সংবেদন কত প্রকার ও কী কী | সংক্ষেপে আলােচনা করাে
উত্তর :
সংবেদন-এর প্রকারভেদ :
সংবেদনকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা — (1) ইন্দ্রিয় বা বিশেষ সংবেদন, (2) দৈহিক বা যান্ত্রিক সংবেদন, (3) পেশিগত সংবেদন।
নীচে এই তিনটি বিভাগের সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল —
[1] ইন্দ্রিয় বা বিশেষ সংবেদন :
চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ত্বক ও জিহ্বার মাধ্যমে যে সংবেদন সৃষ্টি হয়, তাই হল ইন্দ্রিয় সংবেদন বা বিশেষ সংবেদন। আমাদের প ইন্দ্রিয় হল—চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ত্বক ও জিহ্বা। এই পাঁচটির মধ্যে যে-কোনাে একটি উদ্দীপিত হলে এবং সেই উদ্দীপনা স্নায়ুপথে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌছােলে ইন্দ্রিয় বা বিশেষ সংবেদন ঘটে। পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কিন্তু পাঁচ ধরনের সংবেদন হয়। যেমন— চক্ষর মাধ্যমে দর্শনমূলক সংবেদন, কর্ণের মাধ্যমে শ্রবণমূলক সংবেদন, নাসিকার মাধ্যমে ঘ্রাণমূলক সংবেদন, ত্বকের মাধ্যমে স্পর্শজাত সংবেদন এবং জিহ্বার মাধ্যমে স্বাদশমূলক সংবেদন সষ্টি হয়। ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে আমরা বাহ্যিক পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করি। এই ধরনের সংবেদনের মধ্যে গুণগত এবং পরিমাণগত উভয় ধরনের পার্থক্যই থাকে।
বৈশিষ্ট্য : ইন্দ্রিয় সংবেদন বা বিশেষ সংবেদন-এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল—(i) পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের যে-কোনাে একটি উদ্দীপিত হলে এই জাতীয় সংবেদন সৃষ্টি হয়। (ii) এইপ্রকার সংবেদনের মাধ্যমে বাইরের পরিবেশ সম্পর্কে বা বহির্জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ হয়। (iii) বিভিন্ন ইন্দ্রিয়কে উদ্দীপিত করার জন্য নির্দিষ্ট উদ্দীপকের প্রয়ােজন হয়। যেমন শব্দ স্বাদেন্দ্রিয় উদ্দীপিত করতে পারে না। (iv) পাঁচটি ইন্দ্রিয় থেকে প্রাপ্ত সংবেদনগুলিকে পৃথকভাবে শনাক্ত করা যায়। (v) এইপ্রকার সংবেদনের মধ্যে পরিমাণগত ও গুণগত বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
[2] দৈহিক বা যান্ত্রিক সংবেদন :
দেহ-যন্ত্রের ভেতরে পরিবর্তন ঘটার ফলে যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় সেই উদ্দীপনা অন্তর্বাহী নার্ভপথে সঞ্চালিত হয়ে মস্তিষ্কে পৌছেলে যে ধরনের সংবেদনের উদ্ভব ঘটে তাকে দৈহিক বা যান্ত্রিক সংবেদন বলে। এই জাতীয় সংবেদন দেহ-যন্ত্রের ভেতরের অংশের পরিবর্তনের জন্য উদ্ভূত হয় বলে, একে যান্ত্রিক সংবেদন বলা হয়। ক্ষুধা, তৃয়া, ক্লান্তি ইত্যাদি হল দৈহিক বা যান্ত্রিক সংবেদনের উদাহরণ।
বৈশিষ্ট্য : (i) দৈহিক বা যান্ত্রিক সংবেদনের উদ্দীপক দেহের মধ্যে উপস্থিত থাকে। দেহের বাইরে থাকে না। (ii) দেহের ভেতরে কী জাতীয় পরিবর্তন ঘটছে, তা জানার জন্য দৈহিক বা যান্ত্রিক সংবেদনের ওপর নির্ভর করতে হয়। (ii) এই জাতীয় সংবেদন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্পষ্ট ও অনির্দিষ্ট প্রকৃতির হয়। (iv) এই জাতীয় সংবেদন ব্যক্তির মধ্যে সুখ, দুঃখ, ইচ্ছা ইত্যাদি অনুভূতির সৃষ্টি করে। (v) এগুলি আদিমতম সংবেদন, উন্নত ধরনের সব প্রাণীতেই এটি দেখা যায়।
[3] পেশিগত সংবেদন :
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঙ্ালনের ক্ষেত্রে প্রাণীর পেশি, অস্থিবন্ধনী এবং অস্থি সন্ধি থেকে যে সংবেদন সৃষ্টি হয়, সেগুলিই হল পেশিগত সংবেদন। মানবদেহে তিন ধরনের পেশি লক্ষ করা যায়। এগুলি হল ঐচ্ছিক পেশি, অনৈচ্ছিক পেশি এবং হৃৎপেশি। এই তিন ধরনের পেশি সংকোচন, প্রসারণের ক্ষেত্রেই সংবেদন সৃষ্টি হতে পারে। পেশিগত সংবেদন খুবই জটিল সংবেদন। এই সংবেদনকে বিশ্লেষণ করলে তিনটি ভিন্ন অভিমুখের সন্ধান পাওয়া যায়। ওইগুলি হল—(1) শক্তি প্রয়ােগজনিত সংবেদন। (2) চেষ্টীয় সংবেদন এবং (3) পার্শ্বীয় সংবেদন।
বৈশিষ্ট্য : (1) প্রাণীদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে পেশির সংকোচন ও প্রসারণের ফলে এই সংবেদন সৃষ্টি হয়। (2) পেশি ছাড়াও অস্থিবন্ধনী এবং অস্থিসন্ধিতে এই সংবেদন। সৃষ্টি হয়। (3) এই সংবেদন, ইন্দ্রিয় সংবেদন ও দেহজ সংবেদনের তুলনায় জটিল প্রকৃতির।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।