প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলি সংক্ষেপে লেখো

প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলি সংক্ষেপে লেখো

উত্তর : 

প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : 

প্রাথমিক শিক্ষা হল নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার দ্বিতীয় স্তর। এই শিক্ষাকে ব্যক্তির পক্ষে ন্যূনতম আবশ্যিক শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই শিক্ষা যে-কোনাে ব্যক্তিকে গণতন্ত্রের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। নীচে প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সংক্ষেপে আলােচনা করা হল —

[1] শারীরিক বিকাশ : প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর শারীরিক বিকাশে সহায়তা করা। কারণ শিশু অবস্থায় ব্যক্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপরিণত থাকে। তাই পড়াশােনার পাশাপাশি খেলাধুলা, ব্যায়াম, শরীরচর্চা প্রভৃতি সহপাঠক্রমিক কাজের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য গড়ে তােলার ব্যবস্থা করা হয়।

[2] জ্ঞানার্জনে সহায়তা : প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর বা ব্যক্তির জ্ঞানমূলক বিকাশে সহায়তা করা হয়। এই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, গণিত, ভাষা, ইতিহাস, ভূগােল প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞানার্জনে সহায়তা করা। 

[3] মানসিক বিকাশ : প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হল শিশুর বা ব্যক্তির বিচারবুদ্ধি, চিন্তাশক্তি, যুক্তি, সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি প্রভৃতির যথাযথ বিকাশে সাহায্য করা। 

[4] সামাজিক বিকাশ : শিশুকে বা ব্যক্তিকে সমাজের সঙ্গে সংগতি বিধানে উপযােগী করে গড়ে তােলা হল প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কার্যাবলি ও সেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্বপালনের বােধ জাগ্রত করা হয়। 

[5] প্রক্ষোভিক বিকাশ : শিশুর বা ব্যক্তির বিভিন্ন প্রকার প্রক্ষোভজনিত আচরণের যথাযথ বিকাশে সহায়তা করা হলো প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য l প্রক্ষোভিক বিকাশ যথাযথভাবে না-ঘটলে শিশুর মধ্যে নানা ধরনের অসংগতিমুলক আচরণ লক্ষ করা যায়।

[6] স্বাস্থ্য বিষয়ে সু-অভ্যাস গঠন : প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য শিশু বা শিক্ষার্থীর মধ্যে সুস্বাথ্যাভ্যাস গড়ে তােলা। এই অভ্যাসগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল— সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, দাঁত দিয়ে নখ না-কাটা, যেখানে সেখানে থুতু না-ফেলা, ভালাে করে স্নান করা, শরীরের সকল অংশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি।

[7] নাগরিকতার শিক্ষা : প্রাথমিক শিক্ষার অপর একটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হল শিশুর মধ্যে নাগরিক জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা গড়ে তােলা। 

[8] নৈতিক মূল্যবােধের বিকাশ : প্রাথমিক শিক্ষার আর একটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হল শিশু বা শিক্ষার্থীর মধ্যে সততা, পরের দ্রব্য অপহরণ না-করা, গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা করা, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারা ইত্যাদি গুণের বিকাশসাধন করা। সমাজের উন্নয়ন, সংস্কৃতির বিকাশসাধন, ঐতিহ্যের সঞ্চালন, সমাজের স্থায়িত্ব প্রভৃতি বিষয়গুলি অনেকাংশে শিশুর বা ব্যক্তির নৈতিক মূল্যবােধের ওপর নির্ভর করে। 

[9] সৌন্দর্যবােধের বিকাশসাধন : বিদ্যালয়ের নানান ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে শিশু বা শিক্ষার্থীর মধ্যে সৌন্দর্যবােধের ধারণা গড়ে তােলাও প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য।

[10] শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে বােধ জাগ্রত করা : সমাজে অনুষ্ঠিত কোনাে কাজই ছােটো নয়। এই বােধ জাগ্রত করাও প্রাথমিক শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য।