প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামগুলি লেখো | কিণ্ডারগাঁর্টেন ও মন্তেসরি বিদ্যালয় সম্পর্কে আলোচনা করো

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামগুলি লেখো | কিণ্ডারগাঁর্টেন ও মন্তেসরি বিদ্যালয় সম্পর্কে আলোচনা করো
অথবা, বিভিন্ন প্রকার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম লেখাে। যে-কোনাে দুটির সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে। 2 + 3 + 3 

উত্তর:

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান :

প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাদানের জন্য আমাদের দেশে যে-ধরনের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেগুলি হল- (i) কিন্ডারগার্টেন, (ii) নার্সারি, (iii) মন্তেসরি, (iv) প্রাক্-বুনিয়াদি, (v) এক শিক্ষিকা বিদ্যালয়, (vi) বাল্যশিক্ষালয় ও (vii) প্রাথমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি।

এগুলি ছাড়াও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের জন্য শিশুকেন্দ্র, বাল বিদ্যাপীঠ, অঙ্গনওয়াড়ি, বালকুঞ্জ প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

কিন্ডারগার্টেন :

জার্মান শব্দ ‘কিন্ডারগার্টেন’-এর অর্থ হল ‘শিশু উদ্যান। এই প্রতিষ্ঠানে ছােটো ছােটো ফুলের মতাে শিশু শিক্ষক-শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে। এই ধরনের বিদ্যালয়ে ছড়া, গান, খেলাধুলা, উপহার ও কাজ-এর মাধ্যমে শিশুদের পাঠদান করা হয়। জার্মান শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল সর্বপ্রথম এই ধরনের বিদ্যালয়ের সূচনা করেন। কিন্ডারগার্টেন-এ মূলত উপহার (gift) এবং কাজ (occupation)-এর মাধ্যমে শিশুদের দর্শন ও স্পর্শেন্দ্রিয়কে সক্রিয় রাখার ব্যবস্থা করা হয়। শিশুদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য রঙিন ছবিওয়ালা বইয়ের ব্যবস্থা করা হয়। পঠনের পাশাপাশি শিখনের জন্য একাধিক বস্তু ব্যবহার করা হয়। এই শিক্ষায় অঙ্কন পদ্ধতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফ্রয়েবেলের মতে, অঙ্কনের মধ্য দিয়ে শিশুর সৃজনশীলতা এবং মনের ভাব প্রকাশ পায়। এই শিক্ষায় গণিত ও মাতৃভাষার ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়। নাচ-গানের মধ্য দিয়ে শিশুর নান্দনিকতার বিকাশ ঘটানাের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্ডারগার্টেন-এ ফ্রয়েবেল খেলা ও কাজের মাধ্যমে কায়িক শ্রমকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

মন্তেসরি বিদ্যালয়:

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাদাম মন্তেসরি প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের জন্য ক্যাসা দেই বাম্বিনি নামে এক বিশেষ ধরনের শিক্ষালয় স্থাপন করেন। ক্যাসা দেই বাম্বিনি’ কথাটির অর্থ হল “শিশুদের জন্য গৃহ’। মন্তেসরি বিদ্যালয়ে শিশুদের ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে শিশুদের ডাইড্যাকটিক অ্যাপারেটাস-এর মাধ্যমে পাঠদান করা হয়। | এই বিদ্যালয়ে সাধারণ জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত কিছু কাজকর্মে অনুশীলনের ব্যবস্থা করা হয়। শিশুদের ইন্দ্রিয়ের উৎকর্ষের জন্য প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ, বাগান করা, হাতের কাজ, লিখন, পঠন, গান গাওয়া প্রভৃতির ওপর বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়। এই বিদ্যালয়গুলিতে অনুসৃত শিক্ষা পদ্ধতিতে শিশুদের আত্ম সক্রিয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এই পদ্ধতিতে শিশুরা নানান ধরনের কাজে যুক্ত হয়ে সমস্যা সমাধানের সুযােগ পায়। এই জাতীয় শিক্ষায় শ্রেণিকক্ষে কোনাে শিক্ষার্থীর বসার জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকে না। শিশু বা শিক্ষার্থী আপন খেয়াল খুশি মতাে যে-কোনাে জায়গায় বসে শিক্ষার কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে শিশুদের জন্য কতকগুলি বস্তুগত উপাদান রাখা থাকে। শিশুরা সেগুলির সাহায্যে নিজেরাই নানান সমস্যার সমাধান করে। মন্তেসরি বিদ্যালয়ে অনুসৃত শিক্ষা পদ্ধতিতে শিশুদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়। যার ফলস্বরূপ শিশুরা ছােটো থেকেই আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment