প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা স্বদেশ – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
স্বদেশ
ইংরেজ আমলে প্রবর্তিত যে শিক্ষাব্যবস্থা, তার ভালো দিককে গ্রহণ করার বদলে আমরা কেবল তার চটক আর আড়ম্বরকেই বেশি করে গ্রহণ করেছি। ফলে শিক্ষা বলতে আমরা বুঝেছি পাঠ্যপুস্তক, ক্লাসরুম ইত্যাদি উপকরণকে। আমাদের শিক্ষা হয়েছে মুখস্থনির্ভর এবং চর্বিতচর্বণ। নোটের বোঝা মাথায় নিয়ে পথ চলছে এ যুগের শিক্ষার্থী। যেখানে শুধুমাত্র শিক্ষার গলাধঃকরণ ও বমন হয়, কিন্তু ধারণ হয় না। তাই শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীর অন্তরের সংযোগ তৈরি হয় না । একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষার অঙ্গনে মজুরগিরি করেই কাটাতে হয়। পরিচালক হয়ে ওঠা তার পক্ষে আর সম্ভব হয় না।
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রচলনের মাধ্যমে শিক্ষায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। টোল-চতুষ্পাঠীর যুগ পেরিয়ে গোটা পৃথিবীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আমন্ত্রণ ছিল সেখানে। হাজার বছরের রুদ্ধ চেতনার অবসানে নবচেতনার সূর্যোদয়ের সম্ভাবনা ছিল সেখানে। কিন্তু বাস্তবে যা দেখা গেল তা ছিল পাশ্চাত্যের শিক্ষার মূল বিষয়কে অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে তার বাইরের আড়ম্বরকে গ্রহণ করা। উনিশ শতকের কলকাতা এই বিকৃতিকে দেখেছে। এর প্রধান প্ৰকাশ ঘটেছিল ঐতিহ্যকে অস্বীকারের মধ্য দিয়ে। দেশের যা কিছু আছে সবই খারাপ, এরকম একটা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ আর যাই হোক প্রকৃত শিক্ষায় সাহায্য করতে পারে না। ঐতিহ্যের সঙ্গে ভবিষ্যৎ যখন মিলে যায়, তখনই সামনের দিকে চলার পথ প্রশস্ত হয়।
সময় পালটালেও অবস্থা পালটায়নি। বহু বাঙালি আজও বাংলা ভাষাকে তাচ্ছিল্যের চোখে দেখেন। বাংলায় তারা ততটা স্বচ্ছন্দ নন, একথা বলতে একধরনের গৌরব উপলব্ধি করেন। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে নিজভূমে পরবাসী হওয়াই বাঙালির একমাত্র ভবিষ্যৎ। শিক্ষা বলতে বাঙালি আজ বোঝে পাঠক্রম শেষ করে পরীক্ষায় পাস করে একটা শংসাপত্র অর্জন করে চাকরির চেষ্টা করা। যে শিক্ষা জ্ঞানের আলো ছড়ায় তার সঙ্গে এই প্রথাগত শিক্ষার কোনো সংযোগ নেই। মধ্যমেধার ছেলেমেয়েরা শুধু চাকরির আশায় লেখাপড়া শেখে। সেখানে জ্ঞানের সন্ধান করা বাতুলতা মাত্ৰ ৷
শিক্ষাকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। প্রকৃত শিক্ষা মুখস্থ বা অনুকরণের বিষয় নয়, তা আত্মস্থ করার বিষয়। সে শিক্ষা সামাজিক হওয়ার, মনুষ্যত্ববোধে উদ্দীপ্ত হওয়ার। মনের সঙ্গে শিক্ষার সংযোগ জরুরি। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্বন্দ্ব অপেক্ষা তাদের সমন্বয়কে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে, তাহলেই শিক্ষা সম্পূর্ণতা পাবে। আর প্রকৃত শিক্ষাই গড়ে তুলবে প্রকৃত মানুষ ।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।