সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি রূপায়ণের ক্ষেত্রে বাধা | সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকার ভুমিকা
অথবা, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি রূপায়ণের ক্ষেত্রে বাধাগুলি কী কী? সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকার ভুমিকা লেখাে। 4 + 4
উত্তর :
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি রূপায়ণের ক্ষেত্রে বাধাসমূহ :
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির গুরুত্ব সম্পর্কে সকল শিক্ষাবিদ প্রায় একই ধরনের মতপ্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশের জন্য পাঠক্রমিক কার্যাবলির পাশাপাশি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে এর যথােপযুক্ত রূপায়ণের ব্যবস্থা আজও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির রূপায়ণের ক্ষেত্রে মুল বাধাগুলি হল :
[1] পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা : আমাদের দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা মূলত পরীক্ষানির্ভর। তাই যে বিষয়গুলিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকে না সেগুলিতে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবক-অভিভাবিকা গুরুত্ব দিতে চায় না।
[2] সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব : আমাদের দেশে আজও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে সামাজিকভাবে খুব একটা মর্যাদা দেওয়া হয় না।
[3] আর্থিক অনটন : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সংগঠিত বা পরিচালিত করার জন্য অর্থের প্রয়ােজন হয়। উপযুক্ত পরিমাণ অর্থের সংস্থান করতে না-পারায়, পরিকাঠামাের অভাবে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালিত হয় না।
[4] শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব : উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাবে বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা করা যায় না।
[5] সময়তালিকায় সঠিক থান না-দেওয়া : অধিকাংশ বিদ্যালয়ের সময়তালিকায় সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে স্থান দেওয়া হয় না। পাঠক্রমিক কার্যাবলির শেষে অর্থাৎ সময়তালিকার শেষ পিরিয়ডে নামমাত্র সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি রাখা হয়। শিক্ষার্থীরা ওইসময় বাড়ি ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে। তাই তারা ওই বিষয়ে মন দিতে পারে না।
[6] গুরুত্ব হ্রাস : কোঠারি কমিশন মাধ্যমিক স্তরে কর্ম অভিজ্ঞতা, শারীরশিক্ষা, সমাজসেবা এবং বিদ্যালয় কৃত্যালি প্রভৃতিকে বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করে। বেশ কয়েক বছর এগুলি পরিচালিত হতে থাকে। বর্তমানে এগুলিকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে। ফলে এর গুরুত্ব প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাই এই বিষয়গুলি সঠিকভাবে রূপায়িত হচ্ছে না।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকা :
যে-কোনাে শিক্ষা পরিকল্পনার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনা এর ব্যতিক্রম নয়। এক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যে ভূমিকা পালন করা দরকার, তা হল —
[1] কার্যাবলি নির্বাচন : বিদ্যালয়ের পরিকাঠামাে অনুযায়ী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি নির্বাচন করতে হবে।
[2] সময়তালিকা প্রণয়ন : বিদ্যালয়ের সঠিকভাবে বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে সংঘটিত করার জন্য সময়তালিকাতে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়গুলিকে স্থান দিতে হবে।
[3] শিক্ষার্থীদের উৎসাহদান : শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের পচ্ছন্দমতাে বিষয়গুলিতে অংশগ্রহণ করতে পারে, তার জন্য তাদের উৎসাহিত করতে হবে।
[4] পরিচালনা করা : বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্য শিক্ষক-শিক্ষিকাকেই পরিচালনা করতে হবে। এর জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাকেও উপযুক্ত প্রস্তুতি নিতে হবে।
[5] উপস্থিতি : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সংগঠিত করার সময় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যথাস্থানে উপস্থিত থাকতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকার উপস্থিতিই ছাত্রছাত্রীদের কর্মে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
[6] মূল্যায়ন : শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মূল্যায়ন করবেন। তাদের পারদর্শিতার রেকর্ড তৈরি করে সেগুলিকে বিদ্যালয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।