শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ব্যক্তির বিকাশ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলােচনা 

শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ব্যক্তির বিকাশ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলােচনা 
অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিকাশের লক্ষ্যটি আলােচনা করাে। 
অথবা, “শিক্ষার লক্ষ্য ব্যক্তিগত বিকাশ’–এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে।  
Class 11 | শিক্ষার ধারণা ও লক্ষ্য (Education) 8 Marks

উত্তর:

শিক্ষার লক্ষ্য-ব্যক্তিগত বিকাশ : ব্যক্তিগত বিকাশ বলতে ব্যক্তির দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক সকল ধরনের সামর্থ্য ও সম্ভাবনাগুলির বিকাশকে বােঝানাে হয়। ‘শিক্ষার লক্ষ্য—ব্যক্তিগত বিকাশ’ এই কথাটির মধ্যে ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথাই বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার যাবতীয় কর্মসূচি ও পরিকল্পনা রচিত হবে ব্যক্তির বিকাশকে কেন্দ্র করে। এক্ষেত্রে সমাজের আগে ব্যক্তিকে স্থান দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তির সমবায়ে সমাজ গঠিত হয়। ব্যক্তির বিকাশ ঘটলে সমাজের অগ্রগতি ঘটবে। ব্যক্তির স্বাধীনচিন্তা ও কাজ ছাড়া সমাজ উন্নয়নমূলক কোনাে কাজই সম্পাদিত হতে পারে না। তাই ব্যক্তির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত শিক্ষার ইতিহাস ও বিবর্তন পর্যালােচনা করলে দেখা যায়—সকল যুগেই ব্যক্তিগত বিকাশকে শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশ্চাত্য শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল, পেস্তালৎসি, মন্তেসরি, স্যার পার্সিনান, বাট্রান্ড রাসেল প্রমুখরা শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ব্যক্তিগত বিকাশকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। ভারতীয় শিক্ষাবিদ বিবেকানন্দ, গান্ধিজি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখরাও শিক্ষায় শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশকে গুরুত্বদানের কথা উল্লেখ করেছেন। ব্যক্তির বিভিন্ন বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার লক্ষ্যের ভূমিকা এখানে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল : 

[1] দৈহিক বিকাশ : শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিশুকে দৈহিক সামর্থ্য অর্জনে সহায়তা করা। সুস্থ দেহের মধ্যে থাকে সুস্থ মন। শিক্ষার ক্ষেত্রে মনােযােগ সৃষ্টির অন্য একটি দিক হল সুস্থ-স্বাভাবিক দৈহিক সামর্থ্য। শরীরচর্চা, খেলাধুলা ও সুখাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ, স্বাভাবিক রাখা যায়। এর জন্য শিক্ষার প্রয়ােজন আছে। তাই দৈহিক বিকাশের জন্য শিক্ষা অপরিহার্য।

[2] মানসিক বিকাশ : ব্যক্তিগত বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল মানসিক বিকাশ। মানসিক বিকাশ বলতে শিশুর ইচ্ছা, প্রক্ষোভ, অনুরাগ, মনােযােগ, চিন্তা, কল্পনা, স্মৃতি, প্রবৃত্তি, বুদ্ধি প্রভৃতির যথাযথ বিকাশকে বােঝানাে হয়। শিক্ষার লক্ষ্য ব্যক্তিগত বিকাশ হলে, শিশুর মানসিক বৈশিষ্ট্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা করে তার মানসিক বিকাশকে তরান্বিত করা হয়। 

[3] গ্লাক্ষোভিক বিকাশ : শিক্ষার প্রতি সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি, শিখনের প্রতি আন্তরিকতা, শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রতি শ্রদ্ধা, জ্ঞানার্জনের প্রতি নিষ্ঠা সবই প্রাক্ষোভিক বিকাশের অন্তর্গত, যা। শিক্ষার মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। শিক্ষার ব্যক্তিগত লক্ষ্যের মাধ্যমে শিশুর বাঞ্ছিত প্ৰক্ষোভগুলিকে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

[4] বৌদ্ধিক বিকাশ : ব্যক্তিগত বিকাশের আর-একটি দিক হল শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশ, জ্ঞান ও বুদ্ধির বিকাশের ফলে শিশু তার পরিবেশকে সঠিকভাবে বুঝতে পারে ও জীবনের নানান সমস্যার যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাধানের রাস্তা বের করতে পারে। এ ছাড়া ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে নিজেকে প্রস্তুতও করতে পারে। নানান কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুর মধ্যে জ্ঞান ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটানাে শিক্ষার ব্যক্তিগত লক্ষ্য। 

[5] নৈতিক বিকাশ : শিশুর মধ্যে ভালােমন্দ বিচারের দক্ষতা সৃষ্টি, সত্যের প্রতি নিষ্ঠাবান হওয়ার মানসিকতা অর্জন, জীবন সংগ্রামে যােগদানের সাহস প্রভৃতি বিষয়গুলি নৈতিক বিকাশের অন্তর্গত। ব্যক্তিগত বিকাশকে শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করলে শিশুর মধ্যে এই জাতীয় মূল্যবােধগুলি গড়ে তােলার দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়। নৈতিকতার সাথে সমাজের সম্পর্ক বিদ্যমান। সৎ মানুষরা নৈতিক পথ অবলম্বন করে সমাজের কল্যাণের দিকে দৃষ্টি দিয়েই জীবনযাপন করতে চায়। 

[6] সামাজিক বিকাশ : সমাজে বসবাসকারী বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলা, সামাজিক সমস্যাগুলিকে সঠিকভাবে বােঝা এবং তার সমাধানে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া ইত্যাদি হল সামাজিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যাবলি। শিক্ষার লক্ষ্যপুরণে শিশুর মধ্যে তথা ব্যক্তির মধ্যে এই ধরনের বিকাশ বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। এই ধরনের বিকাশ ব্যক্তিকে সমাজের দায়িত্বশীল ও আত্মনির্ভরশীল সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।

[7] আধ্যাত্নিক বিকাশ : ব্যক্তি তার অন্তরের যাবতীয় সংকীর্ণতা দূর করে যাতে আত্মােপলব্বির স্তরে উপনীত হতে পারে, তার জন্য আধ্যাত্মিক বিকাশ বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। শিক্ষার লক্ষ্য ব্যক্তিগত বিকাশ হলে শিক্ষার্থীর আধ্যাত্মিক চেতনার জন্য প্রয়ােজনীয় পাঠক্রম ও শিক্ষায় কর্মসূচি নির্ধারণে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়ােজন হয়।

[8] সৃজনশীলতার বিকাশ : ব্যক্তিগত বিকাশ শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে অনুসৃত হলে শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বা শিশুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সৃজনশীলতার ক্ষেত্রটিকে খুঁজে বের করে, সেটির যথাযথ বিকাশের প্রতি নজর দেওয়া হয়। 

[9] সংস্কৃতির বিকাশ : দেশের জনসাধারণের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি অনুভূতিশীল হওয়া, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, সঞ্চালন ও উন্নয়নে যথাযথভাবে অংশ নেওয়াই হল ব্যক্তির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিকাশ সাধন। এই বিকাশের মধ্য দিয়েই শিক্ষাক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যপূরণ হয়। 

ব্যক্তিগত বিকাশে শিক্ষার ভূমিকা : ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষা যেসকল ভূমিকা পালন করে, তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল —

(i) ব্যক্তি বা শিশু যেসকল সুপ্ত গুণাবলি বা সম্ভাবনা নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছে, সেগুলিকে যথাযথভাবে বিকশিত হওয়ার সুযােগ সৃষ্টি করা।

(ii) চিরপরিবর্তনশীল পার্থিব পরিবেশের সঙ্গে শিশুর বা শিক্ষার্থীর সংযােগসাধনে সহায়তা করা এবং সে যাতে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে তার ব্যবস্থা করা।

(iii) শিশুর চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীল ক্ষমতার পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করা। 

(iv) ব্যক্তিকে বা শিক্ষার্থীকে সমাজের উপযুক্ত সদস্য হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করা ও তাকে দেশের উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত করা l
(v) সর্বোপরি, ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে তাকে প্রকৃত মানুষে পরিণত হতে সাহায্য করা।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

3 thoughts on “শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ব্যক্তির বিকাশ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলােচনা ”

Leave a Comment