আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
অথবা, শিক্ষকের দায়িত্ব বা কার্যাবলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

উত্তর :

আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা :

আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার বিকাশসাধন করে তাকে সমাজের উপযােগী করে গড়ে তােলার গুরুদায়িত্ব শিক্ষকের উপর ন্যস্ত হয়েছে। তাই শিক্ষককে বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এখানে কয়েকটি দায়িত্ব বা কাজ সংক্ষেপে আলােচনা করা হল :

[1] ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়তা করা : শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক, বৌদ্ধিক, সামাজিক, জৈবিক, আধ্যাত্মিক প্রভৃতি দিকের সুষ্ঠু বিকাশে সহায়তা করা হল শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই জন্য যথােপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা ও সেই কর্মসূচির বাস্তবায়ন করাও শিক্ষকের দায়িত্ব। 

[2] বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করা : আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল শিক্ষার্থীকে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা। শিক্ষার্থী যাতে আপন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে প্রয়ােজনীয় জ্ঞান আহরণ করতে পারে, তার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণের ব্যবস্থা শিক্ষককেই করতে হয়। 

[3] বিদ্যালয়ে উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করা : বিদ্যালয় হল সমাজের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ। তাই শিক্ষকের কাজ হল বিদ্যালয়ে একটি আদর্শ সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযােগিতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি, বন্ধুপ্রীতি, পরােপকারিতা প্রভৃতি সামাজিক গুণাবলির বিকাশসাধন করা। 

[4] শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষা করা: আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের কাজ শুধুমাত্র পাঠ পরিচালনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বিদ্যালয়ের নানান কাজের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা বা অভিভাবক-অভিভাবিকাদের সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষাও করতে হয়। এর জন্য বর্তমানে শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি গঠনেরও ব্যবস্থা করা হয়। 

[5] শিক্ষার্থীদের বৃত্তি নির্বাচনে সহায়তাদান করা : জীবনধারণের প্রয়ােজনে বড়াে হয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই কোনাে-না-কোনাে বৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হতে হয়। বিদ্যালয় স্তরে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা, যােগ্যতা প্রবণতা প্রভৃতি দিকগুলি বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি নির্বাচনে সহায়তা করেন এবং প্রয়ােজনমতাে নির্দেশনা দান করেন। 

[6] পাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনা করা : আধুনিক শিক্ষায় পাঠক্রম প্রণয়নকারীরা শিক্ষার্থীদের শ্রেণি, বয়স ইত্যাদি অনুযায়ী পাঠক্রম নির্ধারণ করেন। পাঠক্রম অনুযায়ী পুস্তক রচনা করা হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা পাঠক্রম অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে সহায়তা করেন। পাঠক্রমের জটিল বিষয়গুলিকে শিক্ষা সহায়ক বিভিন্ন উপকরণের সাহায্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে সহজ করে তুলে ধরেন।

[7] সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনায় সহায়তা করা : বিদ্যালয় স্তরে শিক্ষকরা শুধুমাত্র পাঠক্রমিক কার্যাবলির পরিচালনার মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিও পরিচালনা করেন। খেলাধুলাে, গানবাজনা, ভ্রমণ, বৃক্ষরােপণ, প্রদর্শনী, বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ব্রতচারী, এন সি সি, সমাজসেবামূলক কাজ প্রভৃতি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। 

[8] পাঠক্রম প্রণয়নে সহায়তা করা : আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ হল পাঠক্রম প্রণয়ন করা। কিছুসংখ্যক শিক্ষক অত্যন্ত দায়িত্ব সহকারে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযােগী পাঠক্রম প্রণয়ন করে থাকেন। কিছুসংখ্যক শিক্ষক আবার পাঠক্রম অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তকও রচনা করে থাকেন। 

[9] অন্যান্য সামাজিক সংস্থার সঙ্গে সংযােগসাধন করা : বিদ্যালয়ে পাঠক্রম অনুযায়ী পাঠ পরিচালনা করা, শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা বা অভিভাবক-অভিভাবিকাদের সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষা করা ছাড়াও শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের প্রয়ােজনে, শিক্ষার্থীদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের কাজটিও সম্পাদন করেন। 

[10] শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সহায়তা করা : আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকের অন্য একটি কাজ হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন কুসংস্কার ও মানসিক দুর্বলতা দূর করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি জাগিয়ে তােলা।

[11] আন্তর্জাতিকতাবােধের বিকাশে সহায়তা করা : বর্তমান যুগ বিশ্বায়নের যুগ। প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে বিশ্বমানবতাবােধ এবং বিশ্বভ্রাতৃত্ববােধ গড়ে তােলা দরকার। শিক্ষকরাই এই কাজে অগ্রণীর ভূমিকা পালন করেন।

[12] তাৎক্ষণিক মূল্যায়নে সহায়তা করা : শিক্ষার্থী কোনাে বিষয়ে কতটা পারদর্শিতা লাভ করেছে, তার অগ্রগতি ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা মূল্যায়ন করেন শিক্ষকরা। এই মূল্যায়ন যত তাড়াতাড়ি হয়, শিক্ষার্থীর বিকাশ প্রক্রিয়াও তত দ্রুত সম্পাদিত হয়। আধুনিক শিক্ষায় নিরবচ্ছিন্ন সার্বিক মূল্যায়ন প্রথা চালু হয়েছে। শিক্ষকরা সেই কাজটি গুরুত্ব সহকারে পালন করছেন।

উপরের আলােচনার ভিত্তিতে বলা যায় আধুনিক শিক্ষক কেবল শিক্ষাদাতা নন, তিনি শিক্ষার্থীর সহকর্মী, মন্ত্রণাদাতা, হিতৈষীবন্ধু, তার জীবনদর্শন গঠনে মূল সহায়ক এবং তার কর্মপ্রচেষ্টার অভিজ্ঞ পথপ্রদর্শক।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment