফি আধ্যাত্মিক অনুভূতি। এই জিনিসকে মধ্যযুগের ভারত সাদরে বরণ করে নিলে, এর মধ্যে সে অচেনাকে খুঁজে পেল। [নমুনা প্রশ্ন]

উত্তর:

সংস্কৃতি

ভারতবর্ষের সংস্কৃতির মূলকথাই হল এই সম্মিলন। একদা যে আর্যরা হিন্দুকুশ পর্বত ডিঙিয়ে এদেশে প্রবেশ করেছিল, কালক্রমে তারাই এদেশীয় সংস্কৃতির মূল ধারক হয়ে ওঠে। অস্ট্রিক-নর্ডিক দ্রাবিড়-ভোটচীনীয় একসঙ্গে মিলে তৈরি হয়েছে ভারত সংস্কৃতির অবয়ব। তাতে বিভিন্ন সময়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠা ঘটিয়েছে বিদেশাগত বিভিন্ন শক্তি। ইসলামীয় সংস্কৃতি পাঠান- মোগল এবং অন্যান্য রাজশক্তির সূত্রে এদেশে প্রবেশ করেছে। ‘মহামানবের সাগরতীর’ এই দেশ দু’হাত ভরে গ্রহণ করেছে ইসলামীয় স্থাপত্য, সংগীত, চিত্রকলা, এমনকি খাদ্যাভ্যাসকেও। যদি মুসলমান না আসত তাহলে এদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের এত বৈচিত্র্য হত না, তানসেনের মতো শিল্পীও আমরা পেতাম না। তাজমহলের মতো বিস্ময় বা কুতুবমিনারের মতো সম্পদও তৈরি হত না। বাংলাদেশের সাহিত্যের বিকাশে মুসলমান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা কোনোভাবেই ভোলা যায় না। ইসলামীয় সংস্কৃতির হাত ধরেই যে সুফি ধর্মভাবনার বিকাশ ঘটেছিল তা ভেঙে দিয়েছিল ধর্মীয় রক্ষণশীলতার ধারণা। এই পথেই এসেছিলেন চৈতন্যদেব কিংবা তৈরি হয়েছিল বাউল-ফকিরি ধারা। এ কথা হয়তো ঠিক যে, নিজের অবস্থানগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন জাতি বা ধর্মসম্প্রদায়ের মধ্যে বারবার সংঘাত হয়েছে। বহু রক্ত ঝরেছে। কিন্তু সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারে হাত মিলিয়েছে বিবদমান জাতিগুলিই। তবে ভারতীয় সংস্কৃতির ধারণক্ষমতার অনবদ্য প্রকাশ ঘটে ইংরেজদের আগমনের পরে। পাঠশালা-মক্তবের সীমা পেরিয়ে এ দেশের জাতিগুলি যেভাবে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেছে তা এদেশের উদার, মুক্ত চরিত্রের দিকেই ইঙ্গিত করে। কিন্তু পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং শিল্পবিপ্লবের সুফলগুলিকে আত্মস্থ করে নিলেও ভারতীয় সভ্যতা এবং সংস্কৃতি কোনোদিনই বৈদেশিক শক্তির কাছে নিজেদের বিক্রি করেনি। বরং এদেশের শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি যুগে যুগে অজস্র বৈদেশিক শক্তি আকর্ষণ অনুভব করেছে। ভারতীয় সংস্কৃতি তাই এক বহতা সমুদ্রের মতো, তার সঙ্গে মিলে যাওয়া বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন সংস্কৃতি যেন শাখানদী-উপনদীর মতো । তীরবর্তী মানবসমাজ সেই মহাসমুদ্রের জলে স্নাত হয়, ভারত-আত্মা সম্পূর্ণতা লাভ করে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, সংস্কৃতিকে গ্রহণ মানে সংস্কৃতির সমন্বয়। সমন্বয় না ঘটলে কী বিষময় পরিণতি লাভ করে তা দেখা গেছে উনিশ শতকের উন্মার্গগামী নাগরিক সমাজের উচ্ছৃঙ্খলতায়। যে সংস্কৃতিকেই গ্রহণ করা হোক না কেন তার বিকাশ ঘটা উচিত দেশীয় জলহাওয়ায়। যাকে আমরা ভারতীয় সংস্কৃতি বলি তা কোনোভাবেই তাই কোনো সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদকে নির্দেশ করে না। তাই বিচ্ছিন্নতা বা ধর্মীয় উগ্রতা যখন এ দেশের বুকে ডানা মেলতে চায়, তখন এ দেশের প্রাণধর্মই তাকে প্রতিরোধ করে। সংস্কৃতির বিশ্বজনীনতা আর নাগরিকের বিশ্বমানবতাকে অবলম্বন করেই এ দেশের ইতিহাসের সমৃদ্ধি।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!