শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সামাজিক বিকাশ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক বিকাশের লক্ষ্যটি আলােচনা করাে।
অথবা, শিক্ষার লক্ষ্য সামাজিক বিকাশ’–এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে। Class 11 | শিক্ষার ধারণা ও লক্ষ্য (Education) 8 Marks
উত্তর:
শিক্ষার লক্ষ্য–সামাজিক বিকাশ : মানুষ সামাজিক জীব। নিজেদের প্রয়ােজনের তাগিদেই মানুষ সমাজ সৃষ্টি করেছে। সমাজ ছাড়া ব্যক্তির অস্তিত্বকে কল্পনা করা যায় না। ব্যক্তির সব ধরনের নিরাপত্তা সমাজের নিরাপত্তার ওপর নির্ভরশীল। ব্যক্তির আশা-আকাঙ্ক্ষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মবােধ, নীতিবােধ ইত্যাদি সবই সমাজের মধ্যে গড়ে ওঠে। তাই সমাজের সঙ্গে ব্যক্তির নিবিড় সম্পর্ক বর্তমান। ব্যক্তিজীবন সমাজের পরিব্যাপ্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং সমাজের জন্য তা নিবেদিত। ব্যক্তি সমাজের জন্য, সমাজ ব্যক্তির জন্য নয়। ফলে ব্যক্তির সার্বিক সত্তা সমাজের ওপর নির্ভরশীল। শিক্ষার লক্ষ্য–সামাজিক বিকাশ—এই মতবাদের সমর্থকরা মনে করেন শিক্ষার লক্ষ্য হবে সমাজ উন্নয়নের পথে ব্যক্তিকে নিয়ােজিত করা। সমাজের কল্যাণ হলে আপনা থেকেই ব্যক্তির কল্যাণ আসবে।
সমাজ চায় তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে, তার উন্নতি ঘটাতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তাকে সালিত করতে। এসবই সামাজিক বিকাশের অন্তর্গত। সামাজিক বিকাশের জন্য শিক্ষাকে কতকগুলি কাজ সম্পাদন করতে হয়। এখানে সামাজিক বিকাশের লক্ষ্যগুলির গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল:
[1] সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে অবহিতকরণ : সামাজিক বিকাশের জন্য সমাজের রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতির সঙ্গে ব্যক্তিকে তথা শিক্ষার্থীকে সম্পূর্ণভাবে পরিচিত করা, সে-বিষয়ে যথােপযুক্ত জ্ঞানদান করা হল শিক্ষার অন্যতম কাজ। ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী সমাজ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করতে না-পারলে, সমাজকে বুঝতে বা জানতে পারবে না। এর ফলে সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা, দায়বদ্ধতা প্রভৃতি কিছুই থাকবে। অজ্ঞানতার ফলে বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হবে।
[2] সামাজিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও সঞ্চালন : শিক্ষার অন্যতম কাজ হল সামাজিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে তার সঞ্চালন l এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করা হয় সামাজিক বিকাশ। সঠিক পাঠক্রম নির্ধারণ ও উপযুক্ত কর্মসূচির বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই লক্ষ্য পূরণ করা যায়। এর জন্য শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের সুযােগ দিতে হবে। সামাজিক কাজে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে থাকলে, তারা সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল ও সচেতন হয়ে উঠবে।
[3] শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক চেতনার জাগরণ : সামাজিক চেতনা হল সমাজে বসবাসকারী বিভিন্ন মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযােগিতা, সহমর্মিতা, সমানুভূতি, আদানপ্রদান প্রভৃতি গুণের বিকাশসাধন। শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ধরনের গুণাবলির বিকাশ ঘটানাে যায়। সামাজিক বিকাশকে শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করলে এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষার পাঠক্রম ও কর্মসূচি নির্বাচন করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক চেতনা জাগরিত হয়।
[4] সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা : প্রত্যেক সমাজেরই নির্দিষ্ট কতকগুলি নিয়মশৃঙ্খলা থাকে। সামাজিক বিকাশের শিক্ষা সমাজের সদস্যদের মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে সে-বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষিত করে তােলে। অন্যদিক থেকে বলা যায়, সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রীতি, ভালােবাসার সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে সামাজিক বিকাশ বিশেষভাবে সাহায্য করে।
[5] সামাজিক পরিবর্তনে সহায়তা : সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে সামাজিক গতিশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামাজিক বিকাশের শিক্ষা এমনভাবে সমাজের পরিবর্তন ঘটায় যার দ্বারা সমাজ কেবল নিজের দেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সংগতি রেখে সঠিকভাবে অগ্রসর হতে পারে। বাস্তবে দেখা গেছে, যে সমাজের কোনাে পরিবর্তন বা প্রগতি ঘটেনি সেই সমাজ ও তার ঐতিহ্য পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই সামাজিক বিকাশের শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সমাজকে সঠিক পথে ও সঠিক গতিতে পরিবর্তিত হতে সাহায্য করা।
[6] গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বজায় রাখা : বর্তমান যুগে বিশ্বের প্রতিটি দেশ বা রাষ্ট্রের কাম্য হল গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বজায় রাখা। শিক্ষাই ব্যক্তিকে একটি গণতান্ত্রিক আদর্শনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে গড়ে তােলে। নানান ধরনের সামাজিক ও দলগত কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী সমাজের দায়িত্বশীল সদস্যে পরিবর্তিত হয়। সমাজের বিভিন্ন সেবামূলক কাজের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজের উপযুক্ত সদস্য হয়ে ওঠে। সামাজিক বিকাশের শিক্ষা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
সামাজিক বিকাশে শিক্ষার ভূমিকা : সামাজিক বিকাশ বলতে বােঝায় ব্যক্তি বা শিশুর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক গুণাবলির বিকাশসাধন করা। যেমন—ব্যক্তি বা শিশুকে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করা। সমস্যা সমাধানের কৌশল আয়ত্তকরণে সহায়তা করা। সামাজিক উৎপাদনের সাথে যুক্ত হওয়ার পদ্ধতি শিখনে সহায়তা করা। গণতান্ত্রিক কাঠামাের বিষয়ে জ্ঞানার্জনে সহায়তা করা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল :
(i) ব্যক্তি বা শিশুর মধ্যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটানাে,
(ii) সামাজিক চেতনা বৃদ্ধি করা,
(iii) সামাজিক দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা,
(iv) সামাজিক সমস্যা সমাধানের কৌশল আয়ত্তকরণে সহায়তা করা,
(v) সামাজিক মূল্যবােধ গঠনে সহায়তা করা,
(vi) সামাজিক সমৃদ্ধির ব্যাপক প্রসারে সহায়তা করা,
(vii) সামাজিক বিবর্তনে সাহায্য করা এবং
(viii) সর্বোপরি শিশুকে বা ব্যক্তিকে সমাজের যােগ্য সদস্য হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করা।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।