উদ্ভিদের যে-কোনাে দুধরনের ট্রপিক চলন উদাহরণসহ আলােচনা করাে

উদ্ভিদের যে-কোনাে দুধরনের ট্রপিক চলন উদাহরণসহ আলােচনা করাে
অথবা, উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন পরীক্ষাসহ আলােচনা করাে।

উত্তর:-

উদ্ভিদের ট্রপিক চলন: উদ্ভিদের ট্রপিক চলন মূলত তিন প্রকার। যথা— 1) ফোটোট্রপিক চলন, 2) জিওট্রপিক চলন ও 3) হাইড্রোট্রপিক চলন। বিভিন্ন ধরনের ট্রপিক চলন উদাহরণ সহযােগে আলােচনা করা হল। 

1) ফোটোট্রপিক চলন: উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্ৰচলন যখন আলাের উৎসের গতিপথ বা অভিমুখ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে ফোটোট্রপিক বা আলােকবৃত্তীয় চলন বলে। উদ্ভিদের কাণ্ড, শাখাপ্রশাখা আলাের উৎসের দিকে বৃদ্ধি পায়। তাই কাণ্ডকে আলােক-অনুকূলবর্তী বলে। অন্যদিকে, মূল আলাের উৎসের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়। তাই মূলকে আলােক-প্রতিকূলবর্তী বলে। আবার, পাতা আলাের উৎসের সাথে তির্যকভাবে বা লম্বভাবে বৃদ্ধি পায় বলে পাতাকে আলােকতির্যকবর্তী বলা হয়।

উদাহরণ: একটি জলপূর্ণ কাচের বােতলে কর্কের সাহায্যে একটি চারাগাছ লাগানাে হল। এবার বােতলসহ চারাগাছটি যদি অন্ধকার সূর্যালােক ঘরে একটি জানালার পাশে রেখে জানালার পাতা একটি পাল্লা খুলে রাখা কাণ্ড, হয় তবে কয়েকদিন পর দেখা যাবে চারাগাছের ডালপালা জানালার দিকে অর্থাৎ, আলােক–উৎসের দিকে বেঁকে গেছে। একইসঙ্গে লক্ষ করা যাবে যে, চারাগাছের মূল নীচের দিকে অর্থাৎ আলােক-উৎসের বিপরীতে বৃদ্ধি পায়। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিটপ অংশ আলােক অনুকুলবতী ও মূল আলােক-প্রতিকুলবতী।

2) জিওট্রপিক চলন: উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্ৰচলন যখন অভিকর্যের গতিপথ বা অভিমুখ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তাকে জিওট্রপিক বা অভিকর্ষবৃত্তীয় চলন বলে। উদ্ভিদের মুল অভিকর্যের দিকে এবং বিটপ অভিকর্ষের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়। তাই মুলকে অভিকর্ষ অনুকুলবর্তী ও বিটপকে অভিকর্য প্রতিকূলবর্তী বলে। 

উদাহরণ: একটি ভিজেব্লটিং পেপারে একটি অঙ্কুরিত বীজকে পিনের সাহায্যে আটকে ব্লটিং পেপারটিকে একটি দড়ির সাহায্যে অন্ধকার ঘরে খাড়াভাবে ঝুলিয়ে রেখে দেওয়া হল। এর কয়েকদিন পরে দেখা যাবে অঙ্কুরিত বীজের ভ্ৰণমূল নীচের দিকে ও ভ্রুণমুকুল ওপরের দিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ভ্ৰণমূল অভিকর্ষের অনুকূলবর্তী এবং ভূণমুকুল অভিকর্ষের প্রতিকূলবর্তী।

3) হাইড্রোট্রপিক চলন: উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলন যখন জলের উৎসের গতিপথ বা অভিমুখ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে হাইড্রোট্রপিক চলন বা জলবৃত্তীয় চলন বলে। উদ্ভিদের মূলের চলন জলের উৎসের দিকে হয়। তাই মূলকে জল-অনকূলবর্তী এবং বিটপ জলের উৎসের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়। তাই বিটপকে জল-প্রতিকূলবর্তী বলে। 

উদাহরণ: একটি চালুনিতে কাঠের ভিজে গুঁড়াের ওপর কতকগুলি সতেজ ছােলার বীজ রেখে ঝুলিয়ে দিলে কয়েকদিন পর বীজগুলি অঙ্কুরিত হয়ে অভিকর্ষবৃত্তির কারণে ভূণমূলগুলিকে চালুনির বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যাবে। এভাবে আরও কয়েকদিন রেখে দিলে দেখা যাবে, ভূণমূলগুলি আবার চালুনির ভিতর ঢুকে যায়। এর থেকে প্রমাণিত হয়, ভূণমূলগুলি প্রথমে চালুনির বাইরে অভিকর্ষের টানে নীচের দিকে ঝুলতে থাকে এবং পরে সেগুলি জলের উৎসের দিকে বেঁকে আবার চালুনির ভিতর প্রবেশ করে। অর্থাৎ প্রমাণিত হয় যে, মূলের মধ্যে অনুকূল জলবৃত্তীয় চলন দেখা যায়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment