ছুটির দিন
ভূমিকা: একটানা পড়াশােনার সুকঠিন একঘেয়েমির ভিতর এসে হাজির হয়ে গেল অপ্রত্যাশিত একটি ছুটির দিন। গুমােট গরমের পর যেন একপশলা বৃষ্টি। মনের ভিতর রবীন্দ্রনাথের ওই গানটি বারবারই ধ্রুপদী সংগীত হয়ে বাজতে লাগল—
“কী করি আজ ভেবে না পাই,
পথ হারিয়ে কোন্ বনে যাই।”
ছাত্রজীবনে ক্রমবর্ধমান পড়ার চাপ। ভালাে রেজাল্টের জন্য শুধু পড়া আর পড়া। সাহিত্য, ভূগােল, অঙ্ক—কোনাে বিষয়কে বাদ দেওয়ার নেই।
সেদিন স্কুলে গিয়ে শুনলাম জেলা টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে স্কুল কাপ’ জিতে এসেছে। সুতরাং ওই অসাধারণ সাফল্যের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে স্কুলে।
ছুটির দিনটি অতিবাহিত করবার পরিকল্পনা : স্কুলে এসে জানা গেল এই ছুটির খবর। এখন কী করা যায়? এমন সময় দেবদূতের মতাে আমাদের বাংলা শিক্ষকমশায়ের সঙ্গে দেখা। তিনি আমাদের মনের কথা বুঝতে পেরে বললেন, যদি তােমরা বাড়ি ফিরে না যাও, তাহলে আমি তােমাদেরকে এক জায়গায় নিয়ে যেতে পারি। যারা যেতে চাও আমার সঙ্গে এসাে এবং বাড়িতে জানিয়ে দাও। বাড়িতে জানিয়ে দিলাম। মনের ভিতর একটা খুশির ভাব আমাদেরকে অধীর করে তুলল।
মাস্টারমশায়কে নিয়ে ‘মিলেনিয়াম পাকে’ যাওয়া: গঙ্গার বুকে লঞ্চে চেপে আমরা গঙ্গাতীরের বিশেষ একটি জায়গায় গিয়ে হাজির হলাম। জায়গাটির নাম, ফেয়ারলি প্লেস’। তখন দুপুরবেলা। তেমন ভিড়ভাট্টা নেই। মাস্টারমশাই ঈষৎ গম্ভীর স্বরে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘চেনাে নাকি এই বাগানটা?—জান কি এর নাম?—এর নাম হল মিলেনিয়াম পার্ক। নদীতীরে এমন একটি সুন্দর বাগান আমরা জীবনে দেখিনি। গভীর। বিস্ময়ে আমরা তাকিয়ে থাকলাম পার্কটির দিকে।
মিলেনিয়াম পার্কের বর্ণনা : পার্কের ভিতরে ঢােকার পর বিস্ময় আরও বেড়ে গেল। মাঝখান দিয়ে রঙিন পাথরে বাঁধানাে রাস্তা। দু-পাশে নানা বর্ণের ফুলের গাছ। কেবল ফুলগাছ নয়, রয়েছে লতাবিতান। একপাশে শহর কলকাতার স্ট্র্যান্ড রােড, অন্যপাশে প্রবাহিত গঙ্গানদী। দুপুরের রােদ ঝিলিক দিচ্ছে গঙ্গার তরঙ্গমালায়। একঝাক গাঙচিল উড়ছে। জাহাজের মাথায়। মাথার উপর বিশাল আকাশের চন্দ্রাতপ। এই চন্দ্রাতপে সাদা সাদা মেঘের ফালি। সূর্যের আলােয় সেখানে চলছে মেঘ ও রৌদ্রের খেলা। নদীর বুক থেকে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়ে আসছে মৃদু শান্ত সমীরণ।
সৌন্দর্য উপভােগ : গঙ্গা চিরকাল আমার মনকে টানে। এই পার্কের পাস দিয়ে ভারতের প্রাণপ্রবাহিনী গঙ্গা বয়ে চলেছে। গঙ্গার হাওয়ায় আমার শরীর-মন জুড়িয়ে গেল। গঙ্গার বুকে ভেসে চলা ছােটো-বড়াে নৌকাগুলি আমাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তাদের পাল তুলে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আমার মন কেমন উদাস হয়ে পড়ল। শেষ দুপুরটা আমরা এই নদীতীরেই কাটালাম। মাথার উপর যে সূর্য ছিল, তা পশ্চিমে ঢলে পড়ল। পার্কের গাছে গাছে শােনা গেল পাখির কিচিরমিচির। ওপারের গঙ্গাতীরের কারখানার একটি কল থেকে ভো বাজল। পশ্চিমের আকাশে ধরল লাল রং। ওই পার্কটি আমাদের মনকে এমনভাবে রাঙিয়ে তুলল, যা কোনােদিন ভুলব না, কোনােদিন না।
উপসংহার : ছকবাঁধা জীবনের ফাঁকে হঠাৎ আসা একটি ছুটির দিন আমাদের কাছে বহন করে নিয়ে এল একটি নতুন উপহার। অপরাহু বেলায় আমরা ফিরে এলাম নিজের নিজের বাড়িতে। ফিরে এলাম ছুটির দিনের বুকভরা আনন্দের উপহার নিয়ে।
আরো পড়ুন
একটি উৎসব স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলো – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
বিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
একটি ঝড়ের রাত – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।