সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির উদ্দেশ্য গুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর :
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির উদ্দেশ্য :
শিক্ষাবিদরা সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। কারণ এইসকল কার্যাবলি শিক্ষার্থীর জীবন বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এখানে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির কতকগুলি উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হল—
[1] শারীরিক বিকাশ : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর শারীরিক বিকাশে সহায়তা করা। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ব্রতচারী, ড্রিল, এনসিসি, স্কাউটিং, খেলাধুলাে প্রভৃতিতে, নিয়মিত অংশগ্রহণ করলে তাদের শারীরিক বিকাশ ঘটে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুষ্ট হয়, দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, ঘুম ভালাে হয়। ফলে তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।
[2] মানসিক বিকাশ : খেলাধুলাে, গানবাজনা, অভিনয়, চিত্রাঙ্কন, আলপনা, পত্রিকা প্রকাশনা প্রভৃতি সহপাঠক্রমিক কাজগুলি শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। দৈহিক বিকাশ ও মানসিক বিকাশ যথাযথ হলে শিক্ষার কাজটিও যথাযথভাবে সম্পাদিত হয়।
[3] সামাজিক বিকাশ : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির আর একটি উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিকাশে সহায়তা করা। যৌথ প্রকল্প প্রণয়ন, অভিনয়, সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ, এনসিসি ও এনএসএস কর্মসূচিতে যুক্ত হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাজজীবনের উপযােগী বহু অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। এককথায়, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক বিকাশ ঘটে।
[4] আত্মবিশ্বাস গঠন : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির অপর একটি উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তােলা। কোনাে কাজে শিক্ষার্থীকে স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণের সুযােগ দিলে, কাজ করতে করতে তার মধ্যে আত্মপ্রত্যয়, আত্মবিকাশ প্রভৃতি গুণাবলি বিকশিত হয়।
[5] চরিত্রগঠন: ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে নিয়মিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করলে, তাদের মধ্যে নানান ধরনের বাঞ্ছিত মূল্যবােধ গড়ে ওঠে। এগুলি তাদের চারিত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রেও সহায়তা করে।
[6] গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ ঘটায়। এটিও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্য প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ অপরিহার্য।
[7] শৃঙ্খলার বিকাশ : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলার বিকাশে সাহায্য করে। খেলাধুলাে, এনসিসি, ব্রতচারী প্রভৃতি কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধৈর্য এবং খেলােয়াড়ােচিত মনােভাব জেগে ওঠে। এই গুণ মানুষের জীবনকে উন্নত করে।
[8] সেবার মনােভাব সৃষ্টি : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেবার মনােভাব সৃষ্টি করে। ছাত্রছাত্রীরা স্কাউট, ব্রতচারী, সেন্ট জোন্স অ্যাম্বুলেন্স কোর্স প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করতে থাকলে, তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে সেবার মনােভাব গঠিত হয়।
[9] বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করা : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির আর একটি উদ্দেশ্য হল বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করা। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির বৈচিত্র্যময় কর্মসূচি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একঘেয়েমি দূর করে তাদেরকে বিদ্যালয়মুখী করে তােলে।
[10] অবসরযাপনের শিক্ষা : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির আর একটি উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদেরকে অবসরযাপনের জন্য প্রয়ােজনীয় শিক্ষাদান করা। শিক্ষার্থীরা ছােটোবেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ফলে যে বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠে, সেটিকে অবসরযাপনের ক্ষেত্রে নির্বাচন করে।
[11] সুখ অনুভূতির বিকাশ : সাহিত্য, শিল্প, সংগীত, অভিনয় ও অন্যান্য নান্দনিক কাজ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সুস্থ অনুভূতির বিকাশ ঘটায়। সুস্থ অনুভূতির বিকাশসাধনও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির একটি উদ্দেশ্য।
[12] প্রাক্ষোভিক ভারসাম্য রক্ষা : বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের অবদমিত কামনা-বাসনা পরিতৃপ্তি লাভ করে। ফলে তাদের সৃজনাত্মক ক্ষমতার উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটে এবং তাদের প্রাক্ষোভিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত থাকে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।