পাঠক্রমের গতানুগতিক ধারণাটি ব্যাখ্যা করাে | গতানুগতিক পাঠক্রমের ত্রুটিগুলি লেখাে
উত্তর :
পাঠক্রমের গতানুগতিক ধারণা :
শিক্ষার সংকীর্ণ লক্ষ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত নির্দিষ্ট তত্ত্বগত, জ্ঞানমূলক, শিক্ষককেন্দ্রিক ধারণাকে পাঠক্রমের গতানুগতিক ধারণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই পাঠক্রমে শিক্ষক ও গ্রন্থই হল প্রধান l শিক্ষক আপন দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী কিছু তথ্য বা জ্ঞানমূলক বিষয় শিক্ষার্থীর ওপর চাপিয়ে দেন, শিক্ষার্থী সেগুলিকে কেবল মুখস্থ করার চেষ্টা করে, ফলে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ এখানে অবহেলিত হয়।
এই পাঠক্রমের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে উল্লেখ করা হল।
[1] শিক্ষার লক্ষ্য : গতানুগতিক পাঠক্রমের মূল লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়তা করা। এই ধরনের পাঠক্রমে শিক্ষার্থীকে অন্ধের মতাে কোনাে রকম প্রশ্ন ছাড়াই বিমূর্ত ধারণা গ্রহণ করতে হয়। সকল শিক্ষার্থীই একই ধরনের ধারণা লাভ করে।
[2] শিক্ষার্থীর বিকাশ : গতানুগতিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর জ্ঞানমূলক বিকাশের দিকটিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে অন্যদিকে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ অবহেলিত হয়।
[3] বৈচিত্র্যহীনতা : গতানুগতিক পাঠক্রমের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকে না বললেই চলে। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একঘেয়েমি দেখা দেয়। বাস্তবের সঙ্গে এই পাঠক্রমের তেমন কোনাে যােগ থাকে না। তাই এই পাঠক্রম থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা ভবিষ্যতের কর্মজীবনে খুব একটা কার্যকারী হয় না।
[4] শিক্ষার্থীর প্রতি অবহেলা : গতানুগতিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থী হল নিষ্ক্রিয় শ্রোতা। পাঠক্রমের এই ধারণায় শিক্ষার্থীর চাহিদা, আগ্রহ, প্রবণতা ইত্যাদি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে শিক্ষার্থীরা এই ধরনের পাঠক্রম থেকে খুব একটা উপকৃত হয় না।
[5] অপরিবর্তনীয় : গতানুগতিক পাঠক্রম পূর্বনির্ধারিত এবং অপরিবর্তনীয়। শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী এই পাঠক্রমে কোনাে পরিবর্তন ঘটানাে যায় না। ফলে বহু শিক্ষার্থীর কাছে এটি বােঝাস্বরুপ হয়ে দাঁড়ায়।
[6] বাস্তবসম্মত নয় : গতানুগতিক পাঠক্রমে এমন সব বিষয়। অন্তর্ভুক্ত থাকে যার সঙ্গে বাস্তবের কোনাে যােগ থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই পাঠক্রমে জীবনের ব্যাবহারিক দিককে উপেক্ষা করা হয়।
[7] সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি অবহেলিত : গতানুগতিক পাঠক্রমে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে পুরােপুরি অবহেলা করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশও অবহেলিত হয়।
[8] সহজ সংগঠন: গতানুগতিক পাঠক্রম যেহেতু কতকগুলি বিষয়ের বা তথ্যের সমন্বয়সাধন, তাই এতে শিক্ষার্থীরা অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সুযােগ পায়।
[9] সহজ পরিচালন : গতানুগতিক পাঠক্রমকে খুব সহজে পরিচালনা করা যায়।
[10] ডিগ্রি প্রদান : গতানুগতিক পাঠক্রমে অধ্যয়নের পর শিক্ষার্থীরা সফল হলে, ডিগ্রি লাভ করে। এই ডিগ্রি শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
গতানুগতিক পাঠক্রমের ত্রুটি :
গতানুগতিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে এর ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জানা যায়।
[1] শিক্ষার্থীরা নিষ্ক্রিয় শ্রোতা : শিক্ষায় প্রধান উপাদান হল শিক্ষার্থী। অথচ গতানুগতিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা থাকে নিষ্ক্রিয় শ্রোতার ভূমিকায়। ফলে তারা বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে পারে না।
[2] মনােবিজ্ঞানসম্মত নয় : গতানুগতিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর চাহিদা, সামর্থ্য, প্রবণতা, পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাই বলা যায়—এটি মনােবিজ্ঞানসম্মত নয়।
[3] অপরিবর্তনশীলতা: পাঠক্রমহওয়া উচিত পরিবর্তনশীল। কিন্তু গতানুগতিক পাঠক্রমে পূর্বনির্ধারিত ধারণা বা জ্ঞানকে বছরের-পর-বছর একইভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। সমাজের পক্ষে প্রয়ােজনীয় বিষয়গুলিকেও পাঠক্রমে সংযােজিত করা হয় না।
[4] পরীক্ষা নির্ভরতা : গতানুগতিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর যথাযথ বিকাশকে উপেক্ষা করে কেবল তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার দিকটিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
[5] একঘেয়ে পাঠক্রম : গতানুগতিক পাঠক্রমে বৈচিত্র্য না থাকায় এটি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়ের কাছেই একঘেয়ে লাগে।
[6] ব্যাবহারিক শিক্ষার অভাব : গতানুগতিক পাঠক্রমে
কেবল তত্ত্বগত জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ব্যাবহারিক শিক্ষার ওপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
[7] সামগ্রিক ধারণা গঠন ব্যাহত হয় : গতানুগতিক পাঠক্রমে বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং সেগুলি আলাদা আলাদাভাবে পড়ানাে হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান নির্মাণের ক্ষেত্রে সামগ্রিক ধারণা গড়ে উঠতে পারে না।
[8] জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন : গতানুগতিক শিক্ষার পাঠক্রমে যেসকল বিষয় বা তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেগুলির বেশিরভাগই অনাবশ্যক এবং বাস্তবজীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। তাই এই পাঠক্রম থেকে শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা লাভ করতে পারে না।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।