পাঠক্রম বলতে কী বােঝ | পাঠক্রম গঠনের উপাদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে
উত্তর :
পাঠক্রম :
(i) পাঠক্রম বলতে শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে অর্জিত সব রকমের অভিজ্ঞতাকে বােঝায়, যা শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে বা শ্রেণিকক্ষের বাইরে অর্জন করে।
(ii) বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পেইনি (Payne)-এর মতে, ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক বিকাশ ও তাদের মধ্যে আচরণের পরিবর্তনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসকল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় এবং সচেতনভাবে পরিচালনা করা হয়, তাদের সমন্বিত রূপই হল পাঠক্রম।
(iii) আধুনিক ধারণা অনুযায়ী, ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের স্বার্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকার পরিচালনায় যা শেখে বা অর্জন করে, তাই হল পাঠক্রম।
(iv) মনােবিদ ক্রো অ্যান্ড ক্রো-এর মতে, পাঠক্রম বলতে শিক্ষার্থীদের সেইসকল অভিজ্ঞতাগুলিকে বােঝানাে হয়, যা বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা তাদেরকে মানসিক, শারীরিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দিক বিকশিত হতে সাহায্য করে।
পাঠক্রম গঠনের উপাদান :
পাঠক্রম গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি হল : বিষয়বস্তুর প্রকৃতি, শিক্ষার্থীর বিকাশ, সামাজিক বিষয়, অর্থনৈতিক বিষয়, পরিবেশগত বিষয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়, শিক্ষক সম্পর্কিত বিষয় ইত্যাদি। নীচে এগুলির সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল :
[1] বিষয়ববস্তুর প্রকৃতি : পাঠক্রমে নানান বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন—সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস, ভূগােল ইত্যাদি। এই বিষয়গুলির প্রত্যেকটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বর্তমান। পাঠক্রম প্রণয়নকারীদের এই বিষয়গুলির সম্পর্কে খুঁটিনাটি জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
[2] শিক্ষার্থীর বিকাশ : পাঠক্রম প্রণয়নের সময় শিক্ষার্থীর বিকাশ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা দরকার। শিক্ষার কোন্ পর্যায়ের জন্য পাঠক্রম প্রণয়ন করা হচ্ছে, সেই পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরিণমনের স্তর কী অবস্থায় রয়েছে, তাদের ক্ষমতা, সামর্থ্য ও আগ্রহের প্রকৃতি কেমন—ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা দরকার। শিক্ষার্থীর শারীরিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ, প্রাক্ষোভিক বিকাশ, সামাজিক বিকাশ, বৌদ্ধিক বিকাশ, নৈতিক বিকাশ ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা দরকার।
[3] সামাজিক বিষয় : সমাজের সমৃদ্ধির জন্য চাই অভিনব সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও গবেষণার সৃষ্টি। আর এই অভিনবত্বের জন্য চাই উন্নত মানের শিক্ষা। একমাত্র শিক্ষাই পারে সমাজের সবদিকের সমৃদ্ধিদান করতে। শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হল সমাজের ঐতিহ্য, মূল্যবােধ, বিশ্বাস, রীতিনীতি, সংস্কার ইত্যাদি, বিশেষ করে যেগুলি সমাজের কাছে প্রয়ােজনীয়, সেগুলির সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং ভাবী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চালন করা। পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে সমাজের এই উপাদানগুলির ওপর নজরদান করা বিশেষ প্রয়ােজন।
[4] অর্থনৈতিক বিষয় : পাঠক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অর্থের সংস্থান। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠক্রম অনুযায়ী শিক্ষার বিকাশ অব্যাহত রাখতে গেলে অর্থের প্রয়ােজন হয়। সরকার, কমিউনিটি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই অর্থ জোগাড় করে। বেসরকারি ক্ষেত্রে অভিভাবক-অভিভাবিকারা অর্থ সরবরাহ করেন। মােটকথা, অর্থসংস্থানের দিক বিবেচনা করে, তবেই পাঠক্রমে বিভিন্ন ধরনের শিখন অভিজ্ঞতার সংযােজন ঘটানাে হয়। পাঠক্রম প্রণয়নকারীরা বিভিন্ন ধরনের ব্যয় সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে পাঠক্রম প্রণয়ন করেন। সাধারণত প্রাথমিক ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়, এবং পরিপূরক ও ব্যক্তিগত ব্যয়-এর বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়।
[5] পরিবেশগত বিষয় : পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ দিক হল পরিবেশ। পরিবেশকে সুস্থ, স্বাভাবিক ও দূষণমুক্ত রাখা খুবই প্রয়ােজনীয় বিষয়। পাঠক্রমের অন্যতম দায়িত্ব হল পরিবেশকে মানবকল্যাণের কাজে লাগানাের জন্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। প্রকৃতিবিজ্ঞান, ভূগােল প্রভৃতির জ্ঞান ও দক্ষতা পাঠক্রমের এই উদ্দেশ্য পূরণে সহায়তা করে।
[6] প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় : সমাজ তার প্রয়ােজনের তাগিদে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব ঘটিয়েছে। এইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল : ক্লাব, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাতপাতাল, মনােবিকাশ কেন্দ্র ইত্যাদি। এইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শিক্ষা প্রসারের কাজে ব্যবহৃত হয় স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি, বিশেষ করে কার্যকারী দিকের প্রতি নজর দেওয়ার দরকার হয়।
[7] শিক্ষক সম্পর্কিত বিষয় : পাঠক্রমে সেইসকল বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যেগুলিকে শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যাখ্যা করার জন্য উপযুক্ত যােগ্যতাসম্পন্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। তা না-হলে পাঠক্রমকে বাস্তবায়িত করা যাবে না। শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন ব্যাহত হবে। তাই পাঠক্রম প্রণয়নকারীরা যখন পাঠক্রম পরিকল্পনা করবেন, তখন শিক্ষা-সংক্রান্ত উপাদানগুলি বিশেষভাবে বিবেচনা করবেন।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।