প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা করো

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা করো

উত্তর : 

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য : 

বর্তমানে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই শিক্ষার ক্ষেত্রেও কতকগুলি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শিক্ষাপ্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়— 

[1] দৈহিক বিকাশ : প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুর দৈহিক বিকাশের প্রতি নজর দেওয়া হয়। এই পর্যায়ের মূল উদ্দেশ্য হল শিশুর দৈহিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তাদান করা। কারণ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য দৈহিক স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। 

[2] মানসিক বিকাশ : এই পর্যায়ের শিক্ষার অন্য একটি উদ্দেশ্য হল শিশুর মানসিক বিকাশ যাতে যথাযথভাবে ঘটতে পারে সে-বিষয়ে সহায়তা করা। 

[3] প্রক্ষোভিক বিকাশ : প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুর প্রক্ষোভগুলি অসংযত, অনিয়ন্ত্রিত এবং অসংগঠিত অবস্থায় থাকে। এই পর্যায়ের শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুর অসংযত এবং অনিয়ন্ত্রিত প্রক্ষোভগুলিকে শিক্ষণের মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। এই পর্যায় থেকে শিশুর প্রক্ষোভগুলিকে যদি সঠিক পথে পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত করা না-যায়, তাহলে শিশু সমাজের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। 

[4] সামাজিক বিকাশ : এই পর্যায়ে শিশু পরিবার থেকে প্রথম বিদ্যালয় সমাজে পা রাখে। নানা ধরনের শিশু একত্রে মেলামেশা করে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটে। এই প্রভাব যাতে শিশু ও সমাজ উভয়ের ক্ষেত্রে মঙ্গলময় হয়ে ওঠে সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। 

[5] নান্দনিক বিকাশ : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অন্য একটি লক্ষ্য হল শিশুর নান্দনিক বিকাশে সহায়তা করা। শিশু যাতে সুন্দরের প্রতি আকৃষ্ট হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়। 

[6] আগ্রহের বিকাশ : প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই অজানাকে জানার প্রতি এক বিশেষ ধরনের আগ্রহ থাকে। প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষায় শিশুর আগ্রহ বা চাহিদা পূরণের জন্য ওই বয়সের উপযােগী বিভিন্ন বিষয়বস্তুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

[7] ভাষার বিকাশ : এই পর্যায়ের শিশুদের ভাষাগত দিক দিয়ে নির্ভুল শিক্ষাদান করা দরকার। সেই কারণে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ভাষার বিকাশের ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। 

[8] সু-অভ্যাস গঠন : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিশুর মধ্যে সু-অভ্যাস গঠনে সহায়তা করা। কারণ এই পর্যায়ে গড়ে ওঠা সু-অভ্যাসগুলি প্রায় সারা জীবন ধরে ব্যক্তির মধ্যে থেকে যায়। একবার কু-অভ্যাস গড়ে উঠলে সহজে তাকে ত্যাগ করা যায় না। 

[9] নৈতিক বিকাশ : শিশুর মধ্যে নৈতিক মূল্যবােধ গড়ে তােলার উপযুক্ত সময় হল প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়। এই সময়ে ভালাে, মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি বােধগুলি বিকশিত হলে তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে আদর্শগত দিক থেকে কোনাে সমস্যা সৃষ্টি হয় না।

[10] গণতান্ত্রিকতার বিকাশ : প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিশুকে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে শেখাতে হয়, তাহলেই সে আগামী দিনে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উপযােগী একজন সুযােগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment