শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বােঝ | শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য গ্রহণের সপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি আলােচনা করাে

শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বােঝ? শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য গ্রহণের সপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি আলােচনা করাে। 2+6  Class 11 | শিক্ষার ধারণা ও লক্ষ্য (Education) 8 Marks

উত্তর:

শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য : শিক্ষার লক্ষ্যের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিকাশ ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়। এইগুলির মধ্যে অন্যতম হল সামাজিক বিকাশ। সমাজকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে এই লক্ষ্যটির উদ্ভব ঘটেছে। এটি হল সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য। এই মতবাদে বিশ্বাসীরা হলেন—সমাজতন্ত্রবাদী। সমাজতন্ত্রবাদীদের মতে, সমাজের বাইরে ব্যক্তির আলাদাভাবে কোনাে অস্তিত্ব নেই। ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যু, আশা-আকাঙ্ক্ষা, নীতিবােধ, কাজকর্ম—সবকিছুই সমাজের মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তিকে সামাজিক রীতিনীতি, নিয়মকানুন, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি মেনে চলতে হয়। এই কারণে সমাজতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্য হল সমাজকল্যাণ ও সমাজের অগ্রগতি। এককথায়, সমাজকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষার যে লক্ষ্য নির্ধারিত হয়, তাই হল শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য।

 শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের মূল কথাগুলি হল : 

(i) সমাজকে বাদ দিয়ে ব্যক্তির পৃথক অস্তিত্ব নেই বললেই চলে ।

(ii) সমাজের উন্নয়ন ঘটলে ব্যক্তির উন্নয়ন সম্ভব হবে।

(iii) ব্যক্তির নিরাপত্তার কারণে সমাজের প্রয়ােজনীয়তা অপরিহার্য। 

(iv) ব্যক্তির আশা-আকাঙ্ক্ষা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, নীতিবােধ ইত্যাদি সবই সমাজের সংস্পর্শে গড়ে ওঠে। 

(v) ব্যক্তির সার্বিক সত্তা সমাজের ওপর নির্ভরশীল। তাই ব্যক্তি সমাজের জন্য, সমাজ ব্যক্তির জন্য নয়।

শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সপক্ষে যুক্তি : শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সপক্ষে যেসকল যুক্তি রয়েছে, সেগুলি এখানে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল : 

[1] সমাজতত্ত্ববিদদের যুক্তি : সমাজতত্ত্ববিদগণ শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক মতবাদের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মানুষ নিজেদের প্রয়ােজনের তাগিদেই সংঘবদ্ধ হয়ে সমাজ গঠন করেছে এবং সমাজে সার্থকভাবে বসবাসের জন্যই বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিয়মকানুন তৈরি করেছে। ওই সব নিয়মকানুনকে মেনে চলা, প্রয়ােজনে পরিবর্তন করা ও যথাযথভাবে প্রয়ােগ করার জন্য শিক্ষার দরকার। তাই শিক্ষার লক্ষ্য স্থির হবে সমাজকে কেন্দ্র করে। 

[2] জীববিজ্ঞানীদের যুক্তি : জীববিজ্ঞানীদের মতে, দেশ ও সমাজের উন্নয়ন ঘটলে ব্যক্তির উন্নতি ঘটবে। প্রকৃত অর্থে, সমাজের লক্ষ্যই হল ব্যক্তিজীবনের লক্ষ্য। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার। 

[3] প্রয়ােগবাদী দার্শনিকদের যুক্তি : প্রয়ােগবাদী দার্শনিকদের মতে, সমাজে সেই সকল বিষয়কে মূল্যবান মনে করা হয়, যেগুলির বাস্তবক্ষেত্রের প্রয়ােগ আছে। তাই প্রয়ােগবাদীরা শিক্ষাকে এমনভাবে গড়ে তােলার কথা বলেছেন যেখানে সমাজকে প্রাধান্য দিয়ে সমাজের অন্তর্গত অন্যান্য  বিষয়গুলির উন্নয়ন ঘটবে।

[4] প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা থেকে গৃহীত যুক্তি : প্রাচীন যুগের বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির আভাস পাওয়া যায়। বৌদ্ধ মঠ বা বিহারে গুরু-শিষ্য অর্থাৎ শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ সম্মিলিতভাবে পাঠ অনুশীলনে অংশগ্রহণ করতেন। অর্থাৎ ওই প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থাতেও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য প্রতিফলিত হত।

[5] আধুনিক শিক্ষা-চিন্তাবিদদের যুক্তি : আধুনিক যুগের শিক্ষা-চিন্তাবিদরা শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশকে শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সর্বাঙ্গীণ বিকাশের মধ্যে সামাজিক বিকাশ অন্যতম তাই শিক্ষায় সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যই কাম্য। শিক্ষার্থীর সামাজিক বিকাশের ধারাকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য তাকে সমাজের মধ্যে বড়াে হওয়ার সুযােগ করে দিতে হবে। সেজন্য শিক্ষার লক্ষ্য হবে সমাজমুখী।

উপরােক্ত আলােচ্য যুক্তিগুলির সাপেক্ষে বলা যায়, সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা সমাজের সার্বিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। এটি সামাজিক সংহতি, সুরক্ষা ও সমাজের উন্নতিসাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ব্যক্তির জীবধর্মকে সংযত করে, তাকে সমাজধর্মের অনুকূল করে সামাজিক জীবনের উপযােগী করে গড়ে তােলে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment