শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
উত্তর:
শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম
শিক্ষাদান আর শিক্ষাগ্রহণ শুধু বিদ্যালয়ের চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বহুকাল আগে যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির তেমন অগ্রগতি হয়নি, যখন মানুষ শক্তিশালী গণমাধ্যমের কথা ভাবতেও পারত না, তখনও কিন্তু পুথি আর পাঠশালার বাইরে শিক্ষা প্রসারের কিছু কিছু আয়ােজন ছিল। লােকগাথা, ব্রতকথা, যাত্রা, কথকতা প্রভৃতির মাধ্যমে সেই যুগে মানুষ নানা ধরনের শিক্ষালাভ করত। তবে তার বিস্তার ছিল খুবই সীমিত। ধীরে ধীরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি ও নানান আবিষ্কারের সুত্রে মানুষের জীবনে এল নানান আধুনিক গণমাধ্যম। আর সেইসব গণমাধ্যম ক্রমশ শিক্ষাবিস্তারের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হয়ে উঠতে লাগল।
আধুনিক মানুষের হাতের কাছে আজ বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম রয়েছে। সেগুলির মধ্যে প্রথমেই যার কথা মনে আসে, সেটি হল সংবাদপত্র। তারপরেই উল্লেখ করতে হয় বেতারের কথা। চলচ্চিত্রও একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। তবে একালের সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য গণমাধ্যম হল দূরদর্শন। এইসব গণমাধ্যমগুলি একদিকে যেমন মনােরঞ্জনে তৎপর, তেমনই অন্যদিকে শিক্ষাবিস্তারেও সহায়ক।
সংবাদপত্র স্বদেশ এবং বিদেশের নানান সংবাদ নিয়ে নিয়মিত আমাদের সামনে হাজির হয়। পৃথিবীর নানান প্রান্তের নানান খবরাখবরে আমাদের মনের পরিধি বিস্তৃত হয়, সমৃদ্ধ হয় আমাদের জ্ঞানভাণ্ডার। সংবাদপত্র শুধু সংবাদ পরিবেশন করে না, সংবাদের পাশাপাশি সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান প্রভৃতি নানা বিষয়ের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। বিভিন্ন জীবিকার মানুষের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানাের পাশাপাশি শিক্ষার বিস্তারেও সংবাদপত্র অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
বেতারযন্ত্রের আবিষ্কার বহু মানুষকে একসুত্রে বেঁধে দিতে সক্ষম হয়েছে। বেতারের মাধ্যমে একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ একই অনুষ্ঠান শুনতে পায়। শুধু তাই নয়, বেতার-সম্প্রচার শুতিনির্ভর হওয়ায় নিরক্ষর মানুষও অন্যের সহায়তা ছাড়াই সরাসরি বেতারের যে-কোনাে অনুষ্ঠান উপভােগ করতে পারে। বেতারে মনােরঞ্জনের ব্যবস্থা যেমন থাকে, তেমনি থাকে নানা। ধরনের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানও। শিক্ষাপ্রসারের ক্ষেত্রে বেতারের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে।
শিক্ষাবিস্তারে সবাক এবং নির্বাক চলচ্চিত্রের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। নানারকম কাহিনি চিত্র, তথ্যমূলক চিত্র, নিউজ রিল প্রভৃতি পরিবেশনের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে এটিও একটি উল্লেখযােগ্য মাধ্যম।
বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য গণমাধ্যম হল দুরদর্শন। মনােরঞ্জনের ক্ষেত্রে যেমন এর জুড়ি নেই, তেমনই শিক্ষাপ্রসারের ক্ষেত্রেও এর দোসর মেলা ভার। দূরদর্শনের মাধ্যমে প্রথাগত এবং প্রথাবহির্ভূত উভয় ধরনের শিক্ষাই দেওয়া যেতে পারে। ক্লাসরুম একজন শিক্ষক যেভাবে শিক্ষা দেন, দূরদর্শনের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থাটিও অনায়াসে করা যায়। বহু মানুষ একই সঙ্গে দেখার ও শােনার সুযােগ পায় বলে দূরদর্শনের যে-কোনাে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান যথার্থই গণশিক্ষা বিস্তারে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।
আজ আমাদের চারপাশে যে সমস্ত গণমাধ্যমগুলি রয়েছে সেগুলি শিক্ষাপ্রসারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনােযােগী। তবু বলা যায়, সংবাদপত্র, বেতার, চলচ্চিত্র এবং দুরদর্শনের মতাে গণমাধ্যমগুলি যদি শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে আরও বেশি দায়িত্বশীল হয়, যদি আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানগুলিকে, তাহলে তা শিক্ষাবিস্তারে যুগান্তর এনে দিতে পারে। গণমাধ্যমগুলির কাছে আমরা আজ সেই প্রত্যাশাই করব।
আরো পড়ুন
হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
সর্বশিক্ষা অভিযান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞানসাধনায় ভারত – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
অবকাশযাপন | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ভারতের জাতীয় সংহতি | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।