বৃদ্ধি ও বিকাশের পার্থক্য লেখ | বৃদ্ধি ও বিকাশের সম্পর্ক কি 4 + 4
উত্তর:
বৃদ্ধি ও বিকাশের পার্থক্য
বৃদ্ধি ও বিকাশ এই দুই প্রক্রিয়াই শিশুর জীবন বিকাশে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তথাপি এই দুই প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু প্রভেদ রয়েছে। নিম্নে এদের পার্থক্যগুলি উল্লেখ করা হল—
পার্থক্যের বিষয় | বৃদ্ধি | বিকাশ |
1. সংজ্ঞা | জীবদেহের আকার, আয়তন, ওজন ও উচ্চতার স্বতঃস্ফুর্ত ও স্থায়ী পরিবর্তন হল বৃদ্ধি | | পরিণমন এবং অভিজ্ঞতার ফলশ্রুতি ও হিসেবে ব্যক্তির মধ্যে যে ধারাবাহিক পরিবর্তনঘটে, তাই বিকাশ। |
2. কারণ ও ফল | বৃদ্ধি হল কারণ। | বিকাশ হল ফল |
3. সীমা | বৃদ্ধির বিষয়টি শুধুমাত্র দেহ বা শরীরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। | বিকাশের ধারণায় দেহ, মন, সামাজিক অবস্থা,প্রক্ষোভ সবই অন্তর্ভুক্ত |
4. পরিবর্তনের প্রকৃতি | বৃদ্ধি হল পরিমাণগত পরিবর্তন | বিকাশ হল গুণগত প্রকৃতি। |
5. পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণ | পরিমাপ ও বৃদ্ধি হল পরিমাপযােগ্য। | বিকাশ পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ। |
6. সময়কাল | বৃদ্ধির একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। এর শুরু ও শেষ থাকে। এটি সারাজীবন থাকে। | বিকাশ শিশুর জন্মমুহূর্তথেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে |জীবনব্যাপী ঘটমান প্রক্রিয়া। |
7. ক্ষেত্র বা বৃদ্ধির ক্ষেত্র বা স্থান | বৃদ্ধির ক্ষেত্র বা স্থান অনেকটাই নির্দিষ্ট । যেমন হাতের ব্যায়াম করলে হাতের পেশির বৃদ্ধি যথাযথ হয়। | বিকাশের ক্ষেত্র বা স্থান নির্দিষ্ট নয় কারণ স্থান মানসিক বিকাশের বিষয় অনুশীলন করলে তার প্রতিফলন সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশের। ওপর লক্ষ করা যায়। |
8. স্বতঃস্ফূর্ত / মিথস্ক্রিয়া নির্ভর | স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে। | পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ফলে বিকাশঘটে। |
9. পরিমাপের প্রকৃতি | বৃদ্ধিকে অত্যাধুনিক কৌশলে প্রত্যক্ষ ও নীতিগতভাবে পারিমাপ করা যায় যন্ত্রের মাধ্যামে । | বিকাশকে পরােক্ষ প্রকৃতি ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকভাবে পরিমাপ করা হয় বিভিন্ন অভীক্ষার মাধ্যমে। |
10. তাৎপর্য | বৃদ্ধি বিকাশের একটি বিকাশ অংশমাত্র। এর তাৎপর্য বিকাশের মতাে ব্যাপক ও বিস্তৃত নয় | বিকাশ গুণগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার কার্যক্ষমতার উৎকর্ষ হলেও এর তাৎপর্যঅনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। |
বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক :
ওপরে উল্লিখিত বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে বৈসাদৃশ্য খুবই স্পষ্টভাবে বিশ্লেষিত হলেও বৃদ্ধি এবং বিকাশ প্রক্রিয়ার মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। এ কথা বললে ভুল হবে-না যে, উভয়েই উভয়ের পরিপুরক। শিশু মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা শুরু হয় এবং এক নির্দিষ্ট বয়সের পর বৃদ্ধির পরিসমাপ্তি ঘটে। কিন্তু এ কথা না-বলে বলা উচিত বৃদ্ধি বিকাশের পথকে প্রশস্ত করে এবং মানবজীবন পরিপূর্ণতা পায়। অর্থাৎ, মানুষের জীবন বিকাশের ক্ষেত্রে উভয়েরই অবদান রয়েছে, উভয়ের মধ্যেই এক সহযােগিতাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
পরনির্ভরশীল অপরিণত অসহায় এক ক্ষুদ্র সত্তা নিয়ে শিশু। জন্মগ্রহণ করে। তারপর বৃদ্ধি, বিকাশ ও পরিণমন প্রক্রিয়ার দ্বারা সে পরিণত অবস্থার দিকে এগিয়ে চলে। শুধুমাত্র শিশুর দৈহিক ওজন ও উচ্চতাই জীবন বিকাশের ধারাকে অবিচ্ছিন্ন রাখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, তাই বিভিন্ন বিকাশের মধ্য দিয়ে শিশুর জীবন বিকাশের ধারা অবিচ্ছিন্ন গতিতে এগিয়ে যায় এবং পূর্ণতাদান করে। উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা যায়, একটি শিশু যদি নির্দিষ্ট ওজন ও উচ্চতার অধিকারী না-হয়, তাহলে সে দৈহিক দিক থেকে দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ হবে এবং তখন তার সঞ্চালন, স্মরণশক্তি, চিন্তনশক্তি, কল্পনাশক্তি, যৌক্তিক ক্ষমতা ইত্যাদির বিকাশ পূর্ণতা লাভ করবে না । অর্থাৎ বৃদ্ধি এবং বিকাশ এতটাই ওতপ্রােতভাবে জড়িত যে একটি ব্যতীত অপরটি কোনাে কার্যকারী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে না।
বৃদ্ধির ফলে যে পরিবর্তনগুলি হয়, শিশুর জীবনে সেই পরিবর্তনগুলির প্রকৃত তাৎপর্য বিকাশের দ্বারাই বােঝা যায়। আচরণের পরিবর্তন এবং ব্যক্তিসত্তা গঠনে বৃদ্ধি ও বিকাশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য স্থায়ী, উন্নত এবং সঞ্চালনের ক্ষেত্রেও এই দুই প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষার সমস্ত কিছু আয়ােজন শিশুকে কেন্দ্র করে। যে শিশুকে কেন্দ্র করে সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থা আবর্তিত হচ্ছে, সে প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এই পরিবর্তনের কারণই হল বৃদ্ধি এবং বিকাশ। শিশুর জীবনের ধারাকে নির্ধারিত করছে বৃদ্ধি ও বিকাশ। শুধু তাই নয়, জীবন বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার যে স্তরগুলি নির্ধারিত হয়েছে সেই নির্ধারণের ক্ষেত্রে, শিক্ষার লক্ষ্য, পাঠক্রম, পদ্ধতি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বৃদ্ধি ও বিকাশের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
উপরিলিখিত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বংশধারা ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফলস্বরূপ যে বৃদ্ধি ও বিকাশ তা মানুষের ব্যক্তিসত্তা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতপক্ষে এই ধারণা দুটি পৃথক হলেও এই দুই প্রক্রিয়ারই লক্ষ্য হল শিশুর জীবন বিকাশে সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করা। তাই এই দুই প্রক্রিয়া শুধু যে। পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত তা নয়, একে অপরের পরিপূরক। পরস্পর পরস্পরকে ত্বরান্বিত করে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
Help full for class 11