উনিশ শতকের প্রথম তিন দশকে বাংলার মিশনারি প্রেসগুলির মুদ্রণ ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করাে। এই পর্বের অন্যান্য ছাপাখানাগুলির বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করাে।

উনিশ শতকের প্রথম তিন দশকে বাংলার মিশনারি প্রেসগুলির মুদ্রণ ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করাে। এই পর্বের অন্যান্য ছাপাখানাগুলির বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করাে। 3+5 Marks | Class 10

উওর : প্রথম অংশ : উনিশ শতকের প্রথমদিকে বাংলার মিশনারি প্রেসসমূহ উনিশ শতকের শুরুতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগেও বাংলায় ছাপাখানার। বিস্তার ঘটেছিল; যেমন— 

১। কলকাতার ব্যাপটিস্ট মিশন : শ্রীরামপুর মিশনের নবীন গােষ্ঠী এই মিশন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইউ কেরি, উইলিয়াম পিয়ার্স প্রমুখ কলকাতার সার্কুলার রােডে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন (১৮১৮ খ্রি.)। এই প্রেস স্কুল বুক সােসাইটির বরাত মতাে

যেমন বই ছেপেছিল, তেমনি তারা বাংলা মুদ্রণের উন্নতির জন্যও চেষ্টা করেছিল।

২। চার্চ মিশন প্রেস : আমহার্স্ট স্ট্রিটের চার্চ মিশন প্রেসে ছাপা। উল্লেখযােগ্য বই হল ইংল্যান্ডে ও ঐর্লন্ডে সংস্থাপিত মণ্ডলীর সাধারণ প্রার্থনা’ (১৮২২ খ্রি.)। এই বইয়ে ফুলস্টপ সহ বিভিন্ন ইংরেজি যতিচিহ্নও ব্যবহৃত হয়েছিল। 

৩। বিশপস্ কলেজ প্রেস : শিবপুরের বিশপস্ কলেজ প্রেস ছিল আর-একটি উল্লেখযােগ্য প্রেস। ধর্মীয় পুস্তকের পাশাপাশি এখানে ছাপা বিভিন্ন ধরনের বইয়ের মধ্যে উল্লেখযােগ্য বই হল। মর্টনের বাংলা ইংরেজি অভিধান (১৮২৮ খ্রি.)। 

দ্বিতীয় অংশ : এই পর্বের অন্যান্য ছাপাখানা : উনিশ শতকের শুরুতে ছাপাখানার জগতে খ্রিস্টান মিশনারিদের পাশাপাশি বেশ কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগও চোখে পড়ে।। 

১। ছাপাখানা : ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের আগে প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত। ছাপাখানাগুলি হল—পটলডাঙার সংস্কৃত যন্ত্র, আড়পুলি লেনে হরেন্দ্র রায়ের ছাপাখানা, শােভাবাজারের বিশ্বনাথ দেবের ছাপাখানা, বাঙালি প্রেস প্রভৃতি। এ ছাড়া বউবাজারের লেবেন্ডর। সাহেবের ছাপাখানা, শ্রীরামপুরের নীলমণি হালদারের ছাপাখানা। ছিল বিখ্যাত। 

২। প্রকাশনা : এই সমস্ত ছাপাখানা থেকে বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। হিন্দুস্থানি প্রেস থেকে ‘ঔষধসার সংগ্রহ (১৮১৯ খ্রি.), বাঙ্গালি প্রেস থেকে রামমােহন রায়ের ‘কঠোপনিষৎ (১৮১৭ খ্রি.), হরচন্দ্র রায়ের আড়পুলি লেনের প্রেস থেকে বিভিন্নরকম ধর্মীয় গ্রন্থ, বিশ্বনাথ দেবের প্রেস থেকে রাধাকান্ত দেবের ‘বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থ’ (১৮২১ খ্রি.) প্রকাশিত হয়।

৩।লিথােগ্রাফের প্রবর্তন : ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাপাখানার বিস্তারের একটি দিক ছিল ‘লিথােগ্রাফিক ছাপা’র প্রবর্তন। এই ধরনের ছাপা ব্যবস্থায় ছবি, নকশা, মানচিত্র আঁকা সম্ভব হয়।।

৪।প্রকাশনার মানােন্নয়ন : ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত ছাপাখানাগুলিতে মুদ্রণ কৌশল ও মুদ্রণের মানােন্নয়ন ঘটানাে এবং প্রকাশনায় শােভনতা বৃদ্ধির দিকেও নজর দেওয়া হয়।

এভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা ছাপাখানাগুলি মুদ্রণের ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যসাধন করে এবং বাংলার মুদ্রণ ব্যবস্থা ক্রমশই আধুনিক হয়ে ওঠার পথে যাত্রা শুরু করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!