শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে

শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে। 4 + 4  Class 11 | শিক্ষার ধারণা ও লক্ষ্য (Education) 8 Marks

উত্তর:

শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য : শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য দার্শনিক, জীববিদ্যাগত ও সমাজতত্ত্বগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সমাজতন্ত্রবাদীদের মতে, শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল সমাজের সার্বিক উন্নয়ন। সেই অনুযায়ী সমাজের চাহিদা, সমাজের অগ্রগতির ধারার প্রতি লক্ষ রেখে শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা করা উচিত। ব্যক্তিগত বৈষম্যের নীতি অনুসরণ করে পাঠক্রম প্রণয়ন করা এবং তা প্রয়ােগ করা বাস্তবে বেশ কঠিন কাজ। তাই সমাজের বিকাশ ও রাষ্ট্রের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে বাস্তবসম্মত পাঠক্রম প্রণয়ন করলে তা শিক্ষার তথা রাষ্ট্রের উন্নয়নের সমার্থক হবে। শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের মূল বৈশিষ্ট্য হল— (i) সমাজকে বাদ দিয়ে ব্যক্তির আলাদা অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তাই সমাজের লক্ষ্যই হবে ব্যক্তির লক্ষ্য। (ii) সমাজের মঙ্গল হলে ব্যক্তিরও মঙ্গল হবে। (iii) সমাজই ব্যক্তিকে সুরক্ষা দিতে পারে। (iv) শিক্ষার মূল কাজ হবে সামাজিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নয়ন।

শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা :

[1] সমাজের অগ্রগতিতে সহায়তা: শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যে সমাজকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে মূল বিষয় হল সমাজের অগ্রগতি ও সামাজিক বিকাশ। সমাজের বিকাশ ঘটলেই ব্যক্তির বিকাশ ঘটবে। প্রত্যেক ব্যক্তিই তার সামাজিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই সমাজের অতীত কৃষ্টির যথাযথ সংরক্ষণ ও ব্যক্তির মধ্যে তার সঞ্চালন বা সুনাগরিক তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়—সমাজতান্ত্রিক শিক্ষার মাধ্যমে। 

[2] সামাজিকীকরণের শিক্ষাদানে সহায়তা : সমাজতান্ত্রিক শিক্ষায় সামাজিক নিয়মকানুন, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতি সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং সামাজিকীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণসাধন করে।

[3] সুরক্ষা ব্যবস্থা করা : সমাজজীবন ব্যক্তিকে যাবতীয় সুরক্ষাদানের আশ্বাস দেয় এবং তার সামনে ভাবী জীবনের নানান সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত করে। সমাজের মধ্যে সবল ও দুর্বল উভয় শ্রেণির ব্যক্তি থাকে, সমাজ এদের সবারই মঙ্গলকামনা করে। 

[4] যুথবদ্ধতার প্রবণতা বৃদ্ধিতে সহায়তা : সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, মানুষের মধ্যে যেসকল প্রবৃত্তি লক্ষ করা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হল যুথবদ্ধতার প্রবৃত্তি। এই প্রবৃত্তি অনুযায়ী মানুষ সমাজে দলবদ্ধভাবে বসবাস করতে চায়,সমাজের বাইরে একা থাকতে চায় না। শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা বাড়িয়ে তােলে। 

[5] গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশে সহায়তা : শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশেও উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে। গণতান্ত্রিক চেতনা সমাজ উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার। 

[6] মূল্যবােধের বিকাশে সহায়তা : শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য অনুসৃত হলে, সমাজকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষার কাজ পরিচালিত হয়। এর ফলে শিক্ষার্থী তথা ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক মূল্যবােধের বিকাশ ঘটে। এটি ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের কল্যাণের ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হয়। 

[7] জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ়করণে সহায়তা : শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য অনুসৃত হলে বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও আচার-অনুষ্ঠানের রীতিনীতির আদানপ্রদান ঘটে। এর ফলে দেশের জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হয়। 

শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের অসুবিধা : শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের অসুবিধা বা ত্রুটিগুলি হল : 

[1] ব্যক্তি চাহিদার প্রতি অবহেলা : শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য অনুসৃত হলে সমাজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সমাজের প্রয়ােজন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ফলে ব্যক্তির চাহিদা, সামর্থ্য, ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রভৃতি বিষয়গুলি অবহেলিত হয়। সেই কারণে ব্যক্তির কল্যাণ ব্যাহত হয়। সমাজকল্যাণও সঠিকভাবে ঘটতে পারে না। কারণ ব্যক্তিদের নিয়ে সমাজ সৃষ্টি হয়। 

[2] স্বেচ্ছাচারিতার সুযােগ সৃষ্টি ও গণতন্ত্রের অবহেলা: শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য অনুসৃত হলে রাষ্ট্রপ্রধানের স্বেচ্ছাচারিতার সুযােগ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ ব্যাহত হয়। গণতন্ত্র বিঘ্নিত হলে রাষ্ট্রের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। 

[3] ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রতি অবহেলা : শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য অনুসৃত হলে সমাজের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা অবহেলিত হয়। ব্যক্তি আপন ইচ্ছানুসারে সৃজনশীল কাজ করতে পারে না। ফলে সামাজিক অগ্রগতি ব্যাহত হয়।

[4] আত্নবিকাশের পথ বন্ধ হয় : শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য সঠিকভাবে কার্যকারী হলে ব্যক্তির আত্মবিকাশের পথ রুদ্ধ হয়। ব্যক্তির মধ্যে ধীরে ধীরে ক্ষোভ জমতে থাকে। বহু মানুষের। মধ্যে সতি ক্ষোভ একসময় বিদ্রোহের আকার ধারণ করে। উপরােক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজতান্ত্রিক শিক্ষায় সমাজকে প্রাধান্য দেওয়ার ফলে, ব্যক্তি উপেক্ষিত হয়। ব্যক্তির ওপর সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সঙ্গে ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমন্বয়সাধন দরকার।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment