নগরায়ণ বনাম সবুজায়ন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

নগরায়ণ বনাম সবুজায়ন

ভূমিকা:  

“দেবে না ভালােবাসা, দেবে না আলাে !
সদাই মনে হয়—আঁধার ছায়াময় 
দিঘির সেই জল শীতল কালাে, 
তাহারি কোলে গিয়ে মরণ ভালাে।।”
—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  

এ বাসনা শুধু রবীন্দ্রনাথের নয়, আজকের যান্ত্রিক যুগের পরিশ্রান্ত। মানুষেরও প্রার্থনা শান্ত-সৌম্য প্রকৃতির কোলে শয্যা লাভের। সভ্যতার বিকাশ আধুনিক পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। এর ফলে মানুষের দরকার হয়ে পড়েছে বাসযােগ্য ভূমির। তাই মানুষ নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস করেছে, জলাশয় ভরাট করেছে, নিজ বাসভূমি তৈরির উদ্দেশ্যে। বর্তমান বিশ্বের ভয়াবহ জনবিস্ফোরণ প্রকৃতির সুস্থতাকে বিনষ্ট করেছে। সর্বত্রই চলেছে নগরায়ণের প্রস্তুতি। অবাধে সবুজ ধ্বংস করে গড়ে উঠছে পরিকল্পিত টাউনশিপ ও অট্টালিকা। পৃথিবী বড়াে ধূসর আজ। আকাশের রং কালাে। ধোঁয়ার আচ্ছাদনে মােড়া তার নীলাভ সুষমা।

নগরায়ণের কারণ : কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই প্রভৃতি শহরগুলি ছিল দেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষা ও বাণিজ্য কেন্দ্র। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়ােজনে এই শহরগুলি ছাড়াও গড়ে উঠেছে অনেক উপনগরী। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন বাসস্থান। ফলে শহরতলির ক্ষেত্র আজ বহুদূর প্রসারিত। কোথাও গাছপালা কেটে, আবার কোথাও জলাশয় বুজিয়ে গড়ে উঠেছে বিশাল অট্টালিকা। যুগের গতির সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে মানুষ প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে নষ্ট করছে। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে ভারতের বড়াে বড়াে শহর এবং শহরতলিতে গড়ে উঠেছে ফ্ল্যাটবাড়ি। বর্তমানে নগরায়ণে আক্রান্ত সবুজ। এর জন্য শুধু মানুষের অপরিমিত স্বার্থই দায়ী নয়, দায়ী যুগের চাহিদা এবং সর্বব্যাপী পরিবর্তনের মােহ।

সবুজ ধবংসের পরিণতি : অপরিকল্পিত নগরায়ণের গতি যত বাড়বে, দেশের সবুজ তত ধ্বংস হবে। পরিবেশ ভয়ংকরভাবে দূষিত হবে। আজকে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণও এই নগরায়ণ। সেই সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা সমভূমি আর কোথায়? কোথায় সেই সবুজের সমারােহ। চারিদিকেই শুধু ইট-কাঠ-পাথরের জঙ্গল। মানুষ নানা রােগব্যাধিতে আক্রান্ত। পারস্পরিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা, মূল্যবােধ আজ মানুষের বর্ণহীন মন থেকে অবসিত। নগরায়ণের ফলে বেড়েছে যানবাহন ও কলকারখানার সংখ্যা। ফলে শব্দ, বায়ু ও জল দূষিত হচ্ছে ক্রমাগত। মানুষ মুক্ত বাতাসের বদলে নাকে টানছে বিষাক্ত গ্যাস। ক্যানসারের মতাে দুরারােগ্য ব্যাধি বাসা বাঁধছে শরীরে। হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির মতাে মারণাত্মক রােগে মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এর হাত থেকে মানুরে মুক্তি নেই। পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সৌন্দর্য। রূপ-রস-গন্ধ ভরা পৃথিবী আজ যেন মলিন ও বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। 

উপসংহার : যুগের প্রয়ােজনে নগরায়ণ হয়তাে অবশ্যম্ভাবী; কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। যথেচ্ছভাবে সবুজ ধ্বংস করে নগরায়ণ চলবে না। এলাকাভিত্তিক বনসৃজন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কলকাতার মতাে বড়াে শহরে প্রতি এক কিলােমিটারে রাস্তার দু-ধারে যথেচ্ছ গাছ থাকা প্রয়ােজন। নচেৎ বায়ু ও শব্দ দূষণ রােধ করা যাবে না। নগরায়ণ হলেও, তা যেন সবুজকে ধ্বংস না করে। জলাশয় এবং গাছ বাচিয়ে এবং নতুন গাছ লাগিয়ে নগরায়ণকে দূষণমুক্ত করতে হবে। এজন্য সরকারি পদক্ষেপের সঙ্গে জনগণকেও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। তবেই মানুষের মনে টিকে থাকবে প্রাণবন্ত সবুজ ও সজীবতার রেশ।

আরো পড়ুন

একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশরক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

কোভিড-১৯ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment