প্রত্যক্ষণ কী | প্রত্যক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে

প্রত্যক্ষণ কী | প্রত্যক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে

উত্তর :

প্রত্যক্ষণ :

পরিবেশের অবস্থাগত পরিবর্তন উদ্দীপক হিসেবে প্রাণীর মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। উদ্দীপনা জ্ঞানেন্দ্রিয় থেকে অন্তর্মুখী সেনসারি নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে সালিত হলে, তার মধ্যে একপ্রকার সংবেদন ঘটে। সেই সংবেদন যখন একটি নির্দিষ্ট অর্থ তুলে ধরে, তখন তাকে প্রত্যক্ষণ বলা হয়।

অল্পকথায় বললে, অর্থযুক্ত সংবেদন হল প্রত্যক্ষণ।

প্রত্যক্ষণের বৈশিষ্ট্য :

 মনােবিদরা প্রত্যক্ষণের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য-এর কথা বলেছেন। নীচে সেই বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হল— 

[1] সংবেদনভিত্তিক প্রক্রিয়া : প্রত্যক্ষণ হল একটি সংবেদনভিত্তিক প্রক্রিয়া। এটি সর্বদা সংবেদনের ওপর নির্ভরশীল। সংবেদন-এর মাধ্যমে কোনাে বস্তুর সঙ্গে সংযােগ ঘটলে, তবেই সেটির প্রত্যক্ষণ ঘটবে।

[2] অভিজ্ঞতাভিত্তিক প্রক্রিয়া : প্রত্যক্ষণের সঙ্গে অতীত অভিজ্ঞতার নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। কেননা অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই ব্যক্তি সংবেদনের অর্থ উপলব্দি করতে পারে।

[3] নির্বাচনধর্মিতা : প্রত্যক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল নির্বাচনধর্মিতা। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই অনেক বিষয়বস্তুর মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট একটি উদ্দীপককে ব্যক্তি বেছে নিতে পারে। এবং তাকে বিশ্লেষণ করতে সমর্থ হয়।

[4] ব্যক্তিভেদে আলাদা ; কোনাে বস্তুর প্রত্যক্ষণ সকল ব্যক্তির কাছে এক নাও হতে পারে। কারণ একই বস্তুর প্রত্যক্ষণ বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এটিই প্রত্যক্ষণের বৈশিষ্ট্য।

[5] সক্রিয়তাভিত্তিক প্রক্রিয়া: প্রত্যক্ষণের সময় সংবেদনলব্ধ অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ হয়। তাই প্রত্যক্ষণের সময় ব্যক্তির মন সক্রিয় থাকে। 

[6] জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়া : প্রত্যক্ষণ হল একটি জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার দ্বারা কোনাে বস্তু বা ঘটনার অস্তিত্ব সম্পর্কে ব্যক্তি অবগত হতে পারে।

[7] পুনরুৎপাদনমূলক প্রক্রিয়া : প্রত্যক্ষণ হল একটি পুনরুৎপাদনমূলক মানসিক প্রক্রিয়া। অতীতের প্রত্যক্ষণ এখনকার সংবেদনের অনুষঙ্গী হওয়ায় অভিজ্ঞতাটির পুনরুৎপাদন ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। 

[8] মনােযােগনির্ভর প্রক্রিয়া : মনােযােগের সঙ্গে প্রতক্ষণের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। কেননা মনােযােগ ছাড়া ব্যক্তি সংবেদনকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা যায় না।

[9] প্রত্যভিজ্ঞামূলক প্ৰক্ৰিয়া : প্রত্যভিজ্ঞার দ্বারা প্রত্যক্ষণ প্রভাবিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সংবেদন দ্বারা কোনাে বস্তু সম্পর্কে যখন প্রত্যক্ষণ ঘটে বা জ্ঞান লাভ হয়, তারপর প্রত্যভিজ্ঞার মাধ্যমে তা চেনা যায়।

[10] সুসংগঠিত প্রক্রিয়া : প্রত্যক্ষণ হল একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়া। যখন বস্তুর বিভিন্ন অংশ সংবেদনের দ্বারা আমাদের চেতনার হাজির হয়, তখন সেগুলি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে না-থেকে সুসংগঠিতভাবে দেখা দেয়, এর ফলে আমরা বস্তুটিকে প্রত্যক্ষণ করি। উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রত্যক্ষণ। একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞতার ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রক্রিয়ায় অতীত অভিজ্ঞতার সাথে নতুন সংবেদনের সংমিশ্রণ ঘটে। তাই অতীত অভিজ্ঞতার ব্যাপকতা ও বৈচিত্র্যের ওপর প্রত্যক্ষণ নির্ভরশীল।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment