শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের সাথে মনােবিজ্ঞানের পার্থক্য লেখাে।
উত্তর:
শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের সাথে মনােবিজ্ঞানের পার্থক্য
বিষয় | শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান | মনােবিজ্ঞান |
উৎস | এটি মনােবিদ্যার একটি প্রয়ােগমূলক শাখা | এটি জ্ঞানের একটি শাখা এটি শুদ্ধ বিজ্ঞান। |
পরিধি | এর পরিধি তুলনামূলকভাবে ছোট কারণ এটি কেবলমাত্র শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। | এর পরিধি অনেক বড়াে বা বিস্তৃত |
প্রকৃতি | এটি একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। | এটি একটি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান। |
উদ্দেশ্য | মনােবিজ্ঞানের সূত্র ব্যবহারে দ্বারা শিক্ষা প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটানাে। | মানসিক প্রক্রিয়ার ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে। বিভিন্ন সূত্র আবিষ্কার করা। |
কাজ | মানুষের শিক্ষাকালীন আচরণ পর্যবেক্ষণ ও অনুশীলন। | মানুষের যাবতীয় আচরণ পর্যবেক্ষণ ও অনুশীলন। |
শিক্ষকের মধ্যে মনােবিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রয়ােজনীয়তা :
একজন শিক্ষকের যে কারণগুলির জন্য মনােবিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা অপরিহার্য, তা এখানে উল্লেখ করা হল —
[1] শিশু মনের প্রকৃতি অনুসন্ধান : আধুনিক শিক্ষা হল শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা। শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার মূল বিষয় হল শিশুর চাহিদা, রুচি, আগ্রহ, প্রবণতা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এই কাজটি সহজভাবে এবং সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য শিশু মনের প্রকৃতি জানা প্রয়ােজন। মনােবিজ্ঞানের জ্ঞান থেকে শিক্ষক শিশু মনের প্রকৃতি জানতে পারেন।
[2] বিকাশমূলক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞানার্জন : শিশুর জীবন বিকাশে অনেকগুলি পর্যায় লক্ষ করা যায়। এক-একটি পর্যায়ে শিশুর বৈশিষ্ট্য, চাহিদা এবং আগ্রহ এক-এক ধরনের হয়। বিকাশমূলক মনােবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে শিক্ষক এগুলি জানতে পারেন।
[3] পাঠদান কৌশল আয়ত্তকরণ : শিক্ষকের মুল কাজ। হল পাঠক্রম পরিচালনা করা। পাঠক্রমের অন্তর্গত বিভিন্ন জটিল। বিষয়কে ছাত্রছাত্রীর সামনে সহজ-সরলভাবে তুলে ধরার জন্য শিক্ষকের বিভিন্ন ধরনের কৌশল সম্পর্কে জ্ঞানার্জন প্রয়ােজন। হয়। শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান থেকে শিক্ষক বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণ। কৌশল বা পাঠদান কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা। লাভের সুযােগ পান।
[4] বিদ্যালয়ের কার্যাবলি পরিচালনা : বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির জন্য সময়তালিকা প্রস্তুতি, সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনা, সংশােধনমূলক শিক্ষণ, শিক্ষা নির্দেশনা । প্রভৃতি কার্যাবলি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের মনােবিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান অপরিহার্য।
[5] ব্যতিক্রমী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা : বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের ছাত্রছাত্রী পঠনপাঠনের জন্য আসে। কোনাে শিক্ষার্থী স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন হয়, আবার কেউ কেউ উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন বা ক্ষীণ বুদ্ধির অধিকারী হয়, আবার এমন অনেক ছাত্রছাত্রী পাওয়া যায়, যারা পিছিয়ে পড়া গােষ্ঠীর। এইসব ধরনের ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে একসঙ্গে পাঠদানের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকার মনােবিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রয়ােজন হয়।
[6] পরিমাপ ও মূল্যায়নে দক্ষতা অর্জনে : শিক্ষাদান। কাজ পূর্ণতা পায় শিক্ষা পরিমাপের মধ্য দিয়ে। শিক্ষাক্ষেত্রে পরিমাপ সঠিকভাবে করা যায় না। তাই আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানীরা মূল্যায়নের কথা বলেন। ফর্মেটিভ এবং সাম্মেটিভ মূল্যায়নের ওপর এখন অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। আধুনিক মূল্যায়ন সম্পর্কে সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হলে, প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকার শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রয়ােজন হয়। উপসংহারে এই কথাটি উল্লেখ করা যায়, বর্তমানে সারাবিশ্বে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান বিষয়ে ব্যাপক গবেষণার ফলে শিক্ষার নতুন নতুন বহু দিক উন্মােচিত হচ্ছে। আর এই দিকগুলি মূলত মনােবিজ্ঞানভিত্তিক। সেই কারণে বর্তমান প্রজন্মের প্রতিটি শিক্ষককে বিভিন্ন সময়ে মনােবিজ্ঞানের সহায়তা গ্রহণ করতে হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।