প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা | প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা সমাধানের উপায়
অথবা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা দেখা যায়? ওই সমস্যা সমাধানের উপায় কী? 5 + 3
উত্তর:
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা :
আমাদের দেশের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসকল সমস্যা লক্ষ করা যায়, সেগুলি হল—
[1] সচেতনতার অভাব : আমাদের দেশের বহু মানুষ নিরক্ষর। তারা শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত নন। কিন্তু যাদের মধ্যে শিক্ষার আলাে রয়েছে তাদের মধ্যেও অনেকে মনে করেন এত ছােটো বয়সে শিশুর শিক্ষার কোনাে দরকার নেই। তাই তারা ছ-বছর বয়সে শিশুকে একেবারে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভরতির জন্য পাঠান।
[2] উপযুক্ত পরিকাঠামাের অভাব : প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিশুদের আকৃষ্ট করার জন্য যে-ধরনের বিদ্যালয় এবং শিক্ষার উপকরণ দরকার অধিকাংশ প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেই ধরনের পরিকাঠামাে থাকে না। শহরের প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুর খেলার জন্য উপযুক্ত কোনাে জায়গাও নেই।
[3] প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব : প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার পাঠদানের জন্য ঠিক যে ধরনের প্রশিক্ষণের দরকার হয় আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার সেই ধরনের প্রশিক্ষণ থাকে না। আমাদের দেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য সরকারিভাবে খুব বেশি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ব্যবস্থাও করা হয়নি।
[4] অর্থের অভাব : অর্থাভাবে আমাদের দেশে সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত উপযুক্ত সংখ্যক প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি। অধিকাংশ প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে।
[5] সুস্পষ্ট নীতির অভাব : আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সুস্পষ্ট নীতি ঘােষণা করা হয়নি। বেসরকারিভাবে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হওয়ায় এক-একটি বিদ্যালয়ে এক এক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
[6] শিক্ষা পর্ষদের অভাব : আমাদের দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক প্রভৃতি শিক্ষাক্রম পরিচালনার জন্য যেমন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ রয়েছে, তেমন কোনাে পর্ষদ প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য গঠন করা হয়নি। ফলে আমাদের দেশের প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা এখনও পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণহীন।
[7] বেসরকারি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যবসায়ী মনােভাব : বেসরকারি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাভজনক ব্যাবসা চালানােয় মেতে উঠেছে। তাদের মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন। ফলে শিশুর বিকাশ সেখানে গৌণ বিষয়।
[8] পাঠ্যপুস্তকের অভাব : প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্য উপযুক্ত মানের পাঠ্যপুস্তকের অভাব রয়েছে। যেহেতু এই স্তরের পাঠক্রম সুনির্দিষ্ট করার কোনাে পর্ষদ নেই, তাই সঠিকভাবে পাঠ্যপুস্তকও রচনা করা হয়নি।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা সমাধানের উপায় :
এখানে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা সমাধানের কয়েকটি উপায় আলােচনা করা হল—
[1] সচেতনতা বৃদ্ধি : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ও উৎকর্ষের জন্য সবার আগে দরকার এই শিক্ষার উপযােগিতা বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। শিশুর পিতামাতা সচেতন হলে এই শিক্ষায় প্রসার বাড়বে।
[2] সরকারি নীতি প্রণয়ন : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়ােজন সুস্পষ্ট সরকারি নীতি প্রণয়ন। এর জন্য একটি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ গঠন করা দরকার।
[3] শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা : প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য উপযুক্ত সংখ্যক প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলতে হবে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গাইডবুক এবং শিক্ষাপােকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
[4] শিশুদের উপযােগী শ্রেণিকক্ষ গঠন : প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিশুদের উপযােগী শ্রেণিকক্ষ স্থাপন করতে হবে। শ্রেণির মধ্যে প্রয়ােজনীয় বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা সহায়ক উপকরণ রাখতে হবে।
[5] গবেষণার ব্যবস্থা : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য গবেষণার ব্যবস্থা করতে হবে।
[6] আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশের জন্য প্রয়ােজনীয় অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।