অরণ্য, অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণ ও মানবজীবন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য, অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণ ও মানবজীবন

ভূমিকা:-

“অরণ্য পরম বন্ধু, পৃথিবীর প্রাণ, 
আকাশে বাতাসে ভাসে অরণ্যের গান।”

ভারতের প্রথম নভশ্চর ক্যাপটেন রাকেশ শর্মা মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বর্ণনা দিয়ে বলেছিলেন যে, নিকষ কালাে মহাকাশে পৃথিবীর মতাে এমন সুন্দর গ্রহ আর তিনি একটিও দেখতে পাচ্ছেন না। সবুজ রঙের স্নিগ্ধ আলােয় গ্রহটি উজ্জ্বল। এই শ্যামলিমার উৎস অরণ্যলালিত জীবজগৎ—পৃথিবীর সম্পদ। 

বন : প্রাণবৈচিত্র্য:- প্রকৃতি গড়ে উঠেছে উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরতা নিয়ে। উদ্ভিদজগতের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে প্রাণীজগৎ। প্রতিটি প্রাণের সঙ্গে উদ্ভিদের এক অচ্ছেদ্য বন্ধন। এই বন্ধন কোথাও খাদ্যের প্রয়ােজনে, কোথাও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্যে, কোথাও-বা জীবনধারণের তাগিদে। এই শৃঙ্খলকে পারিভাষিক শব্দে বলা হয় বাস্তুসংস্থান। কিন্তু এই বাস্তুসংস্থানে ফাটল ধরিয়েছে মানুষ। মানুষ তার বুদ্ধি আর প্রযুক্তি নিয়ে ক্রমশ হয়ে উঠেছে পৃথিবীর অধীশ্বর। মানুষের আগ্রাসী লােভের মুখে পৃথিবীর উদ্ভিদরাজ্য আজ প্রায় নিঃশেষিত। অনুরূপ বন্যপ্রাণীদের অনেকেই চলে গেছে বিলুপ্তির দেশে। মানুষের লােভের শিকার হয়েছে তারা। অনিয়ন্ত্রিত অরণ্য ধ্বংসের পরিণাম দেখা যাচ্ছে চারদিকে। এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবীতে যে বায়ােডাইভার্সিটি বা প্রাণবৈচিত্র্য রয়েছে, তা একদিন হয়ে যাবে নিঃশেষ।

হারিয়ে যাওয়া বন্যপ্রাণী:– পৃথিবীতে যে কত প্রাণের সম্পূর্ণ অবলুপ্তি ঘটেছে তার হিসাব নেই। প্রাগৈতিহাসিক যুগে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বিশাল সরীসৃপ ডাইনােসর, হাতির পূর্বসূরি ম্যামথ, স্যারর-টুথ টাইগার বা খাড়া-দাঁত বাঘ। এই শতকে মরিশাস দ্বীপ থেকে হারিয়ে গেছে ডােডাে নামে পাখি। আমেরিকার প্রেইরি বনভূমি থেকে হারিয়ে  গেছে বাইসন, মেরু অঞ্চল হারিয়েছে স্বর্ণশৃগাল।

মানুষ যখন ঘাতকের ভূমিকায়:-  বন্যপ্রাণী অবলুপ্তির প্রধান কারণ হল অরণ্যনিধন। মানুষ তার বিলাসব্যসন ও দৈনন্দিন প্রয়ােজনে অরণ্য সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে চলেছে। ভারতে ইংরেজশাসন প্রবর্তনের পর শুধুমাত্র রেললাইনের স্লিপারের জন্য ভারতের শতাব্দী-প্রাচীন বিশাল বৃক্ষগুলিকে যেভাবে কেটে ফেলা হয়েছে, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।

বনক্ষয় : বন্যপ্রাণীর লােপ:- বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখা মানুষের অন্যতম প্রয়ােজনীয় দায়িত্ব। কারণ তাদের এক একটি প্রজাতির অবলুপ্তি সর্বদাই মানুষের ক্ষতি ডেকে আনে। যেমন, বাঘ বিলুপ্ত হলে হরিণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। হরিণ বৃদ্ধি পেলে তারা অরণ্য নিঃশেষ করবে। তখন এই হরিণরাই অরণ্য-পাশ্ববর্তী কৃষিক্ষেত্রে ধ্বংসলীলা চালাবে। এজন্য পৃথিবীর বাস্ততন্ত্র রক্ষা করা জরুরি। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদের পাশাপাশি আরণ্যক প্রাণীর সুরক্ষা একান্ত প্রয়ােজন।।

মানবজীবন:-  এই পৃথিবীতে আমাদের এই মানবজীবন বিচ্ছিন্ন কোনাে সৃষ্টি নয়। অরণ্য, বন্যপ্রাণী এবং তার সঙ্গে জড়িত যে পরিবেশ, সেইসব নিয়েই পারস্পরিক নির্ভরতায় আমাদের মানবজীবন গঠিত। এদের ভিতর একটির বিনাশ হলে, অপরটিও গিয়ে দাঁড়াবে মৃত্যুর মুখােমুখি।

উপসংহার:-  বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ইদানীং গড়ে উঠেছে নানা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থা, যেমন—WWF বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড-লাইফ ফেডারেশন। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থার উদ্যোগে গড়ে উঠেছে সংরক্ষণ আন্দোলন। সুন্দরলাল বহুগুণা ও চিপকো আন্দোলন, মেধা পাটেকরের নির্মদা বাঁচাও আন্দোলন প্রভৃতি ভারতে অরাজনৈতিক সংরক্ষণ আন্দোলনের অন্যতম। আশার কথা এই যে, বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে নানা অভয়ারণ্য এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প। গুজরাটের গির অরণ্যের সিংহ-প্রকল্প, সুন্দরবনের বাঘ-কুমির প্রকল্প, আমাদের কাজিরাঙায় গন্ডার প্রকল্প—এসব প্রকল্পগুলি মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

আরো পড়ুন

গাছ আমাদের বন্ধু – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিশ্ব উষ্ণায়ন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি গাছ একটি প্রাণ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

নগরায়ণ বনাম সবুজায়ন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment