নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
উত্তর:
নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজ
সভ্যতার ইতিহাসে লিপির আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গেই দেখা দিয়েছে সাক্ষর হওয়ার প্রয়ােজনীয়তা। অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে মানুষ তার অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ কিংবা বিচিত্র অনুভূতিকে স্থায়িত্ব দেয়। নিজের মনের কথা কিংবা কাজের কথাকেও সে ধরে রাখে অক্ষরে। এই অক্ষরের সঙ্গে যার পরিচয় নেই, সে অন্যের কথা যেমন পড়তে পারে না, তেমনই নিজের কথা লিখে জানাতেও পারে না। অর্থাৎ সে নিরক্ষর। সভ্যতার অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড়াে অন্তরায় এই নিরক্ষরতা।
একই সময়ে একই সমাজে বাস করেও একদল মানুষ সাক্ষর এবং একদল মানুষ নিরক্ষর থেকে যায়। এর অন্যতম কারণ সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য। একসময় সমাজের তথাকথিত উচ্চশ্রেণির অর্থবান মানুষ দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষকে শিক্ষার সুযােগ দিতে নিতান্তই অনিচ্ছুক ছিল। অশিক্ষিত দরিদ্র মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নিরক্ষরই থেকে যেত। তাদের নিজেদের মধ্যেও এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে থাকত যে, লেখাপড়া তাদের জন্য নয়। আবার অনেক সময় ইচ্ছে থাকলেও জীবিকার তাড়নায় ছােটোবেলা থেকেই তাদের কোনাে-না-কোনাে কাজে যুক্ত হয়ে পড়তে হত। বর্তমানে এই অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। তবু এখনও বহু মানুষ নিজের সন্তানের লেখাপড়ার কথা ভাবে না। অনেকে পুত্রসন্তানের শিক্ষার কথা ভাবলেও কন্যাসন্তানের শিক্ষার জন্য আদৌ চিন্তিত নয়।
পৃথিবীর যেসব দেশকে আমরা উন্নত দেশ বলে থাকি, সেইসব দেশে নিরক্ষর মানুষ নেই বললেই চলে। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতেও তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়নি। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ যুগ যুগ ধরে জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্য বহন করে এসেছে ঠিকই, কিন্তু আজও তার বুকে নিরক্ষরতার অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতবর্ষে সাক্ষরতার হার ছিল শতকরা ৫২.১১। ভারতবর্ষের কোনাে কোনাে রাজ্য অবশ্য সাক্ষরতায় যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। যেমন, কেরলে সাক্ষরতার হার ৯০ শতাংশের বেশি। এর পরেই আছে মিজোরামের স্থান। পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরতা অভিযানে গুরুত্ব দেওয়ার ফলে সাক্ষরতার হার বেড়েছে। তবু এখনও বহু মানুষ নিরক্ষর। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনায় প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের সাক্ষরতার হার শতকরা ৭৭.০৮।
দেশের মাটি থেকে নিরক্ষরতার কলঙ্ক মুছে ফেলতে হলে বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নিরক্ষরতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের একটি বিশেষ দায়িত্ব আছে। ছাত্রসমাজ প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে আছে তারুণ্যের গতিময়তা এবং প্রবল উদ্যম। তারা নিজেরা শিক্ষিত হবে আর তাদের চারপাশে বহু মানুষ ডুবে থাকবে অজ্ঞানতার অন্ধকারে, তা হয় না। সুতরাং নিজেদের জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি তাদের উচিত অন্যদেরও সাক্ষর করে তোলা। ছাত্রসমাজ সচেষ্ট হলে সাক্ষরতা অভিযান দারুণভাবে সফল হতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস।
নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজকে সুপরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হতে হবে। তাহলে নিজেদের লেখাপড়ার কোনাে ক্ষতি না করেই তারা চারপাশের নিরক্ষর মানুষদের সাক্ষর করে তুলতে পারবে। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী যদি দুজন মানুষকেও সাক্ষর করে তুলতে পারে, তবে তা দেশের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনের একটি অংশ যদি সাক্ষরতার কাজে ব্যয় করে তাহলে অনেক উপকার পাওয়া সম্ভব। কোনাে একটি পরীক্ষার শেষে কিংবা দীর্ঘ কোনাে ছুটিতে নিরক্ষরতা দূরীকরণের বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। তারা যৌথভাবে পড়ানাের দায়িত্ব নিলে ভালাে ফল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। উচ্চশ্রেণির পাঠক্রমের একটি অংশ হিসেবে সাক্ষরতা কর্মসূচিকে যুক্ত করার কথা ভাবা যেতে পারে। অর্থাৎ, নিরক্ষরতা দূরীকরণে অংশ নেওয়া তখন প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর একটি আবশ্যিক কাজ হিসেবে গণ্য হবে এবং কে কতখানি ভালাে শেখাতে পারছে তারও একটি মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা যাবে। আমাদের ধারণা এতে সুফল পাওয়া যাবেই।
জ্ঞান-বিজ্ঞানে মানুষের অগ্রগতি আজ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। অথচ এখনও বহু মানুষ নিজের নাম পর্যন্ত লিখতে জানেন না। এই অবস্থার অবসান ঘটানাের লক্ষ্যে ছাত্রসমাজ যদি এগিয়ে আসে তাহলে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে।
না।
আরো পড়ুন
দেশপ্রেম বনাম বিশ্বপ্রেম | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরােধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিশ্ব উষ্ণায়ন | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।