স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা কী ছিল? সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনকে সূর্য সেনের অবদান লেখাে

প্রশ্ন – স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা কী ছিল? সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনকে সূর্য সেনের অবদান লেখাে। ৩+৫=৮ | Class 10

উত্তর:
প্রথম অংশ : ছাত্রদের ভূমিকা : বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিক হল— 

১। বয়কট আদর্শ প্রচার : বিদেশি দ্রব্যসামগ্রী ও স্কুল-কলেজ বর্জন করে বাংলার ছাত্ররা বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলনের অন্যতম আদর্শ বয়কট’ বা বিদেশি দ্রব্য ও আদর্শ বর্জনের প্রচার ও প্রসারে এবং জনমত গঠনে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। 

২। সভাসমিতি : বঙ্গভঙ্গকালে ছাত্ররা বিভিন্ন সভাসমিতিতে যােগদান করে। এ প্রসঙ্গে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ও ১৮ জুলাই রিপন কলেজের ছাত্র সমাবেশ এবং ৩১ জুলাই কলকাতার সব কলেজগুলির ছাত্র সমাবেশের কথা বলা যায়।।

৩। স্বদেশি দ্রব্য বিক্রয় : স্বদেশি আদর্শ প্রচারের পাশাপাশি ছাত্ররা বাংলার বিভিন্ন স্থানে ৭৫টি শাখার মাধ্যমে দেশীয় পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করত এবং বিদেশি দ্রব্যের দোকানের সামনে পিকেটিং করত।

৪। অ্যান্টি সার্কুলার সােসাইটি : বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলন থেকে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের দূরে রাখতে কার্লাইল সার্কুলার (১০ অক্টোবর, ১৯০৫ খ্রি.), পেডলার সার্কুলার (২১ অক্টোবর, ১৯০৫ খ্রি.), লিয়ন সার্কুলার (১৬ অক্টোবর, ১৯০৫ খ্রি.) জারি করা হলে তার প্রতিবাদে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ‘অ্যান্টি সার্কুলার সােসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন (৪ নভেম্বর, ১৯০৫ খ্রি.)। এই সমিতির প্রধান লক্ষ্য ছিল শাস্তিপ্রাপ্ত ও বহিষ্কৃত ছাত্রদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। 

মূল্যায়ন : বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলনে ছাত্রদের যােগদান ছিল বাংলাকেন্দ্রিক। বাংলার বাইরের ছাত্ররা এই আন্দোলনে যােগ দেয়নি। রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এই আন্দোলনকালে ছাত্ররা ‘স্বনিয়ােজিত প্রচারক’-এর ভূমিকা পালন করেছিল।

দ্বিতীয় অংশ, সূর্য সেনের অবদান : বাংলা তথা ভারতের বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ছিলেন চট্টগ্রাম বিদ্রোহের মুখ্য নায়ক ‘মাস্টারদা সূর্য সেন। আইন অমান্য। আন্দোলনের সময় সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনা সমগ্র ভারতবর্ষে আলােড়ন সৃষ্টি করেছিল। 

স্মরণের কারণ : মাস্টারদা সূর্য সেন যে-সমস্ত কারণে বিখ্যাত ছিলেন সেগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—

১। বিপ্লবী সংগঠন স্থাপন : চট্টগ্রামের শিক্ষক সূর্য সেন তার ছাত্র ও সহযােগীদের নিয়ে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’ নামে একটি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তােলেন। 

২। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন : ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল। মধ্যরাত্রে অম্বিকা চক্রবর্তী, লােকনাথ বল, গণেশ ঘােষ, অনন্ত। সিংহ প্রমুখ সঙ্গীকে নিয়ে সূর্য সেন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ ও লুঠ করেন। 

৩। স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা : তারা টেলিফোন, টেলিগ্রাফের তার বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামে একটি স্বাধীন বিপ্লবী সরকার’-এর প্রতিষ্ঠা করেন।। 

৪। বিচার ও ফাঁসি : নব প্রতিষ্ঠিত এই সরকার সাময়িকভাবে চট্টগ্রামের ওপর নিজেদের আধিপত্য রাখলেও অবশেষে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর পালটা আক্রমণে বিপ্লবীদের পরাজয় ঘটে এবং সূর্য সেন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। বিচারে সূর্য সেনের ফাঁসি হয় (১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪ খ্রি.)।

উপসংহার : চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে যুক্ত জালালাবাদ—চট্টগ্রামের যুদ্ধকে ঐতিহাসিকরা ইংরেজদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের প্রথম দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!