সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ কীরূপ ছিল

প্রশ্ন – সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ কীরূপ ছিল ৮ Marks | Class 10 History

উত্তর:

ভূমিকা : বিশ শতকে জাতীয় আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণের দুটি ধারা ছিল, যথা— প্রথমত, শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এবং দ্বিতীয়ত, বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলন। বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলনের সময় ছাত্র-যুবদের মধ্যে সংগ্রামী বিপ্লববাদের আদর্শ প্রচারিত হয়। বিপ্লবী অরবিন্দ ঘােষ তরুণ ছাত্রসমাজকে বিপ্লববাদে দীক্ষিত করেন। বাংলার বিপ্লবীরা গুপ্তহত্যায় লিপ্ত হন।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন : ভারতের জাতীয় আন্দোলনে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণের উল্লেখযােগ্য দিকগুলি হল— 

১। কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টা : মজফফরপুরের অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করার চেষ্টার অপরাধে, প্রফুল্ল চাকিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তিনি নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদিরামও ধরা পড়েন ও ক্ষুদিরামের ফাসি হয়। এই দুই তরুণ ছাত্রের আত্মত্যাগ ভারতবাসীর মনে দেশপ্রেমের বন্যা বইয়ে দেয়। 

২। আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা : এই সময় আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯০৮ খ্রি.) বহু বিপ্লবীকে সারাজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র ছিল। 

৩। প্রাক্-আইন অমান্য পর্বে বিপ্লবী আন্দোলন : আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হওয়ার আগেই ছাত্রসমাজ সক্রিয় জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তাঁর দুজন ঘনিষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন বঙ্গবাসী কলেজের দুজন ছাত্র যতীন দাস ও প্রমোেদ ঘােষাল। যতীন দাস ছিলেন বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র সংসদের সভাপতি। প্রমােদ ঘােষাল ছিলেন সম্পাদক। যতীন দাস সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।

লাহাের ষড়যন্ত্র মামলা : পাঞ্জাবের বিপ্লবী ভগৎ সিং, লালা লাজপৎ রায়ের হত্যাকারী পুলিশ কমিশনার স্যান্ডার্সকে গুলি করেন (১৭ ডিসেম্বর, ১৯২৮ খ্রি.)। স্যান্ডার্সের হত্যার ফলে পুলিশ জনসাধারণের ওপর নির্যাতন চালায়। সরকারকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে ১৯২৯-এর ৮ এপ্রিল ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লির সংসদ ভবনে বােমা নিক্ষেপ করেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে এই বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে সরকার লাহাের ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করে। ধৃত বিপ্লবীদের বেশিরভাগই ছিলেন ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি।

৫। অলিন্দ যুদ্ধ : ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর বিনয় বসু, তার দুই বিপ্লবী বন্ধু বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্তের সঙ্গে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ প্রবেশ করেন। এরপর তারা কারা বিভাগের ইনস্পেকটর জেনারেলকে হত্যা করেন ও এক ইংরেজ কর্মচারীকে আহত করেন। এই ঘটনার সঙ্গেসঙ্গে ব্রিটিশ পুলিশ তিনজনকে ঘিরে ফেললে রাইটার্স বিল্ডিং-এর বারান্দা বা অলিন্দে অসম যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধ অলিন্দ যুদ্ধ নামে পরিচিত।

বীণা দাস : কলেজ ছাত্রী বীণা দাস (১৯১১-৮৬ খ্রি.) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময় সেনেট হলে গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার জন্য গুলি করেন (১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি)। জ্যাকসন অল্পের জন্য বেঁচে যান এবং জ্যাকসনকে হত্যা প্রচেষ্টার অভিযােগে বীণা দাসের নয় বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এভাবে বীণা দাস বিপ্লবীর মর্যাদা লাভ করেন। 

পর্যালােচনা : ছাত্রদের বৈপ্লবিক আন্দোলন সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে—

প্রথমত, বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন ছিল নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। বিপ্লবী নেতারা বিপ্লবকে সার্থক করতেই অল্পবয়সি ছাত্রদের ভাবাবেগ ব্যবহার করেছিল।

দ্বিতীয়ত, ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত বৈপ্লবিক আন্দোলন সমগ্র ছাত্রসমাজের উপর প্রভাব ফেলে নি। মূলত এই আন্দোলন ছিল শহরকেন্দ্রিক।।

ততীয়ত, ছাত্রদের বৈপ্লবিক আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না; তা ছিল নির্দেশিত ও যুব নেতাদের দ্বারা আরােপিত। এ কারণেই ছাত্রদের বৈপ্লবিক আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনকে পরিপষ্ট করলেও সমাজে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

3 thoughts on “সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ কীরূপ ছিল”

  1. আরেকটু সহজ হলে খুব ভালো হতো স্যার। স্যার এর মধ্যে একটা উপসংহার দিলে আরো ভালো হতো। তাছাড়া সব ঠিক আছে স্যার। আমি ইতিহাসের আট নাম্বার হিসেবে এটাই মাধ্যমিকের করে যাব কমন পাবো তো স্যার। যদি কমন পায় তাহলে আমি ইতিহাসে আশা করছি ভালো নাম্বার তুলতে পারবো।

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!