প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কাকে বলে | প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে আলোচনা করো

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কাকে বলে | প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে আলোচনা করো

উত্তর : 

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা :

নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত প্রাথমিক শিক্ষা শুরুর আগের পর্যায়কে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বলে। এই শিক্ষা মূলত দুই বা তিন বছর বয়সে শুরু হয় এবং ছয় বছর বয়সের আগেই শেষ হয়। সংক্ষেপে বলা যায়, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা হল শিক্ষার সেই স্তর যেখানে শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ ঘটে এবং তাকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের উপযােগী করে তােলা হয়।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম :

প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনাে বৌদ্ধিক কার্যাবলিকে পাঠক্রমে স্থান দেওয়া হয় না l কেবলমাত্র শিশুকে পরিবেশের সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিচিত করার উপযোগী বিষয়কে পাঠক্রমে রাখা হয়। সাধারণভাবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে যে বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তা হল —

[1] দৈহিক বিকাশের উপযােগী কার্যাবলি : শিশুর দৈহিক বিকাশের প্রতি নজর দেওয়ার উদ্দেশ্যে খেলাধুলাে, ব্যায়াম, দৌড়ঝাঁপ, আসন, নাচ, গান ব্রতচারী প্রভৃতিকে পাঠক্রমে রাখা হয়। 

[2] স্বাস্থ্যবিষয়ক কার্যাবলি : শিশুর মধ্যে যাতে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের সুঅভ্যাস গড়ে ওঠে, তার জন্য শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, নিয়মিত দাঁত মাজা, সঠিক স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করা, পােশাক-পরিচ্ছদ নােংরা না-করা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। 

[3] পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার কার্যাবলি : ছােটো থেকেই নিজের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি যাতে সুঅভ্যাস গড়ে ওঠে তার জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার রাখার বিষয়টিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

[4] সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশে সহায়ক কার্যাবলি : শিশুদের মধ্যে যেসব সৃজনশীল ক্ষমতা সুপ্ত অবস্থায় থাকে, সেগুলির বিকাশের জন্য এই পর্যায়ের পাঠক্রমে ছবি আঁকা, মাটির কাজ, ছবি সংগ্রহ, নিজের হাতে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

[5] প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ বিষয়ক কার্যাবলি : প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান ও ঘটনার সঙ্গে শিশুর পরিচয় ঘটানাের জন্য এবং শিশুর মধ্যে সৌন্দর্যবােধের বিকাশ ঘটানাের উদ্দেশ্যে গাছপালা, নদীনালা, পশুপাখি, পাহাড়-পর্বত, মাটি, আকাশ প্রভৃতি বিষয়কে পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে পাঠক্রমে রাখা হয়। 

[6] ভাষাবােধ গঠনমূলক কার্যাবলি : শিশুর মধ্যে ভাষাশিক্ষার সূচনা হিসেবে অক্ষর পরিচয়, লিখতে এবং পড়তে শেখানাের সঙ্গে সঙ্গে গল্প বলা, গল্প শােনা, অভিনয় করা প্রভৃতি অভ্যাস গড়ে তােলার চেষ্টা করা হয়। 

[7] শিক্ষাবিষয়ক কার্যাবলি : প্রাক-প্রাথমিক স্তরের পাঠক্রমে সরল গণিত শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মুখে মুখে গণনা করতে শেখানাে, কোনাে কিছুকে চোখে দেখে কম বা বেশির ধারণা গঠন প্রভৃতিকেও পাঠক্রমে রাখা হয়। 

[8] সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যাবলি : শিশুকে সামাজিক করে তােলার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দলগত কার্যাবলিকে পাঠক্রমে স্থান দেওয়া হয়। যেমন—একত্রে খেলা, টিফিন খাওয়া, বেড়ানাে ইত্যাদি। 

প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমের কার্যাবলি 

দৈহিক কার্যাবলি → ব্যায়াম, নাচ, আসন
ক্রীড়াভিত্তিক কার্যাবলি→ খেলা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন
ইন্দ্রিয়মূলক কার্যাবলি→ উপকরণ দিয়ে কিছু তৈরি করা
শিক্ষা-বিষয়ক কার্যাবলি→ গণনা, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ
পরিশ্রমমূলক কার্যাবলি→ বাগান তৈরি
আত্মবিশ্বাসমূলক কার্যাবলি→ শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার, জামা কাপড় পরিধান
সৃজনাত্মক কার্যাবলি→ আঁকা, গান, অভিনয়

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment