শিক্ষায় ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে

শিক্ষায় ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে। 4 + 4  Class 11 | শিক্ষার ধারণা ও লক্ষ্য (Education) 8 Marks

উত্তর:

শিক্ষায় ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য : শিক্ষায় ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য দার্শনিক, জৈবিক ও মনােবৈজ্ঞানিক দিকের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদীদের মতে, শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল ব্যক্তির সম্ভাবনাময় ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশসাধন। এই লক্ষ্যের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য, হল-(i) শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে শিক্ষার্থী বা ব্যক্তি। শিক্ষার্থীকে ভিত্তি করেই শিক্ষার উদ্দেশ্য নিরুপণ করা হবে। (ii) এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির তুলনায় কিছুটা আলাদা। তাই ব্যক্তি বৈষম্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। (iii) সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে ব্যক্তির চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। (iv) ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা চাহিদা-প্রবণতা ইত্যাদির প্রতি নজর দিয়ে তার বিকাশের জন্য অগ্রসর হতে হবে।

শিক্ষায় ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা : শিক্ষায় ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধাগুলি হল— 

[1] সুপ্ত গুণাবলির বিকাশসাধন : প্রতিটি মানবশিশুই জন্মের সময় কতকগুলি বৈশিষ্ট্য নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়। ওই বৈশিষ্ট্যগুলি সুপ্ত অবস্থায় থাকে। শিক্ষার কাজ ওই সুপ্ত গুণাবলির বিকাশসাধনে সহায়তা করা।

[2] সমাজ পরিবেশের বাইরে শিক্ষার ব্যবস্থা : জন্মলগ্নে প্রতিটি শিশুই নিষ্কলুষ অবস্থায় থাকে। সমাজের বিভিন্ন ঘটনা, ঘাত-প্রতিঘাত তাকে ধীরে ধীরে কলুষিত করে তােলে। তাই ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদীরা মনে করেন, সমাজ পরিবেশের বাইরে তাকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার মাধ্যমে বিকশিত হওয়ার সুযােগ দিলে সে উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে উঠবে। 

[3] ব্যক্তিগত বৈষম্য অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা : ব্যক্তিমাত্রেই একক সত্তার অধিকারী। তাই দলগতভাবে একাধিক ব্যক্তিকে একসঙ্গে শিক্ষার আঙিনায় না-এনে ব্যক্তিকেন্দ্রিকভাবে এক-একটি ব্যক্তিকে বিকশিত হওয়ার সুযােগ দিলে তাদের প্রত্যেকের মধ্যে স্বকীয়তা বজায় থাকবে এবং তারা আপন আপন প্রবণতা অনুযায়ী বেড়ে ওঠার সুযােগ পাবে। 

[4] আত্মোপলদ্ধি ও আত্নপ্রকাশে সহায়তা: শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল আত্মােপলদ্ধি। প্রাচীন যুগের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর আত্মােপলব্বি ও আত্মপ্রকাশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হত। আত্মােপলব্বির মধ্যে দিয়েই ব্যক্তির মধ্যে পরিপূর্ণতা আসে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার মাধ্যমেই আত্মােপলব্ধির কাজটি সহজে সম্পাদন করা যায়। আত্মােপলব্ধির মধ্য দিয়েই ব্যক্তি নিজেকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে। 

[5] ব্যক্তিগত বিকাশের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা : যে-কোনাে দেশের সামাজিক উন্নয়ন সেই দেশের সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিদের গুণগত মানের দ্বারা নির্ধারিত হয়। সেই কারণে ব্যক্তিগত বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করলে, সমাজের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। 

[6] সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশে সহায়তা : ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষায় যেহেতু প্রতিটি ব্যক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে তার শিখন ও শিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, সেহেতু প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে কী ধরনের সৃজনশীল ক্ষমতা রয়েছে, সেটাও জানতে পারা যায়। এর মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তিকে আরও বেশি করে সৃষ্টিধর্মী কাজে উদ্বুদ্ধ করে তােলা যায়।

শিক্ষায় ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের অসুবিধা : শিক্ষায় ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতাগুলি হল : 

[1] স্বার্থপর ও আত্নকেন্দ্রিক হয়ে ওঠার শিক্ষা : ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষায় ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার কাজ পরিচালিত হয়। অধিকমাত্রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক করে তােলে। এর ফলে ব্যক্তি সমাজ, দেশ প্রভৃতির কল্যাণকে অবজ্ঞা করে কেবল নিজের কল্যাণেই ব্যস্ত থাকে। 

[2] স্বাধীনতার অপব্যবহার : ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যক্তিকে সব ধরনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ব্যক্তি অবাধ স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে জীবনযাপন করে। এটি ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের পক্ষে ক্ষতিকর।

[3] বাস্তবায়নে অসুবিধা: ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষা সমাজের মধ্যেই বাস্তবায়িত হয়। তাই ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষা পরােক্ষভাবে সমাজের ওপর নির্ভরশীল। সঠিক অর্থে, সমাজ বাদ দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিতান্ত্রিক বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

[4] ব্যয়বহুল শিক্ষা : শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যে ব্যক্তিগত বৈষম্যের প্রতি নজর দিয়ে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আলাদা আলাদা ভাবে শিক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আলাদা আলাদাভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা করা। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং জটিল। 

[5] সমাজের অগ্রগতি অবহেলিত : ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষায় ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যক্তির উন্নয়ন বা বিকাশের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সমাজকে উপেক্ষা করা হয়েছে। সমাজকে অবহেলা করে ব্যক্তির যথাযথ বিকাশ অসম্ভব।

[6] অমনােবৈজ্ঞানিক শিক্ষা : ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থনে মনােবৈজ্ঞানিক যে তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়, তা পুরােপুরি ত্রুটিমুক্ত নয়। কারণ ব্যক্তি ও সমাজ-পরিবেশের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলেই ব্যক্তির শিখন পরিপূর্ণতা লাভ করে এবং সে একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। 

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা ও অসুবিধাগুলির আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, শুধুমাত্র ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের মাধ্যমে শিক্ষার উদ্দেশ্যসাধন ও আধুনিক লক্ষ্য পরিপূরণ তথা জাতীয় বিকাশ অসম্ভব। এর জন্য ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment