পরিবারের শিক্ষামূলক কাজগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে
অথবা, অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পরিবারের শিক্ষামূলক কার্যাবলি লেখাে।
অথবা, অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পরিবারের ভূমিকা আলােচনা করাে। Class 11 | Education (শিক্ষার বিভিন্ন রূপ) 8 Marks
উত্তর:
পরিবারের শিক্ষামূলক কাজ :
পরিবার হল সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও শক্তিশালী অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা মাধ্যম। মানবসমাজের উৎপত্তি থেকে আজ পর্যন্ত এই মাধ্যমটি শিশুর শিক্ষায় তার অপরিসীম গুরুত্ব বজায় রেখে চলছে। পরিবারের বিভিন্ন শিক্ষামূলক কাজগুলি নীচে আলােচনা করা হল
[1] আচার-আচরণের শিক্ষা : পরিবার শিশুকে বিভিন্ন ধরনের প্রাথমিক আচার-আচরণের শিক্ষাদান করে থাকে। পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে করতে শিশু একসময় প্রাথমিক আচার-আচরণগুলি আয়ত্ত করে ফেলে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কমেনিয়াস ‘মায়ের কোলকেই শিশুর প্রথম বিদ্যালয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
[2] সাংস্কৃতিক চেতনার শিক্ষা : একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন তাকে সামাজিক বা অসামাজিক কিছুই বলা যায় না। অথচ সমাজের একজন সদস্য হিসেবে তাকে নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে হয়। পরিবার তার সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ ঘটায়। পরিবারের মধ্যে থেকে বেড়ে ওঠার সময় শিশু বিভিন্ন আদবকায়দা, রীতিনীতি, কথাবার্তা, সৌজন্যমূলক আচরণ শিখে ফেলে। ফলে শিশুর মধ্যে সুস্থ সংস্কৃতির বােধ জাগ্রত হয়।
[3] সুঅভ্যাস গঠনের শিক্ষা : পরিবারের মধ্যে বেড়ে ওঠার সময় শিশু নানান ধরনের সুঅভ্যাসের অধিকারী হয়ে ওঠে। কথা বলা থেকে শুরু করে খাদ্যাভ্যাস, বিভিন্ন প্রকার নিয়মশৃঙ্খলা ইত্যাদি প্রয়ােজনীয় অভ্যাসগুলি, যেগুলি শিশুর চারিত্রিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য, সেগুলি শিশু পরিবারের
মধ্যে থেকেই আয়ত্ত করে।
[4] প্রাক্ষোভিক বিকাশের শিক্ষা : যে-কোনাে শিশুর ব্যক্তিসত্তার যথাযথ বিকাশের অন্যতম শর্ত হল যথাযথ প্রাক্ষোভিক বিকাশ। পরিবারের সদস্যদের থেকেই শিশু সংযত ক্ষোভিক আচরণ প্রকাশ করতে শেখে, যা তাকে সমাজে উন্নত মানের করে তােলে। একই সঙ্গে প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়াগুলির নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবর্তন করতেও শিশু সক্ষম হয়।
[5] বৃত্তিমূলক শিক্ষা : বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রেও পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে পারিবারিক বৃত্তিগ্রহণের প্রথা প্রচলিত ছিল। অনুকরণের মাধ্যমে শিশু অনেক সময় পারিবারিক বৃত্তিতে দক্ষতা অর্জন করত। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণের ফলে বৃত্তির মধ্যে বৈচিত্র্য এসেছে। কিন্তু বৃত্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পারিবারিক ঐতিহ্যের প্রভাব আজও আছে।
[6] জ্ঞানার্জনের শিক্ষা : পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গেলে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে হয়। পরিবার শিশুকে নানান ধরনের জ্ঞানের সাথে পরিচিত করে তােলে। মােটকথা শিশুর জ্ঞানার্জনের কাজ পরিবারেই আরম্ভ হয়।
[7] আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষা : শিশুর আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মূল্যবােধের বিকাশের কেন্দ্র হল পরিবার। পরিবারের অন্তর্গত বয়স্ক ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে শিশুদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান দান করে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন উদাহরণের সাহায্যে নৈতিকতার শিক্ষা শিশুদের কাছে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরেন। শিশুরা অনুকরণ ও অনুসরণের মাধ্যমে তা আয়ত্ত করে।
[8] ঐতিহ্যের সংরক্ষণের শিক্ষা : পরিবারের মধ্যেই শিশুর ঐতিহ্য সংরক্ষিত হয়। সমাজের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব রক্ষায়, এমনকি বংশানুক্রমিক ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রেও পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবার শিশুকে ওই শিক্ষাদান না-করলে, তারা পারিবারিক ঐতিহ্য সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে।
[9] ধর্মীয় শিক্ষা : পরিবারে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে শিশুর মধ্যে ধর্মীয় চেতনার বিকাশ ঘটে। কারণ শিশু পরিবারের বিভিন্ন সদস্য-সদস্যাদের সঙ্গে সামাজিক বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে তার ধর্মীয় বিশ্বাস আজও ব্যক্তিজীবনকে প্রভাবিত করে আর এই মৌলিক গঠনটি সে পরিবার থেকেই অর্জন করে থাকে।
[10] মূল্যবােধের শিক্ষা : শিশু বেড়ে ওঠার সাথে সাথে তার মধ্যে পারিবারিক সূত্রেই মূল্যবােধের বিকাশ ঘটে। সে পরিবারের পিতা-মাতা ও অন্যান্য বয়স্ক সদস্য-সদস্যাদের সংস্পর্শে এসে ভালােমন্দ, উচিত-অনুচিত বােধগুলি শেখে, যা তার চারিত্রিক বিকাশেও সহায়ক হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।