বিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

বিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি

ভূমিকা : আমার বিদ্যালয় আমার দ্বিতীয় গৃহ, স্নেহময়ী জননী। মা যেমন সােহাগে-আদরে-শাসনে-সাহচর্যে গৃহের মধ্যে আমাকে আপন করে জড়িয়ে ধরে রাখেন, বিদ্যালয়ও তেমনি আমার শৈশব-কৈশােরের দিনগুলিকে বড়াে মমতায় জড়িয়ে ধরে রেখেছে। বিদ্যাশিক্ষার সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার প্রাণের সম্পর্ক। বিদ্যালয় আমার প্রাণের আরাম, মনের বিকাশকেন্দ্র। 

বিদ্যালয় ভবন ও ঐতিহ্য : আমি একটি গ্রামের স্কুলের ছাত্র। গ্রামের স্কুল হলেও, আমাদের স্কুলটি বেশ পুরােনাে। আমাদের বিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান হয়ে গেছে। বিদ্যাসাগরমশায়েরই অনুরােধে এক অপুত্রক জমিদার এই বিদ্যালয়টি একদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই ভবনটিতে বিরাট বিরাট ঘর। বড়াে বড়াে দরজা-জানলা; আলাে-বাতাস অবাধ। কত ছাত্র এখানে এসেছেন—পড়াশােনা করে বড়াে হয়েছেন। তাদের কাছে এই বিদ্যালয় মন্দির’ হয়ে আছে। স্কুল থেকে বিদায় নেওয়ার প্রাক্কালে বহু কথা মনে পড়ছে।

বিদ্যালয়ে প্রতিদিন : সকাল দশটা থেকে আমাদের ক্লাস আরম্ভ হয়। ঢং ঢং করে ঘণ্টা পড়ে। প্রতিদিন ক্লাস আরম্ভ হওয়ার আগে প্রার্থনা হয়। চারটে পিরিয়ড হওয়ার পর টিফিন হয়। টিফিনের পর হয় আরও তিনটি ক্লাস। মাস্টারমশাইরা অতি দক্ষ। আমাদের হেড মাস্টারমশাই বেশ রাশভারী লােক। তাঁর চেহারাটি অবিকল ‘ফার্স্ট বুক অফ রিডিং’-এর পিয়ারীচরণ সরকারের মতাে। উঁচু ক্লাসে উনি আমাদের ইংরেজি পড়াতেন। 

শিক্ষকদের কথা : স্কুলে সবচেয়ে ভালােলাগত বাংলার স্যারকে। ধুতি-পাঞ্জাবি পরে আসতেন। পাটভাঙা পরিষ্কার জামাকাপড়। সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতাে মিশতেন। তাঁর অমায়িক ব্যবহারের জন্য স্কুলে তিনি খুব জনপ্রিয় ছিলেন। উনি আমাদের মধ্যে একটু একটু করে তৈরি করেছিলেন সাহিত্যবােধ। ওঁর কাছ থেকেই আমরা মধুসূদন দত্ত এবং রবীন্দ্রনাথের কবিতা বুঝতে শিখেছিলাম। আধুনিক কবি-সাহিত্যিকদের লেখার প্রতি আগ্রহও, মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকেই পাওয়া। এ ছাড়া অঙ্কের মাস্টারমশাইও আমাদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন একেবারে দাদার মতাে। উনি ছিলেন সহজ ও অমায়িক। অঙ্কের মাস্টারমশাই হলেও ওঁর সাহিত্যবােধ ও রসবােধ কিছু কম ছিল না। আজ ওনাকে নিয়ে আমার কত কথাই-না মনে পড়ছে। 

অনুষ্ঠান: সেই বাংলার মাস্টারমশাইয়ের মুখেই আমি প্রথম রবীন্দ্রনাথের শাজাহান’ কবিতার আবৃত্তি শুনেছিলাম বিমুগ্ধ চিত্তে। পঁচিশে বৈশাখ ছিল সেই দিনটি। তখন আমাদের মর্নিং স্কুল। রজনীগন্ধা দিয়ে আমরা রবীন্দ্রনাথের ছবি সাজিয়েছিলাম। আমার বিদ্যালয়জীবন এমনই নানান স্মৃতির মালায় গাঁথা। সেইসব স্মৃতি এখনও আমার মনের মণিকোঠায় সযত্নে রক্ষিত।

উপসংহার : বিদ্যালয় ও আমার ভবিষ্যৎ : আমার বিদ্যালয় জীবন নাটকীয় না-হলেও ঘটনাবহুল। খেলাধুলা, নাটকাভিনয়, আবৃত্তি ইত্যাদি ‘সিলেবাস’ বহির্ভূত কাজে আমার উৎসাহ ছিল প্রচুর। অনেক দুষ্টুমির নায়ক ছিলাম আমি। এইসব দুষ্টুমির জন্য শাস্তি কম পাইনি। তবে এর জন্য আমি দুঃখবােধ করি না। বিদ্যালয়ের বনমহােৎসবের সময় আমরা অনেক গাছ লাগিয়েছিলাম, তাদের কোনাে-কোনােটি বেশ বড়াে হয়েছে। ঠিক কোন গাছটির মতাে আমার ভবিষ্যৎ হবে, এখনও তা জানি না। মাস্টারমশাই আর বিদ্যালয়ের সুনামের জন্য আমাকে মানুষ হতেই হবে। বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদের ওপর অনেকখানি বর্তায়। নতুবা মায়ের সুনাম রাখব কী করে? আমার বিদ্যালয় হল, আমার আর-এক মা। আমার অন্তরের চেতনার জন্মদাত্রী, তাকে মুহুর্তের জন্যও ভােলা যায় না।

আরো পড়ুন

শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলো  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি ঝড়ের রাত – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি বৃষ্টিমুখর দিনের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি নির্জন দুপুর – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!