শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রেষণার ভূমিকা আলোচনা করো ? প্রেষণা বৃদ্ধিতে শিক্ষকের ভূমিকা কি কি ?

শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রেষণার ভূমিকা আলোচনা করো ? প্রেষণা বৃদ্ধিতে শিক্ষকের ভূমিকা কি কি ?

উত্তর:-

সংজ্ঞা: কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যাক্তি যে আন্তরিক তাগিদ অনুভব করে তাকে বলে প্রেষণা। প্রকৃতপক্ষে কোন কাজ করার জন্য যে উদ্যম এর প্রয়ােজন, সেই উদ্যমটি হলাে প্রেষণা৷

মনােবিদ ম্যাগগিয়ক (MC Geoch) এর মতে: প্রেষণা হলাে এমন একটি মানসিক অবস্থা যার মাধ্যমে ব্যক্তি কোন উদ্দেশ্য মুখি কাজের জন্য একটি তীব্র আন্তরিক তাগিদ অনুভব করে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সেই উদ্দেশ্যে উপনীত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ওই অনুভূতি বর্তমান থাকে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রেষণার ভূমিকা: 

1.প্রেষণা শিক্ষার্থীর আন্তরিক আগ্রহকে জাগ্রত করে তােলে ফলে শিক্ষার্থীর যেকোনাে কর্মে আগ্রহী হয়ে ওঠে। 

2. প্রেষণা শিক্ষার্থীকে শিক্ষার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে। একটি লক্ষ্য পূরণ হলে পরবর্তী লক্ষ্য পূরণে আরাে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

3. প্রেষণার ফলে শিক্ষার্থীর বিষয়বস্তুর প্রতি মনােযােগ বৃদ্ধি পায়। ফলে সেই বিষয়ে জ্ঞান অনেক নিখুঁত ও ভালাে হয়।

4. প্রেষণা শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট গতিপথ নির্ণয়ে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করে। 

5. প্রেষণা কৌতুহল তৈরি করে। এর ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন বিষয়ের জ্ঞানের বৃদ্ধি ঘটায়। 

8. প্রেষণা শিক্ষার্থীর দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে আত্মবিশ্বাসী করে তােলে৷ 

7. প্রেষণা শিক্ষার্থীর মধ্যে পঠনের অভ্যাস তৈরি করে যা তার বিষয়জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

8. প্রেষণা শিখনকে জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে তার ভবিষ্যৎ জীবন আদর্শ গঠন করে।

প্রেষণা বৃদ্ধিতে শিক্ষকের ভূমিকা:

শিখন প্রক্রিয়া সাফল্যের মূলকেন্দ্র হলাে প্রেষণা। প্রেষণা ছাড়া কার্যকরী ও অর্থপূর্ণ শিখন সম্ভব নয়। যেহেতু শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের স্থান সর্বোচ্চ, তাই শিক্ষার্থীর প্রেষণা বৃদ্ধিতে শিক্ষকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

1. পুরস্কার ও শাস্তি: পুরস্কার যেমন একদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ জাগায় অপরদিকে শাস্তি শিক্ষার্থীর মনে ভয় সৃষ্টি করে। তাই শিক্ষককে খুব সতর্কভাবে শ্রেণিকক্ষ পরিচালনা করতে হবে।

2. প্রতিযােগিতা ও সহযােগিতা: প্রতিযােগিতা শিক্ষার্থীর নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়ােগে উৎসাহিত করে। আর সহযােগিতামূলক কাজে কর্মক্ষমতা বাড়ে। তাই শিখনের ক্ষেত্রে প্রেষণার প্রদানে শিক্ষক এই দুই কৌশল বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে প্রয়ােগ করবেন।

3. আশা-আকাঙ্ক্ষা: বিভিন্ন শিক্ষার্থীর আশা-আকাঙ্ক্ষা বিভিন্ন রকম। শিক্ষার্থীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতার মাধ্যমে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবার কাজটি শিক্ষকের৷

4. প্রশংসা ও নিন্দা: নিন্দার থেকে প্রশংসায় প্রেষণা বেশি সৃষ্টি হয় তাই শিক্ষক সর্বদাই হাস্য উজ্জ্বল মুখ, প্রশংসনীয় কথাবার্তা শিক্ষার্থীর সাথে করবেন।

5. অভিনবত্ব: শিক্ষার্থীরা সর্বদাই নতুন বিষয়ের প্রতি সর্বদাই আকৃষ্ট হয়। তাই শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে প্রেষণা সৃষ্টি করতে সর্বদাই অভিনবত্ব রাখবেন।

6. লক্ষ্য স্থিরকরন: শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি করতে শিক্ষণ এর পূর্বে পাঠ্য বিষয় সম্পর্কে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ধারণা দেবেন শিক্ষক।

শিক্ষকের সামগ্রিক ব্যক্তিত্বই শিক্ষাকার্য পরিচালনার মূল চাবিকাঠি। শিক্ষণ পদ্ধতি, শ্রেণীর শৃঙ্খলা রক্ষার পদ্ধতি, সহানুভূতি, ভালােবাসা, সমস্যা সমাধান এ সবই শ্রেণিকক্ষে প্রেষণা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment