শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের ভূমিকা লেখাে | এর কুফল বা ত্রুটিগুলি উল্লেখ করাে

শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের ভূমিকা লেখাে | এর কুফল বা ত্রুটিগুলি উল্লেখ করাে Class 11 | Education (শিক্ষার বিভিন্ন রূপ) 8 Marks

উত্তর:

শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের ভূমিকা : 

চলচ্চিত্র হল গণসংযােগের একটি জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী মাধ্যম। শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হলেও এটি মূলত চিত্তবিনােদনের কাজ করে। তবে এ কথাও সত্য যে, চলচ্চিত্রের শিক্ষাগত প্রয়ােজনীয়তাকে উপেক্ষা করাও যায় না। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের ভূমিকা নীচে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল : 

[1] বাস্তবধর্মী তথ্য পরিবেশন : প্রতিটি চলচ্চিত্রই বাস্তবধর্মী সমস্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। তাই চলচ্চিত্র দেখে শিক্ষার্থীরা বাস্তবধর্মী অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযােগ পায়। তা ছাড়া বহু জটিল তথ্যও চলচ্চিত্রের আঙ্গিকে অনেক সহজ হয়ে ধরা পড়ে। 

[2] জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা : নানান ধরনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে চলচ্চিত্র প্রস্তুত হয়। ফলে চলচ্চিত্র থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভের সুযােগ পায়।

[3] সামাজিক চেতনাবিকাশে সহায়তা : চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে। ব্যক্তির চিন্তাধারার বিকাশ ঘটায়। যাবতীয় অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সচেতন হয়।

[4] মনােভাব গঠনে সহায়তা : চলচ্চিত্র ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনাে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে মনােভাব গঠনে সহায়তা করে। চলচ্চিত্রের প্রভাবে ব্যক্তিদের মানসিক প্রবণতার মধ্যেও পরিবর্তন আসে। এই প্রবণতাগুলি সময়ের সাপেক্ষে স্থায়ী সংগঠনে পরিবর্তিত হয়। আর এর ফলেই তাদের ব্যক্তিসত্তা গড়ে ওঠে যা পরবর্তীকালে সামাজিক মনােভাব গড়ে তুলতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।

[5] চিত্তবিনােদনে সহায়তা : চলচ্চিত্রের শিক্ষামূলক এবং চিত্তবিনােদনমূলক প্রভাবের জন্য শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই এই মাধ্যমের দ্বারা প্রভাবিত হয়। চলচ্চিত্র মানুষের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি আনন্দ বিতরণ করতে পারে, অন্য কোনাে মাধ্যমের পক্ষে তা সম্ভব নয়। এই আনন্দ অনেক ক্ষেত্রে পঠনপাঠনে সঞ্চালিত হয়ে শিক্ষার্থীর শিখনমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। 

[6] মূল্যবােধ গঠনে সহায়তা : শিক্ষাধর্মী চলচ্চিত্রগুলি অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টান্তগুলিকে এমনভাবে ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরে যে, তার দ্বারা খুব সহজেই তারা তাদের পুরােনাে ধ্যানধারণা ও মূল্যবােধগুলির পরিবর্তন ও পরিবর্ধনে উৎসাহিত হয়। এমনকি বহু চলচ্চিত্র নতুন মূল্যবােধ গঠনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

[7] চাহিদা পূরণে সহায়তা : ব্যক্তির বা শিক্ষার্থীর বিভিন্ন ধরনের চাহিদা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পূরণ হয়। এমনকি বহু মানসিক রােগের নিরাময়ে চলচ্চিত্র সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যারা পড়তে পারে না, অথচ কোনাে বিষয় জানতে চায়, তাদের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র ওই বিষয়গুলাের জ্ঞানদানের ব্যবস্থা করে ব্যক্তির চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। 

[8] সব ধরনের মানুষের কাছে গ্রহণযােগ্য : চলচ্চিত্র শিক্ষিত এবং নিরক্ষর—সব ধরনের মানুষের কাছে গ্রহণযােগ্য একটি মাধ্যম। নিরক্ষর মানুষও চলচ্চিত্র দেখে অনেক কিছু বিষয় বুঝতে পারে। 

[9] জনমত গঠনে সহায়ক : চলচ্চিত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই প্রতিক্রিয়া জনমত গঠনেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

[10] মানবিক সম্পর্কের ওপর গুরত্বদান : চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানবজীবনের বিভিন্ন ঘটনা ও অভিজ্ঞতা জনগণের কাছে তুলে ধরা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা বা দর্শকরা মানবিক সম্পর্কের নানান দিক সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযােগ লাভ করে।

চলচ্চিত্রের কুফল বা ত্রুটি : 

শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এর বেশ কিছু কুফল বা ত্রুটি লক্ষ করা যায়। এখানে কয়েকটি ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা সংক্ষেপে আলােচনা করা হল। 

[1] কুপ্রভাব গঠনের মাধ্যম : গণশিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি বহু চলচ্চিত্র বিকৃত রুচি সৃষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। অনেক সময় চলচ্চিত্রের কুরুচিকর দৃশ্যের প্রভাবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিকৃত রুচি গড়ে ওঠে। 

[2] কুঅভ্যাস গঠনে সহায়ক : চলচ্চিত্রে অনেক সময় ধূমপান, মদ্যপান প্রভৃতি দৃশ্যগুলি প্রদর্শিত হয়। বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েরা এগুলি দেখে নকল করতে আগ্রহী হয়। পরবর্তী কালে তাদের মধ্যে এই অভ্যাসগুলি থেকে যায়। সেদিক থেকে বলা যায়, চলচ্চিত্র সুঅভ্যাসের পাশাপাশি কুঅভ্যাস গঠনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

[3] ভুল ধারণা গঠনের মাধ্যম : বহু চলচ্চিত্র নির্মাতা চলচ্চিত্রকে জনপ্রিয় করার জন্য অসত্য, অবাস্তব এবং ভ্রান্ত ধারণাকে চলচ্চিত্রে প্রয়ােগ করেন। দর্শকরা বা ছাত্রছাত্রীরা সেগুলি দেখে সাময়িক আনন্দ পায় বটে, কিন্তু তাদের মধ্যে বাস্তব সম্পর্কে বহু ভ্রান্ত বা ভুল ধারণা গড়ে ওঠে। 

[4] অর্থ উপার্জনের মাধ্যম : অধিকাংশ চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ব্যাবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অর্থাৎ অর্থ উপার্জনের প্রতি লক্ষ রেখে। এতে চলচ্চিত্রের শিক্ষামূলক দিক, সমাজ বিকাশের দিক প্রভৃতি উপেক্ষিত হয়, সংস্কৃতি এবং মূল্যবােধের মতাে বিষয়গুলি বিপর্যস্ত হয়। 

[5] ব্যয়বহুল : চলচ্চিত্র দেখতে গেলে ব্যক্তিকে ভালাে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়। দরিদ্র মানুষের পক্ষে এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে চলচ্চিত্র দেখা সম্ভব হয় না। তাই আর্থিক কারণেও খুব অল্পসংখ্যক মানুষ চলচ্চিত্র থেকে শিক্ষাগ্রহণের সুযােগ পায়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের ভূমিকা লেখাে | এর কুফল বা ত্রুটিগুলি উল্লেখ করাে”

Leave a Comment